Naya Diganta

কাগজ সঙ্কটে মেলায় নতুন বই ছাপা নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশনা খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন প্রকাশকরা। কাগজ সঙ্কটের সাথে প্রায় ৮০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং উপকরণসহ প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়তি ব্যয়ের কারণে তাদের মধ্যে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে আগামী বইমেলায় প্রকাশকদের জন্য নতুন বই প্রকাশ যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তেমনি গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাও সঙ্কটে পড়তে পারে।
বই প্রকাশকদের সংগঠন ‘সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য’ এর নেতা ও অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ নয়া দিগন্তকে বলেন, কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের পুরো প্রকাশনা শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। কাগজের দাম বৃদ্ধির বাইরেও ছাপার উপকরণের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সেই সাথে বেড়েছে শ্রমিক খরচ। অন্য দিকে জরুরি প্রকাশনায় উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না ছাপা উপকরণ।
তিনি বলেন, গেল বইমেলায় যে কাগজ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা রিম কেনা ছিল এখন সেটা ৩৫ থেকে ৩৬০০ টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে আমরা নতুন বই প্রকাশ করতে অপারগ হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন এমন অবস্থায় ২০০ টাকা মূল্যমানের একটি বই বর্তমান কাগজ মূল্যে ৪০০ টাকায়ও বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। চলমান পরিস্থিতে যদি এক বছর কোনো নতুন বই প্রকাশ না পায়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী পাঁচ বছরেও কভার করা যাবে না।
জ্ঞান ও সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশক ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকাশনা স্বাধীন একটি পেশা। কারণ এখানে কে কী বই ছাপবে, বই প্রডাকশনে কী খরচ করবে না করবে ছাপা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় প্রকাশকের একান্ত নিজস্ব। তবে যেহেতু সারা পৃথিবীতে সব কিছুই দাম বেড়েছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। এ দেশেও কাগজসহ ছাপার উপকরণ ব্যয় বৃদ্ধির সাথে বাজারে কাগজ সঙ্কট রয়েছে। ফলে প্রকাশকরা সামর্থ্য অনুযায়ী বইমেলায় নতুন প্রডাকশনে যাবে কি না তা ঠিক করবে। এতে হয়তো কেউ নতুন বই ছাপবে আবার কেউ না-ও ছাপতে পারে। কারণ ছাপার ব্যয় নির্ভর করে প্রডাকশনের মান কেমন হবে তার ওপর ভিত্তি করে। এতে করে এবার নতুন বইয়ের দাম অবশ্যই বাড়বে। আবার এখন নতুন বই ছাপলে তার সাথে বিক্রির দামের সমন্বয় করতেও ঝামেলায় পড়তে হবে। কারণ পাঠক যাতে কিনতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ফলে প্রত্যেক প্রকাশক এ বিষয়ে নিজেদের মতো করেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে নতুন বইয়ের দাম বৃদ্ধি যাতে পাঠকের নাগালের মধ্যে থাকে আমাদের সেই চেষ্টা থাকবে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান নয়া দিগন্তকে বলেন, ডলার সঙ্কটে এলসি করতে না পারায় কাগজ সঙ্কটের পাশাপাশি দাম প্রায় ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এবার নতুন বই, ক্যালেন্ডার ছাপলেও দাম অনেক বাড়বে। তিনি বলেন, এমন সঙ্কট অব্যাহত থাকলে স্কুল শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ কার্যক্রম সঙ্কটে পড়বে। সেই সাথে পরীক্ষায় খাতা সঙ্কটও দেখা দেবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে খাতা নিয়ে আসতে হবে। গোটা শিক্ষা খাত ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে।
এর আগে করোনা সঙ্কটে প্রকাশনা শিল্পে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়। এতে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন বই প্রকাশক ও ব্যবসায়ীরা। সে সঙ্কট না কাটতেই কাগজের বাজারে অস্থিরতায় ফের সঙ্কটে পড়ল সৃজনশীল এ খাত।