Naya Diganta
সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সভা

সুশাসন নিশ্চিতের আশাবাদ

সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সভা

আগামী ২৭ নভেম্বর রোববার সচিবদের সাথে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনীতি সুসংহত রাখতে করণীয় নির্ধারণে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক দুর্বল অবস্থা কাটাতে সরকারের কী কী করণীয় তা নিয়ে সচিবদের সাথে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। কথা বলবেন খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়েও।
এটি ঠিক যে, অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, দেশ যে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছিল তা আর নেই। এখন দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনায়ও হিমশিম খেতে হচ্ছে আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট সবার। ব্যাংক এলসি খুলতে পারছে না। ডলার নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বিপর্যস্ত। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হয়নি। আমদানিও করা যাচ্ছে না ডলারের অভাবে। শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত। নেয়া হয়েছে কঠোর কৃচ্ছ্রতার নীতি। মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়া। জিনিসপত্রের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণের নাভিশ^াস উঠছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছে ঋণের জন্য হাত পাততে হয়েছে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে আইএমএফসহ একাধিক সংস্থা ঋণ দেবে বলেছে। তবে সে ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড় হতে সময় লাগবে। সব মিলিয়ে এক মন্দা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে দেশ।
খবরে সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার যে অ্যাজেন্ডার উল্লেখ করা হয়েছে তাতে অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ই মুখ্য। এটি এ সময়ে খুবই জরুরি। কারণ করোনা মহামারীতে অন্তত দেড় কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে অর্থাৎ নতুন করে গরিব হয়েছে। বর্তমান মন্দাকালেও অনেকে বেকার হচ্ছে, অনেকে সংসার চালাতে পারছে না।
সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সভা এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, মন্দা সামলে উঠতে যা কিছু করণীয় তা প্রশাসনের মাধ্যমেই করতে হয়।
অর্থনীতির সুসংহতির জন্য কী করণীয় তা জানতে সচিব সভা সম্ভবত যথাযথ ফোরাম নয় বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। এটি অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের বিষয়। ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফ সম্প্রতি যেসব শর্ত দিয়েছে তার মূল সুরটি হলো- অর্থনীতিতে সুশাসন থাকতে হবে। থাকতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। আর এসব বাস্তবায়ন করতে হবে সচিব তথা প্রশাসনকে। আইএমএফের শর্তগুলো প্রাথমিক গাইডলাইন হতে পারে। এর সাথে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ জরুরি। কারণ দেশীয় প্রেক্ষাপট আইএমএফের চেয়ে তারা ভালো বুঝবেন।
খবরে বলা হয়, সচিবদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাজেন্ডায় সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০ বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা রক্ষার উপায় সম্পর্কে সচিবদের দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে প্রশাসনের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা-ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন সচিবরা।
খবর থেকে জানা যাচ্ছে, সচিব সভায় নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা করবেন সচিবরা। বিষয়টি অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ভঙ্গুর অর্থনীতিতে দুর্ভোগ হয় সাধারণ মানুষের। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পেরুতে না পারলে বেগতিক হয়ে পড়ে রাজনীতিকদের জীবন। দেশে এখন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। শত বাধার মুখেও প্রধান বিরোধী দলের সভায় যোগ দিতে দলীয় কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের যে মরিয়া প্রয়াস তা থেকে একটিই বার্তা পাওয়া যায়। জনগণ আর অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত নির্বাচন চায় না।
আসলে অর্থনীতি হোক, রাজনীতি হোক সবখানে সুশাসনের বিকল্প নেই। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সুশাসন নিশ্চিত করাই সম্ভবত সরকারের সবচেয়ে বড় কর্তব্য।