Naya Diganta

সংস্কৃতিবান মানুষের বৈশিষ্ট্য

সংস্কৃতিবান মানুষের বৈশিষ্ট্য

কারা সংস্কৃতিবান মানুষ! কী কী বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হলে একজন মানুষকে বলা যায়- তিনি সংস্কৃতিবান। কোন কোন গুণের সৌরভে মুখরিত মানুষ সংস্কৃতিবান। কেমন স্বভাব হয় এমন মানুষদের। গড়পড়তা মানুষের চেয়ে এরা কতটা আলাদা! আলাদা! তবে কেমন আচরণের উপস্থিতি একজন মানুষকে আলাদা করে তোলে। সেসব গুণ অর্জন করতে হয়? নাকি জন্ম থেকে থাকে! অর্জন করতে হলে কিভাবে করতে হয়! আগেই কথাটি বুঝে নিতে হবে- এসব গুণ অর্জন করে নিতে হয়। জন্ম থেকে জ্বলছিল কোনো বিষয় এখানে নেই! এসব মানুষ সবার মধ্যে থেকেও আলাদা। সবার মতো চলেও অন্য রকম। এ অন্য রকমটিই সংস্কৃতির সৌন্দর্য!
খুব ছোট করে জানা যাক- সংস্কৃতি কী?

সংস্কৃতি হলো- বিশ্বাস! বোধ! রুচি! দৃষ্টি ও এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশভঙ্গি। এক কথায়- সংস্কৃতি হলো মানুষের জীবনের সামগ্রিক আচরণ প্রকাশের ভঙ্গি! একজন মানুষ তার সব কিছু নিয়ে যা তা-ই তার সংস্কৃতি! অর্থাৎ সে যেমন করে চলে, যেমন করে বলে এবং যেমন করে প্রকাশ করে নিজেকে তা-ই তার সংস্কৃতি! উদাহরণ দিয়ে সহজ করা যাক- যেমন একজন মানুষ কী পোশাক পরেন! কিভাবে পরেন! কী খান, কিভাবে খান। কী বলেন কিভাবে বলেন। কী করেন, কিভাবে করেন! ঘুম ছেড়ে জেগে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ের সাথে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতি!

এই যেসব বিষয় বা সামগ্রিক আচরণ এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আচরণের প্রকাশ কেমন হবে। কেমন করে আচরণ প্রকাশ হলে সেটি সংস্কৃতির সৌন্দর্যে পড়বে- এটি বোঝাও জরুরি! তা হলে সেই জরুরি দিকগুলোর মৌলিক ক’টি বৈশিষ্ট্যের সাথে পরিচয় হোক আমাদের। যেসব বৈশিষ্ট্য কারো ব্যক্তিত্বে যোগ হলে তাকে বলা যায় তিনি একজন সংস্কৃতিবান মানুষ!

পরিশীলিত প্রকাশ
একজন সংস্কৃতিবান মানুষের সব প্রকাশই হবে পরিশীলিত। জীবনের কথা কাজ ও সমর্থনের সব কিছু এর আওতায়। অবয়বে আয়োজনে ও কর্মে হবেন পরিশীলিত। জীবনের সব কাজের প্রকাশ হবে পরিশীলিত। প্রশ্ন হতে পারে- পরিশীলিত জিনিসটি কী? তাই তো! আমরা কথায় কথায় বলি- এই লোকটি পরিশীলিত। ওই লোকটি পরিশীলিত নয়! বা অপরিশীলিত! কেন এমন কথা বলি! বলি, কারণ একজনের কাজ গোছগাছ করা। শিল্প সুষমায় উন্নীত। দেখেশুনে আরামবোধ করা যায়। আরেকজনেরটি এলোমেলো। দায়সারা। অসুন্দর। এমন কাজকে কেউ পরিশীলিত বলে না। বলবে না। ঠিক এখানেই পরিশীলিত শব্দের অর্থ প্রকাশ হয়ে পড়ে- যে কাজটি যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন হওয়ার নামই পরিশীলন! যথাযথ হওয়াই পরিশীলিত। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ প্রতিটি বিষয়ে নিজেকে পরিশীলিত উপায়ে উপস্থাপন করেন। হোক কথা। হোক কাজ। হোক আচরণ। হোক ভাষাগত প্রকাশ- সবটুকু পরিশীলিত রূপের অংশ।

উত্তম ব্যবহার
সংস্কৃতিবান মানুষের অনন্য সৌন্দর্য- উত্তম ব্যবহার। মানুষের জীবনে এটি তুলনাহীন গুণ। ব্যবহারে যিনি উত্তম তিনি মানুষ হিসেবেও উত্তম। ঘুরিয়ে বলি- উত্তম মানুষই উত্তম ব্যবহার করেন। এমন উত্তম মানুষই সংস্কৃতিবান মানুষ। ব্যবহারে উত্তম নন তো তিনি সংস্কৃতিবান নন। হতে পারেন না। এটি অসম্ভব! কেননা সংস্কৃতি মানুষকে সর্বোত্তম ব্যবহার উপহার দেয়। এ ব্যবহার অন্য মানুষের সাথে তো বটেই। নিজের সাথেও। নিজের সাথে নিজের ব্যবহারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কিঞ্চিৎ বিস্মিত হচ্ছেন- নিজের সাথে নিজের ব্যবহার আবার কী! বিস্মিত হলেও সত্যি হচ্ছে- নিজের সাথে যিনি উত্তম ব্যবহার করতে শেখেন না; তিনি অন্যের সাথেও উত্তম হতে পারেন না। আরো সাদা করে যদি বলি- মানুষ যখন একা থাকেন। যখন একা কাজ করেন। তখন তিনি কাজটি যথার্থ করেন কী! করেন তো কেমন করে করেন! কেউ দেখছে না বলে কাজটি যেনতেন! নাকি মানুষের সামনে ফিটফাট! মানুষ নেই তো খোলা হাট! এই বিবেচনা কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ! উত্তম ব্যবহার মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় পুঁজি! উত্তম ব্যবহারের মতো উত্তম কিছু মানুষের নেই।

শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষা
সংস্কৃতিবান মানুষ ভাষার শুদ্ধতার প্রতি সচেতন! তিনি সুন্দর ভাষায় কথা বলেন। শুদ্ধ ভাষায় বলেন। ভাষার শুদ্ধতা তার সহজাত। এর মানে এই নয়- কেউ তার আঞ্চলিক ভাষা জিহ্বায় তুলবেন না। নিশ্চয় তুলবেন; কিন্তু সেটি হবে নেহায়েতই প্রয়োজনে। কিন্তু ভাষার জাতীয় রূপটি হৃদয়গ্রাহী করে বলার যোগ্যতা তার থাকতেই হবে। তিনি বলবেন, তো গুছিয়ে বলবেন। স্বচ্ছ করে বলবেন। বলবেন পরিষ্কার করে। বলায় থাকবে স্বতঃস্ফ‚র্ততা। দ্বিধাহীন। সন্দেহমুক্ত। সংশয়হীন। কোমল করে। সরল ও সহজ করে। তিনি বলেন; কিন্তু অতিকথন মুক্ত থাকেন। প্রয়োজনীয় কথাই বলেন। অপ্রয়োজনীয় সংলাপ থেকে সরে থাকেন। পরিমিতি বোধ থাকে তার। যা দরকার ঠিক তা-ই প্রকাশ করেন তিনি।

ভদ্রতার সীমানা
একজন সংস্কৃতিবান মানুষ মানেই ভদ্র মানুষ। ভদ্রতার সুন্দর ঘিরে থাকে তাকে। তার প্রতিটি কথা কাজ ও আচরণে ভদ্রতার নান্দনিক সৌন্দর্য জড়ানো। তিনি অভদ্রদের সাথেও ভদ্রতার সীমানা পেরিয়ে যান না। অভদ্রদের থেকে যতেœ নিজেকে সরিয়ে রাখেন। এদের মুখোমুখি হওয়া থেকে বিরত রাখেন নিজেকে। তিনি জানেন অসুন্দর এড়িয়ে চলার কৌশল! জানেন অভব্যদের থেকে দূরে থাকার পদ্ধতি। একজন সংস্কৃতিবান মানুষই ভদ্র মানুষ। ভদ্রতা সংস্কৃতিবানদের আকর্ষণীয় অস্ত্র!

