Naya Diganta

মহামারী, যুদ্ধ ও খাদ্যসঙ্কট

মূলত, করোনার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিকে রীতিমতো বিপর্যস্ত ও অস্থির করে তুলেছে। একই সাথে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। লাগামহীন মূল্যস্ফীতি বৈশ্বিক জীবনযাত্রাকে ইতোধ্যেই অশান্ত করে তুলেছে। সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটও বিশ্ববাসীকে রীতিমতো তাড়া করে ফিরছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ডলার সঙ্কট, তেল উত্তোলন ও বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনেও পড়েছে ভাটার টান। ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর দেশগুলোতে খাদ্য ঘাটতি বড় সঙ্কটের আকার নেবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), যা রীতিমতো উদ্বেগের।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে থাকা এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত সংস্থাটির ‘ক্রপ প্রসপেক্টস অ্যান্ড ফ্রড সিচুয়েশন’ শীর্ষক প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৫টি দেশে ঘাটতিজনিত মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশ আছে ৯টি, বাংলাদেশসহ যার তিনটিই দক্ষিণ এশিয়ার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের পর গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের এক সংলাপে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিস ম্যালপাসও খাদ্য, জ্বালানি তেলসহ বিশ্বে মহামন্দার বিষয়ে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন।

বৈশ্বিক এই মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের ৩৫ কোটি মানুষ খাদ্যসঙ্কটে পড়বে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছে এই সংস্থাটি। বিশ্বে ৪৮টি দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ এখন চরম খাদ্যসঙ্কটে রয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আগামী বছরে বিশ্বে মহামন্দা দেখা দিতে পারে। ফলে জ্বালানির চড়া দাম ও লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। এবারের মন্দা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ হবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংক প্রধান।

বস্তুত, জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। জ্বালানি সঙ্কট ও আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারের অস্থিরতায় ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে সার ও কৃষিপণ্যের সরবরাহব্যবস্থায়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ নানা প্রভাবক এ সঙ্কটকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো মারাত্মক করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী দিনগুলোয় খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কায় নীতিনির্ধারকরাও এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এ মুহূর্তে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে খাদ্য থাকলেও বাজারব্যবস্থায় সরবরাহে চরম দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণে খাদ্যসঙ্কট প্রকট হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পথ খুঁজতে হবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো আইয়েলার সম্প্রতি বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যসঙ্কট বিশ্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ফলে আশঙ্কাটাও ঘনীভূত হচ্ছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খাদ্য খাতে ১৫৩টি দেশের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির ফলে ধনী দেশগুলোতেও খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর এফএওর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের আর সব মহাদেশ বা অঞ্চলেই এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবেশি হারে কমবে। ফলে বৈশি^ক খাদ্যসঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

জ্বালানি সঙ্কট এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন খাতে আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামও এখন বাড়তির দিকে। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিষয়গুলো এরই মধ্যে দেশে দেশে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

অর্থনৈতিক এ সঙ্কটকেই বাংলাদেশে সম্ভাব্য মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার প্রথম অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এফএও। সংস্থাটি বলছে, করোনার অভিঘাতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। সে সময় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যে যে প্রভাব তৈরি হয়েছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তা আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারেও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে মূল্য পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে খাদ্যের প্রাপ্যতা ও প্রবেশাধিকার-সংক্রান্ত আগেকার যাবতীয় পূর্বাভাসের চেয়েও পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি খারাপ। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতি পূরণে আমদানিনির্ভর দেশগুলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে। এসব দেশে এক দিকে যেমন খাদ্যমূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্য দিকে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নও হচ্ছে ব্যাপক হারে।

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) ২০০৯-১৯ পর্যন্ত ১০ বছর সময় নিয়ে দেশের সব জেলার খাদ্যনিরাপত্তার চিত্র বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণায় পাওয়া ফল সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আইপিসি ক্রনিক ফুড ইনসিকিউরিটি রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে বছরে দুই চার মাস দিনে গড়ে একবেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে তৃতীয় স্তরে বা মধ্যমমাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বছরে চার মাস বা তার বেশি সময় দিনে একবেলা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবকে বর্ণনা করা হয়েছে চতুর্থ স্তরের বা গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা হিসেবে। আইপিসির হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। এফএওর প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ হার আরো বেড়ে মারাত্মক আকার ধারণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটও (আইএফপিআরআই) মনে করছে, করোনার অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। সংস্থাটির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ ভারসাম্যহীনতায় আরো প্রভাব ফেলেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ ও তাদের উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের হারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা নষ্টের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ খানাগুলোয় খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের অব্যাহত দর বৃদ্ধি ও সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাতের প্রভাব দেশে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারে খাদ্যোৎপাদন বাড়েনি। বিবিএস ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে সোয়া পাঁচ শতাংশের বেশি যদিও এ সময় খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশেরও কম। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রধান দুই খাদ্যশস্য চাল ও গম উৎপাদন হয়েছিল তিন কোটি ৭৩ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টনে।

জনসংখ্যা তথা চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে, উৎপাদন সেভাবে না বাড়ায় দেশে খাদ্যশস্যের আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে যদিও বিশ্ববাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে এখন চাহিদামাফিক আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরেও দেশে ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টন চাল ও গম আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়তির দিকে থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার টনে।

দেশে খাদ্য ঘাটতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাবও। দীর্ঘায়িত খরায় ব্যাহত হয়েছে আমন মৌসুমের উৎপাদন। এর আগে গত মে মাসে সিলেট অঞ্চলের বন্যায় বোরো ধানসহ ব্যাপক ফসলহানির শিকার হয়েছেন কৃষক। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, ওই সময়ের বন্যায় অন্তত ৭২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাণ ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি অবকাঠামোও ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর উপস্থিতিকেও দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু অবস্থান করছে বাংলাদেশে। এতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের উপস্থিতিকে কক্সবাজারের খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকা চাপে পড়ার প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এফএও মনে করছে, এবার তা গোটা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যনিরাপত্তা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সঙ্কট থেকে উত্তরণে এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি খাত, উৎপাদক এবং ভোক্তাদের সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্বের কিছু অংশে সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ছে। মূলত, সরবরাহ শৃঙ্খলায় বিঘ্ন হওয়ায় খাদ্যের দামও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ সংশ্লিষ্ট সব খাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

আমাদের আগামী দিনগুলো যে মোটেই স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে না তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার বক্তব্যে ‘দুর্ভিক্ষের হাতছানি’র কথাটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই কৃষি উপকরণের স্বাভাবিক সরবরাহও নিশ্চিত হওয়া দরকার। চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গ। আর এ সমস্যার ন্যায়ত যৌক্তিক সমাধান করতে না পারলে আমাদের কোনো অর্জনই ফলপ্রসূ ও স্বস্তিদায়ক হবে না।

এক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যেখানে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন সেখানে আমাদের জাতীয় অনৈক্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ফিরে আসা দরকার। গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ছাড়া সম্ভাব্য সঙ্কট মোকাবেলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যত দ্রুত উপলব্ধি করবে ততই দেশ ও জাতির কল্যাণ।

smmjoy@gmail.com