১৫ বছর ধরে মুসলিম শিক্ষক না থাকায় ধর্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শতাধিক শিক্ষার্থী
- ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১৬:১৩
ঝালকাঠির শ্রীমন্তকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫ বছর ধরে নেই কোনো মুসলিম শিক্ষক। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মুসলিম শিক্ষার্থী রয়েছে শতাধিক। ফলে ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বঞ্চিত হচ্ছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষারত মুসলিম পরিবারের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক পদে দীর্ঘ দিন ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দায়িত্ব পালন করছেন। যার কারণে মুসলিম শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সে ব্যাপারে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার শ্রীমন্তকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঝালকাঠির শ্রীমন্তকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষকবিহীন অবস্থায় প্রায় ১৫ বছর ধরে চলছে একাডেমিক পাঠদান। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে হচ্ছে না ইসলাম ধর্ম শিক্ষা ক্লাস। বর্তমানে ১৯৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১০০ জন মুসিলিম শিক্ষার্থী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিন্দু ধর্মাম্বলী হওয়ায় মুসলিম শিক্ষক যোগদান করতে দিচ্ছেন না তিনি। গত ১৪ জুন ২০২২ তারিখ ঝালকাঠি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোন্দকার জসিম আহমেদ এক অফিস আদেশে বিদ্যালয়টিতে কোন মুসলিম শিক্ষক না থাকায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে উল্লেখ করেন। এজন্য তিনি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বংকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খাদিজা খানমকে শ্রীমন্তকাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু খাদিজা খানম অফিস আদেশ পেয়েও যোগদান করেননি।
শ্রীমন্তকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কল্পনা ইন্দু জানান, ‘আমি ২০১০ সালে যোগদান করার পর কোনো মুসলিম শিক্ষক পায়নি। স্কুল পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন মেয়াদে একাধিক পদে মুসলিম সদস্য থাকলেও সভাপতি পদে হিন্দু ধর্মের লোকজনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকছে। উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বার বার যোগাযোগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসেনি। এতে প্রায় ১০০ মুসলিম শিক্ষার্থী ইসলাম ধর্ম শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন শেফালী রানি মিস্ত্রি, চিন্ময়ী রায়, মিতা মিস্ত্রি, প্রভাতি হালদার, শুকতিয়া রানি এবং মঙ্গলবারে যোগদান করেছেন ইলা মণ্ডল। স্কুলে একজন মুসলিম শিক্ষক খুবই জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বিকাশ মণ্ডল জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এ বিষয়ে অনেক যোগাযোগ করা হলেও তারা কেবল আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এসব বিষয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন প্রধান শিক্ষক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোন্দকার জসিম আহমেদ জানান, বংকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাদিজা খানম নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলে তার স্কুলটি মুসলিম শিক্ষক শূন্য হওয়ায় তার অফিস আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর যাবত বদলি আদেশ বন্ধ থাকায় নতুন শিক্ষক দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন অনলাইনে বদলীর ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ইলা মন্ডল নামে এক শিক্ষকের পদায়ন হলে তিনি ওখানে যোগদান করেছেন। তবে কিভাবে ওখানে একজন মুসলিম শিক্ষক দেয়া যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো: জোহর আলী জানান, বিষয়টি নলেজে ছিল না। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।