নম্রতার অলঙ্কার
নম্রতা সংস্কৃতিবান মানুষের একটি অতি উত্তম বৈশিষ্ট্য। যিনি যতটা সংস্কৃতিবান তিনি ততটাই নম্র! ততটাই বিগলিত আচরণে। ঔদ্ধত্য তার ব্যাকরণে থাকে না। তিনি কোনোভাবেই গোঁয়ার্তুমি প্রশ্রয় দেন না। নম্রতার অলঙ্কার মানুষকে উন্নত করে। নম্রতা এমন একটি যোগ্যতা যার কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই। এমন একটি গুণ যা মানুষকে করে তোলে অপরাজেয়। নম্রতা জীবনের এমন এক শিক্ষক যা ক্রমাগত মানুষকে উন্নত জীবনের সিঁড়ি দেখিয়ে দেয়। নম্রতা সেই বাহন যা অনবরত জীবনের সুন্দরকে বহন করে। জীবনের সেই বন্ধু নম্রতা যা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। নম্রতার কোনো শত্রু নেই।

কোমল মন
সংস্কৃতিবান মানুষেরা কোমল মনের অধিকারী। তারা দয়ার্দ্র। নরম মনের মানুষ। কোমলতার সৌন্দর্য ঘিরে থাকে তাদের। তারা কঠোর হন না। হতে পারেনও না। কঠোরতা প্রদর্শনও করেন না। কখনো কখনো নিজের অধিকারও ত্যাগ করেন। প্রয়োজনে চুপ হয়ে যান। চুপ থাকেন। চেয়ে চেয়ে দেখেন। ধৈর্য ধরেন। তবুও কঠোরতার অসুন্দর চর্চা করেন না। কঠোর মনের মানুষদের থেকে দূরে থাকেন। কঠোর আচরণের মানুষকে স্রেফ অমানুষ বলেই জানে সবাই। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ কখনো কঠোর হতে পারেন না। কোমলতা এমনই অলঙ্কার যা মানুষের চরিত্রকে আকর্ষণীয় করে। কোমলতার আঁচে গলে যায় কাঠিন্যের পাথর।
নিরহঙ্কার

সংস্কৃতিবান মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য- তিনি নিরহঙ্কারী! তিনি উন্নত রুচির মানুষ। অহঙ্কারী ব্যক্তি রুচিহীন। অবাক হলেও সত্যি এটিই- অহঙ্কার মানেই রুচিহীনতা। রুচিশীল মানুষ অহঙ্কারী হতে পারেন না। অহঙ্কার রুচির সাথে যায় না। একইভাবে সংস্কৃতিবান মানুষও অহঙ্কারী নন। লোকেরা তাকে জানে তিনি মাটির মানুষ। তিনি চমৎকার মানবিক মানুষ। তিনি সারল্যের সুন্দরে উজ্জীবিত মানুষ।

অহঙ্কারমুক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ! প্রকৃত মানুষ হতে হলেও অহঙ্কার মুক্ত হওয়া জরুরি। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ অবশ্যই নিরহঙ্কারী। সংস্কৃতির পাশে অহঙ্কার বড় বেমানান। একদমই অসঙ্গত। অহঙ্কারী লোক সত্য নির্বাচনে ব্যর্থ! জেনেও অসত্যকে আঁকড়ে থাকার ঔদ্ধত্য থাকে তার। সংস্কৃতিবান মানুষ অসত্য চর্চা করতে পারেন না। অসত্যই অসুন্দর! অসুন্দর সংস্কৃতির শত্রু!

