Naya Diganta

এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না : মির্জা ফখরুল

বরিশালের গণসমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, ভোট চুরি করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দুর্নীতি করেনি এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে? দিয়েছে, তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের। ২০ লাখ করে টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিন গুণ দেশি দামের সার দিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভোটের আগে বলেছিলেন, ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। তা কি হয়েছে? হয়নি। এটাই আওয়ামী লীগের গলাবাজি। আওয়ামী লীগের নামের সাথে জড়িয়ে আছে চুরি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম।

শেখ হাসিনা এবং এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়।

শনিবার সরকার বিরোধী মিছিল-স্লোগানে দিনভর মুখরিত ছিল পুরো বরিশাল নগরী। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মুখর করে তোলেন পুরো নগরী। প্রতিটি মিছিলের গন্তব্য ছিল বিএনপির গণসমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যান। বেলা ২টার মধ্যে কানায় কানায় ভরে যায় পুরো মাঠ।

বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে মঞ্চে আসেন গণসমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুণ ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য মঞ্চের মাঝখানে দুটি চেয়ার খালি রেখে বরিশালে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু হয়।

বেলা ১১টায় দিকে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। সেইসাথে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ মারা যাওয়া এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত নেতাকর্মীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এর পরপরই স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

এ সময় স্থানীয় বক্তারা বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। আমাদের এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির, জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন তালুকদার মেবুল ও উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল।

গণসমাবেশের প্রধান বক্তা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এসে দেখলাম ইন্টারনেটের ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। সবকিছু নেই নেই এর দেশে আছে শুধু আওয়ামী লীগের গলাবাজি। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়, ইভিএমএর অধীনে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এখানে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, ন্যায়বিচার নেই। বিএনপি সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের দল অথচ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেছে আওয়ামী লীগে এমন নেতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার রাতের ভোটে নির্বাচিত, সরকার বিচার বিভাগ পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছেন। পদত্যাগ করে আসুন, তখন খেলা হবে। দশ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে এই সরকারের নেতাকর্মীরা। দেশের মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না, তেল পাচ্ছে না অথচ ইভিএম কেনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা ফুলে ফেঁপে কলাগাছ হচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে আপনি বাংলাদেশের জনগণকে ব্ল্যাকমেইলিং করছেন। খালেদা জিয়াকে জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, তিনি দেশের জনগণেল জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছেন। সবকিছুর মূলে হচ্ছে ভোট চুরি, এই ভোট চোরদের ধরতে হবে। জীবন দিয়ে হলেও আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।

বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, দেশ যাবে কোন পথে? ফায়সালা হবে রাজপথে। সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সমাবেশের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর (বীর উত্তম) বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির এই আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। জনগণকে রুখে দাঁড়াবার সাধ্য আওয়ামী লীগের নেই।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) বলেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল, জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, আমি তার একজন সহযোদ্ধা ছিলাম। অথচ এখন বলা হচ্ছে তিনি নাকি আইএসআই’র এজেন্ট, এটাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী আওয়ামী লীগের চরিত্র।

ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন বরিশালে অবস্থান করে দেখেছি, বরিশালের মানুষ বিএনপিকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, যারা প্রমাণ তারা দিয়েছেন সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে এই সমাবেবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দেয়ার মধ্য দিয়ে।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বিএনপি নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে বলেন, হামলা-মামলাকে ভয় পাবেন না, আমরা বিনা খরচে আপনাদের মামলা পরিচালনা করবো।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এদেশের জনগণ সরকারের পদলেহী নির্বাচন কমিশনের ইভিএমকে বিশ্বাস করে না, তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চায়, জণগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আজকের এই গণসমাবেশ।

অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, গণসমাবেশকে ভয় পেয়ে সরকার এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, ছাত্রলীগ এখন গরু চোরের দল, ছাত্রলীগের এক নেত্রী গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়েছে।

হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ডিসি-এসপি দিয়ে দিনের ভোট রাতে করা যায়, কিন্তু জনসমুদ্র তৈরি করা যায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন চাল-গমের দামে সেঞ্চুরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে এক সময় করোনাকে দায়ী করেছে সরকার। আবার রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। ডিমের দাম দোকানভেদে ১৫ টাকা আপ-ডাউন করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডিমের দাম বাড়বে কেন? ফার্ম তো আমাদের দেশেই আছে।

গণসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ আলুকদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় পেশাজিবী শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সম্পাদক (দফতর) মুনির হোসেন, সহ-সম্পাদক (বন ও পরিবেশ) কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, সহ-সম্পাদক (প্রচার) আসাদুল করিম শাহীন, সহ-সম্পাদক (শ্রম বিষয়ক) ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা, সহ-সম্পাদক (স্বাস্থ্য) রফিকুল কবির লাবু, সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহীম, ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চান, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান, মো: দুলাল হোসেন, এলিজা জামান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, মাওলানা মো: নেসারুল হক, আবদুস সোবহান, হায়দার আলী লেলীন, নুরুল ইসলাস নয়ন, হাসান মামুন, নজরুল ইসলাম মোল্লা, ডা: সহিদ হাসান, নুরুজ্জামান বাবুল প্রমুখ।