Naya Diganta

শীতের অনুভূতি এখনি পাওয়া যাচ্ছে যে কারণে

উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

ঢাকায় গত ক’দিন ধরেই ঘরে তেমন একটা ফ্যান চালাতে হচ্ছে না, চালালেও হয়তো কম গতিতে। আবার রাত বেড়ে গেলে গায়ে একটু কাঁথা জড়াতে ইচ্ছা করে।

উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ইতোমধ্যেই ঠাণ্ডা পড়ে গেছে। ভোরের দিকে ভারি কিছু গায়ে জড়াতে শুরু করেছেন অনেকেই।

বাংলাদেশে ইদানীং বৃষ্টির মৌসুম ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শীত আসতে একটু সময় নেয়।

আর ঢাকাতে ভরা শীত মৌসুমেও শীতের দেখা মেলে না, গায়ে হালকা কিছু জড়ালেই চলে।

তাহলে এখনি কেন শীতের অনুভূতি হচ্ছে? এ বছর কেমন হতে পারে শীত?

আগাম শীতের বার্তা কি তাহলে এসে গেল?
তেঁতুলিয়াতে সোমবার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস হচ্ছে- সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেছেন, এখনই শীতের অনুভূতি হওয়ার মূল কারণ ক’দিন আগে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের দেশে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে। এখন যে তাপমাত্রা আমরা অনুভব করছি সেটা সাধারণত ওই সময় হওয়ার কথা। কয়দিন আগে যে ঘূর্ণিঝড় হলো সেটার কারণে সারা দেশে যে অসময়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে এতে তাপমাত্রা কমে গেছে তাই শীতের অনুভূতি হচ্ছে। এই তাপমাত্রা এখন ওইভাবে আর বাড়বে না। এ কারণেই এই আবহাওয়াকে অগ্রিম শীতের বার্তা বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের সাথে এ বছরের পার্থক্য হচ্ছে অক্টোবরে হঠাৎ এতটা বৃষ্টিপাত। এ বছর সারা বর্ষার মৌসুমে ঢাকায় বৃষ্টিপাত ছিল ৩৫০ মিলিমিটারের মতো। কিন্তু সেই তুলনায় শুধু অক্টোবর মাসে ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার মূল কারণ ঘূর্ণিঝড়।

এবার বেশি শীতের সম্ভাবনা?
গত বছর ডিসেম্বরের ২০ এবং ২১ তারিখে বাংলাদেশে ৩০ বছরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে গড়ে অনেক কম তাপমাত্রা দেখা গেছে।

গত বছর কিছুটা আগেই দেশে শীতের মৌসুম শুরু হয়েছিল।

এশিয়াজুড়ে এ বছর শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বলছিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ।

তিনি বলেন, তার সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে এই বছর বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সিত্রাংয়ের কারণে যে বৃষ্টি হয়েছে সেটা মাত্র এক দিনের বৃষ্টি। আমরা যেটা পর্যবেক্ষণ করেছি, এ বছর পুরো কয়েক মাসের বৃষ্টির মৌসুম অনেক শুকনো ছিল। এই বর্ষা মৌসুমে খুব কম বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে যেটা হয়েছে মাটিতে আর্দ্রতা কম, মাটি শুকনো। মাটি ভেজা থাকলে সূর্যের আলোতে এক ধরনের তাপমাত্রা তৈরি হয় যা উপরিভাগকে গরম রাখে, তাপ ধরে রাখে। কিন্তু মাটিতে আর্দ্রতা কম থাকলে সেটা হবে না। মাটির শুকনোভাব শীতের তীব্রতা বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ বলছেন, বর্ষা মৌসুমের বায়ু ইতোমধ্যেই চলে গেছে যা সাধারণত আসে বঙ্গোপসাগর থেকে। বর্ষা মৌসুমের বায়ু চলে যাওয়ার পর শুরু হয় উত্তরের বাতাস যা শীত বয়ে আনে। উত্তরের বাতাস ইতোমধ্যেই বইতে শুরু করেছে।

আর সিত্রাংয়ের কারণে কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বেশ হঠাৎ করে পড়ে গেছে বলে তিনি মনে করছেন। বাতাসে জলীয় বাষ্প কম হওয়ার সাথেও শীতের সম্পর্ক রয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে গেলে আবহাওয়া শুষ্ক এবং বাতাস ভারী হয়ে পড়ে। তার ফলেও শীত বাড়ে।

তার ভাষায়, ‘শীত অনেক আগেই চলে আসবে সেটা বলা যাবে না। হয়তো একটু আগে আসতে পারে। যেহেতু কয়েকদিন আগেও অনেক বেশি গরম ছিল তাই এখন হঠাৎ এই হালকা ঠাণ্ডাকে অনেকের শীত বলে মনে হচ্ছে।’

এখনকার কম বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, শীত-গরম সবকিছুই শেষ পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত, বলছিলেন অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ।

সূত্র : বিবিসি