বিদ্বেষমুক্ত মন
সংস্কৃতিবান মানুষ হন বিদ্বেষমুক্ত। বিদ্বেষ মানুষের ভেতর জগৎ ক্ষত-বিক্ষত করে। বিদ্বেষপূর্ণ মুখ অসংস্কৃত। বিদ্বেষী মন সত্য ও সুস্থ চিন্তার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরিশীলিত কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। উন্নত কাজ করার মানসিকতাও থাকে না তার। বিদ্বেষী মন সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর! জীবনের পক্ষেও বড়ই ক্ষতিকর। বিদ্বেষ থেকেই মানুষের জন্য মানুষ হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর! বিদ্বেষ মানুষকে পাশবিক হতে প্ররোচনা দেয়। বিদ্বেষ থেকেই বঞ্চিত করে মানুষ মানুষকে। নষ্ট করে অন্যের হক। নষ্ট করে অন্যের অধিকার। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ এসব থেকে দূরে থাকেন।

পরশ্রীকাতরতামুক্ত
সংস্কৃতিবান মানুষ পরশ্রীকাতর হন না। হতে পারেন না এবং হওয়া শোভনীয়ও নয়। অন্যের সুখে কাতর হন না তিনি। অন্যের সুখ দেখে কষ্ট পান না; বরং অন্যের সুখে সুখী হয়ে ওঠেন। অন্যের সাফল্য তাকে আনন্দিত করে। অন্যের ভালো তার ভালোলাগা হয়ে ওঠে। কারো উন্নতি ঘটলে তিনি খুশি হন। অন্যের ভালোয় কাজের প্রশংসা করেন আন্তরিকতায়। অন্যের যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে ক্ষীণ কণ্ঠ হন না মোটেই। সবার সুখে তিনি সুখী। সবার দুঃখেও তিনি দুঃখী। সবার সাফল্য তিনি উদযাপন করেন খোশমেজাজে।
হীনম্মন্যতায় ভোগেন না

একজন সংস্কৃতিবান মানুষ হীনম্মন্যতার ঊর্র্ধ্বে থাকেন। কাউকে বড় হতে দেখলে তিনি উৎসাহিত করেন। সম্মান জানান। তিনি আপন আনন্দে পথ চলেন। কাজ করেন আপন সুখে। সম্পর্ক গড়েন সৌন্দর্য চেতনায় এবং সম্পর্ক রক্ষা করেন স্বার্থহীনভাবে। হীনতা নীচতায় নামেন না তিনি। বড়কে বড় করে দেখার মন থাকে তার। সত্যকে সত্য বলার সাহস থাকে তার। সত্যের আনন্দে টান টান থাকে তার বুক। নিজের ক্ষতি স্বীকার করার মানসতা তাকে অসাধারণ করে তোলে। তিনি গুণীদের গুণ স্বীকারে ইতস্তত নন।

সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে
সংস্কৃতিবান মানুষ সঙ্কীর্ণ হবেনই না। সঙ্কীর্ণতায় বসত করে না সংস্কৃতির সৌন্দর্য। যিনি সংস্কৃতিবান তিনি মুক্ত হওয়ায় শ্বাস নেন। উদারতার সৌন্দর্যে তিনি উজ্জ্বল! মন খোলা ঔদার্যে তিনি প্রোজ্জ্বল। উদারতা তার সহজাত। সঙ্কীর্ণতায় তিনি কাজ করেন না। সঙ্কীর্ণতা থেকে ভাবেনও না। তিনি আকাশ রাখেন বুকের কাছে। জগতের বিশালত্ব তার অস্তিত্বে খেলা করে। তিনি জানেন সঙ্কীর্ণতার পঙ্কিলতা মানুষকে অপমানের গহ্বরে নিক্ষেপ করে।

পরিচ্ছন্ন দৃষ্টির মানুষ
সংস্কৃতিবান মানুষ পরিচ্ছন্ন দৃষ্টির মানুষ। স্বচ্ছ দৃষ্টির মানুষ। সত্য ও সুন্দর দৃষ্টির মানুষ। তিনি খোলামেলা। তিনি ভেতর দেখিয়ে দিতে পারেন। জটিলতা মুক্ত থাকেন তিনি। বাঁকা দৃষ্টি থেকে দূরে থাকেন। উল্টানো দৃষ্টি তার নয়। তার দেখা সোজাসাপ্টা। যা দেখেন পরিচ্ছন্নতার সাথে দেখেন। যা ভাবেন স্বচ্ছতার সাথে ভাবেন। যা অনুভব করেন পরিচ্ছন্নভাবে করেন। তার অনুভ‚তি স্বচ্ছ। বোধ স্বচ্ছ। বিশ্বাসের দৃষ্টিও স্বচ্ছতায় জাগ্রত। কথা ও কাজে পরিচ্ছন্ন একদম।

