Naya Diganta
দুর্নীতি তীব্র করছে সম্পদ বৈষম্য

রাষ্ট্রীয় সিস্টেম অকেজো

দুর্নীতি তীব্র করছে সম্পদ বৈষম্য

গত ১০ বছরে একটি ধনিক শ্রেণীর উল্লøম্ফন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্সের ২০১৯ সালে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে এর সত্যতা মিলে। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তহবিল তছরুপের ঘটনা ঘটছে। গুটিকয় ব্যক্তি বিপুল সম্পদের মালিকানা হওয়ার সাথে এ লুটপাট ও দুর্নীতি সম্পর্কের বিষয়টি প্রায় সবাই স্বীকার করেন। জনগণের সম্পদ রক্ষায় নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এই ব্যর্থতার পরও সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বলা যায়, অন্যায়কারীরা এক ধরনের আনুকূল্য পেয়েছেন।
ওয়েলথ এক্সের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, পৃথিবীর সব ধনী ও বড় অর্থনীতির দেশকে পেছনে ফেলে অতি ধনী বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম স্থান দখল করেছে। এর পরে প্রকাশিত একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। দুটো জরিপ বিগত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তৈরি করা। এ সময় বাংলাদেশে মূলত বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে দেখা গেছে। রাস্তা-ঘাট, সেতু, উড়াল সড়ক, সুড়ঙ্গ পথসহ মূলত বৃহৎ যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের তছরুপের ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। এগুলো শিল্পায়নের মতো সরাসরি উৎপাদনমুখী কিছু নয়। বরং এর নেতিবাচক দিক রয়েছে। উচ্চ সুদহারে বিদেশী সংস্থা বা দেশ থেকে নেয়া এসব ঋণ পরিশোধের কিস্তি সামনে বাড়বে। আগামীতে এর দায় বড় আকারে দেখা দেয়ার লক্ষণ প্রকাশ যাচ্ছে।
অন্য দিকে, এ ধরনের অর্থায়নকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রকল্পে অর্থায়নে অস্বচ্ছ নীতি গ্রহণের। এ ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও গ্রহীতা পক্ষগুলোর অসততার সহজ সুযোগ থাকে। সেই সুযোগটি গ্রহণ করেছে সরকারের সাথে থাকা একটি গোষ্ঠী। ধনী বেড়ে যাওয়ার জন্য এর সাথে অন্য দু’টি কারণ হচ্ছে- দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ও সরকারি বিভাগগুলোতে বড় দুর্নীতি। এ সরকারের মেয়াদের শেষের দিকে এসে দেখা যাচ্ছে ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ সরিয়ে নেয়ার বড় খবর প্রকাশ হচ্ছে। নভেম্বরে দেশের তিনটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। এভাবে অর্থ নয়ছয় করে দেশে মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছেন। এ অর্থ দেশে থাকলে রাষ্ট্রের ক্ষতি কম হতো। কিন্তু অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ ইতোমধ্যে বিদেশে চলে গেছে।
তবে বাংলাদেশে আয় ও সম্পদ বৈষম্যের খবরটি পুরনো। ২০২১ সালে দেশে আয় ও সম্পদ বৈষম্য কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানা যায় সম্প্রতি প্রকাশিত প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদনে। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে- দেশের শীর্ষ এক শতাংশ ধনীর আয় জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। সমাজের নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের আয় মাত্র ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। অন্য দিকে, ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণ দেশের মোট সম্পদের ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। সমাজে মানুষের মধ্যে তীব্র বৈষম্যের বিষয়টি এ প্রতিবেদনে স্পষ্ট।
আমাদের চলমান রাষ্ট্র্রীয় ব্যবস্থাপনা বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রকাশ্যে জনগণের সম্পদ লুটপাট করা হলেও তা রুখতে সিস্টেম অকেজো করে রাখা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন পর্যন্ত বর্তমান সময়ের স্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের একজনের বিরুদ্ধেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপের অভিযোগে কারো শাস্তি দূরে থাক, এখন পর্যন্ত কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এভাবে সরকারের ভেতরে আরো কয়েক ডজন কর্তৃপক্ষ রয়েছে কেউ এসবের তদন্ত ও বিচার নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে- এ ধরনের ব্যবস্থা কি অব্যাহত চলতে থাকবে? না সেটি বন্ধে জনসাধারণেরই সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে?