Naya Diganta

সমস্যায় জর্জরিত নান্দাইল রোড রেলস্টেশন

সুনসান নান্দাইল রোড রেলস্টেশন : নয়া দিগন্ত

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত নান্দাইল রোড ও মুশুল্লি রেলস্টেশন দু’টি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। দীর্ঘ দিন ধরে স্টেশন দু’টিতে মারাত্মক জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। কয়েক বছর ধরে মুশুল্লি স্টেশনে ট্রেন থামা একেবারেই বন্ধ রয়েছে। নান্দাইল রোড স্টেশনটি কোনো রকমে চালু থাকলেও দিনেরাতে মাত্র দু’বার ট্রেন থামায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবল বৃদ্ধি ও আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করলে স্টেশন দু’টি আবার আগের মতো সচল হবে। এতে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে, সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
ব্রিটিশ আমল থেকে নান্দাইল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলার মানুষ স্টেশন দু’টি ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত ও মালামাল আনা-নেয়া করত। তখন দু’টি স্টেশনে যাত্রীদের চাপে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হতো। স্টেশন দু’টি লোকে-লোকারণ্য থাকত। বর্তমানে দু’টি স্টেশনের একটি বন্ধ এবং অন্যটিতে যাত্রী সঙ্কটে ভুগছে। নান্দাইলের ওপর দিয়ে যাওয়া রেলপথটি ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব হয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছে। এই রেলপথ দিয়ে আগে ১০টি ট্রেন চলাচল করত। নান্দাইলের দু’টি স্টেশনেই ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করত। পরে দীর্ঘ দিন আটটি ট্রেন চলাচল করলেও বেশ কয়েক বছর আগে যাত্রী সঙ্কট ও জনবল সঙ্কটে কর্তৃপক্ষ এই লাইনে ট্রেনের সংখ্যা আটটি থেকে মাত্র দু’টিতে নামিয়ে আনে। বর্তমানে ময়মনসিংহ থেকে শুধু চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল চলাচল করে। দু’টি ট্রেন চলাচল করলেও নান্দাইল রোড স্টেশনে থামে একটি। মুশুল্লি স্টেশনে কোনো ট্রেনই থামে না। ফলে মুশুল্লি স্টেশন একেবারেই বন্ধ রয়েছে।
নান্দাইল রোড স্টেশনে চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটি (৩৭-আপ) রাত ৩-৪টার দিকে এবং একই ট্রেন (৩৮-ডাউন) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে যাত্রা বিরতি দেয়। সকালে কিছু যাত্রী থাকলেও গভীর রাতে বিরতি দেয়ায় সে সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যায় না।
সরেজমিন নান্দাইল রোড স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টারের রুমের পাশের রুমেই ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়। প্লাটফর্ম ফাঁকা, উপরে নেই কোনো শেড, নেই বসার কোনো স্থান। যে স্টেশনটি একসময় গমগম করত এখন সেটিতে সুমসাম নীরবতা। একা একা বসে দিনের অনেকটা অলস সময় কাটান স্টেশন মাস্টার আবদুল কাদির।
স্থানীয় ইমরান হায়দার জানান, স্টেশনে আগের মতো যাত্রী চোখে পড়ে না। একটি মেইল ট্রেন থামে সকাল ১০টার দিকে আর রাত ৩টার দিকে। ট্রেন না থামায় যাত্রী আসে না। অন্য দিকে স্টেশনে জনবল নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে স্টেশনটি।
নান্দাইল রোড স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবদুল কাদির বলেন, আমি ২০১৫ সালে চাকরি থেকে অবসরে গেছি। এখানে জনবল সঙ্কট থাকায় কর্তৃপক্ষ আমাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক বছর পার হয়ে গেছে। যেহেতু এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তাই সেবার স্বার্থে কোনো রকমভাবে চলছে। তিনি জানান, গত অক্টোবর মাসে এই স্টেশনে ৮৯ হাজার ৬৪০ টাকা আয় হয়েছে। আর এখানে কর্মরত ছয়জন ব্যক্তির বেতনভাতাই ৯০ হাজার টাকা। এ লাইনে আরো নতুন ট্রেন দিলে এবং বর্তমানে চলাচলকারী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটির এখানে যাত্রা বিরতি দিলেই যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে এবং আয়ও বাড়বে।