দায়িত্বের প্রতি স্পর্শকাতর
সংস্কৃতিবান মানুষ দায়িত্বের প্রতি স্পর্শকাতর। তিনি দায়িত্ব সহজে গ্রহণ করেন না। গ্রহণ করলে অনীহা পোষণ করেন না। এড়িয়ে চলেন না দায়িত্বের ভার। এমনকি ক্ষতির হলেও তিনি দায়িত্ব অস্বীকার করেন না। দায়িত্ব পালন করেন যথার্থ। পালন করেন উত্তম পন্থায়।
তিনি দায়িত্ব চেয়ে নেন না। চেয়ারের প্রতি লোভ থাকে না তার; বরং চেয়ারের লোভ থাকে তার প্রতি। চেয়ার তাকে উঁচু করে না। তিনিই চেয়ারকে উঁচু করেন। দায়িত্বকেও ভয় করেন। তবে দায়িত্ব এসে গেলে সর্ব সুন্দর করে পালন করেন দায়িত্বের দায়।

সম্মান দেখান অন্যকে
মানুষের সম্মান রক্ষা করেন একজন সংস্কৃতিবান মানুষ। অন্যকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। সম্মান রক্ষা করে মতামত দেন। সম্মানের সাথে মতবিনিময় করেন। অন্যের কাজের প্রতিও সম্মান দেখান। সম্মান দেখাতে কৃপণ নন তিনি। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে অন্যের সাফল্য বিবেচনা করেন। অন্যের সাফল্যের স্বীকৃতি দেন। অন্যের যোগ্যতার স্বীকৃতি দেন। ছোট-বড় সবার প্রতি সম্মানের দৃষ্টি পোষণ করেন। ভালো কাজের প্রশংসা করেন। অবশ্য তিনি নিজেকেও সম্মান দেখান। নিজেকে অপমান থেকে সরিয়ে রাখেন। যে নিজেকে সম্মান দিতে জানে না। সে অন্যকে কী করে সম্মান দেবে!

প্রতিশোধ গ্রহণে বিরত থাকেন
সংস্কৃতিবান মানুষ কারো প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেন না। চিন্তাও করেন না। এমন ভাবনাকে প্রশ্রয় দেন না; বরং তিনি ক্ষমার পথ বেছে নেন। তিনি জানেন- কারো প্রতি প্রতিশোধ নিতে হলে দুটো কবর খোদাই করতে হয়- একটি তার নিজের জন্য! ক্ষমা ভীষণ সুন্দর। ক্ষমা করে দেয়ার আনন্দ অন্যরকম। তাই তিনি ক্ষমা করেন। আর না হয় উপেক্ষা করেন। উপেক্ষাও একটি উন্নত কৌশল। তিনি জানেন কিভাবে অসুন্দর উপেক্ষা করতে হয়। তিনি জানেন মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিশোধের আগুন যার মনে জ্বলে তার শান্তি পুড়ে ছাই হতে থাকে। ক্রমাগত হিংস্র হয়ে ওঠে তার ভেতর জগৎ! প্রতিশোধ তৃষ্ণায় কাতর হতে থাকে সে। প্রতিশোধের তীব্রতায় মানুষ উন্মাদ হয়ে ওঠে। সুতরাং সংস্কৃতিবান কোনো মানুষ তার ভেতর জ্বালাতে পারেন না প্রতিশোধের বারুদ!

সমালোচনা এড়িয়ে চলেন
অন্যের সমালোচনা থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকেন তিনি। সমালোচনা একটি সামাজিক ব্যাধি। একটি সামাজিক মহামারী। যিনি সমালোচনায় মুখর তার ব্যক্তিত্ব থাকে না। তার দিকে কারো সম্মানের দৃষ্টি থাকে না। তাকে ভালোবাসে না কেউ। বিশ্বাসও করে না। আস্থায় রাখে না। এমনকি তার সাথে সম্পর্কও গড়তে চায় না কেউ।

তিনি প্রাণখোলা মানুষ
সংস্কৃতিবান মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তিনি প্রাণখোলা মানুষ। মন খুলে মেশেন সবার সাথে। কারো সাথে দেয়াল রাখেন না তিনি। ছোট-বড় সবার কাছে তিনি প্রাণখোলা। তার ভেতর-বাহির একই আয়নায় স্বচ্ছ। মানুষকে আপন করার আনন্দে থাকেন তিনি। বড়লোক ছোটলোক তার কাছে বিবেচনার নয়। ক্ষমতা অক্ষমতার বিবেচনাও নয়; বরং মানবিক সৌন্দর্যই তার বিবেচনার বিষয়। তিনি কারো সাথে দেয়াল রাখেন না। প্রয়োজনে দূরে রাখেন। তিনি তুচ্ছ বিষয়টিও সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখেন। সবার সাথে মেশেন; কিন্তু নিজেকে গুলিয়ে দেন না। তিনি আজ এবং আগামীকাল নিয়ে ভাবেন। গতকাল শুধু শিক্ষার হয়ে থাকে তার কাছে। কে তাকে গ্রহণ করল কে করল না এ নিয়ে ভাবনা নেই তার। তিনি জানেন তাকে চলতে হবে। তিনি চলতে থাকেন পৃথিবীর উঠোনে।

হাস্যোজ্জ্বল মুখ
সংস্কৃতিবান মানুষ হাস্যোজ্জ্বল! গোমড়া মুখো থাকেন না একদম। তিনি প্রাণবন্ত! তিনি প্রাণসর্বস্ব। তিনি প্রাণোচ্ছল! প্রেরণা জুগিয়ে রাখেন তিনি। দুঃখ লুকিয়ে চলেন। শোক মুছে এগোন। বেদনা ঠেলে ছোটেন। সব পরিবেশে তিনি মানানসই। হেসে উড়িয়ে দেন অসুন্দর! কিন্তু তার হাসি অকারণ নয়। অশোভনও নয়। অসুন্দর তো নয়-ই। তার কথায় থাকবে রসবোধ। শব্দ হবে সুন্দর। বাক্য নান্দনিক! তার সঙ্গ কামনা করে মানুষ। তাকে কাছে টানার প্রতিযোগিতাও থাকে। হাসির মতো ফুল পৃথিবীতে ফোটে না আর। কারো সাথে দেখা হলে মুচকি হাসির রেষ বড় উপাদেয়। মুহূর্তে মানুষের ভেতর জগৎ আলোড়িত হয়। মানুষ ভেবে নেয়- ইনি আমাকে পছন্দ করেন। হাসির এই উজ্জ্বলতা সংস্কৃতিবান মানুষকে প্রিয় করে তোলে। আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে বিপুল। একজন সংস্কৃতিবান মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ মানুষকে জীবনের প্রতি বিশ্বস্ত করে তোলে।

এভাবেই একজন সংস্কৃতিবান মানুষ সব দিক থেকে নিজেকে গুছিয়ে গাছিয়ে শৈল্পিক করে তোলেন। প্রতিটি পদক্ষেপে সুন্দর চর্চা করেন। প্রতিটি আয়োজনে থাকে আলাদা সৌন্দর্য! একজন সংস্কৃতিবান মানুষ পরিবার সুন্দর করে তোলেন। সমাজকেও সুন্দর করেন। দেশকেও সুন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতিবান মানুষ থাকা সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। সংস্কৃতিবান মানুষেরাই প্রধানত উন্নত সভ্যতার জন্য কাজ করেন। তবে প্রতিটি শিক্ষিত জনেরই উচিত সংস্কৃতিবান হয়ে ওঠা এবং সংস্কৃতিবান হয়েই জীবন যাপন করা। কারণ সংস্কৃতিবান মানুষই পরিপূর্ণ মানুষ! একজন বিশ্বাসী মানুষ মানেই সংস্কৃতিবান মানুষ।

লেখক : কবি, শিশু সাহিত্যিক ও মিডিয়াব্যক্তিত্ত্ব