Naya Diganta

তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় মামুন জারির ভ্লগ

তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় মামুন জারির ভ্লগ

বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা প্রবল। চাকুরি ছাড়া নিজে নিজে কিছু করার স্বপ্ন অনেকেই দেখছেন। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য মামুন জারির ভ্লগের যাত্রা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। যখন করোনা মহামারীতে হাজার নয় লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিল। করোনার শুরুতে হঠাৎ সবকিছু বন্ধ হওয়ার কারণে যার যতটুকু জমানো সঞ্চয় ছিল ততটুকু খেয়েদেয়ে প্রায় শেষ করে ফেলেছিল নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি।

মামুন জারির জানান, তখনকার পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে, পেটের দায় স্কুল শিক্ষকদেরও দেখা গিয়েছিল রিকশা চালাতে। বড়সড় কোম্পানির উচ্চপদে থাকা কর্মচারিরা চাকরি হারিয়ে রাস্তায় সবজি বিক্রি করেছিল কোনোরকম খেয়েদেয়ে বাঁচার জন্য। মোট কথা মানসম্মান আর ব্যক্তিত্বের চিন্তা বাদ দিয়ে সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা করছিল। তখন তিনি ভেবে দেখলেন যে, এই সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে এই বেকার ভাই বোনদেরকে যদি, অল্প পুজিতে লাভজনক ব্যবসার সঠিক তথ্য দেয়া যায়, তাহলে হয়তো তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস পাবে। ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বেঁচে থাকার জন্য। এই বেকার ভাই বোনদের কথা মাথায় রেখেই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মামুন জারির ব্লগের যাত্রা শুরু হয়।

মামুন জারির আরো জানান, আমার পথচলার শুরুটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল, করোনার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল যাতায়াত। তথ্য সংগ্রহ করতে অধিকাংশ সময়ই চলে যেত ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা যেমন, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাংগাইল ইত্যাদিতে।

তিনি জানান, কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এমন হতো যে ক্যামেরা দেখে অনেক ব্যবসায়ীরা ভয় পেয়ে যেতেন। অনেকে আবার রেগেও যেতেন, যাদেরকে তখন বিষয়টা বোঝাতে সক্ষম হতাম তারাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেন। আর সেগুলোকে ভিডিওর মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতাম। এমন হতো তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে খালি হাতেও ফেরত আসতে হয়েছে অনেকবার।

মামুন জারির জানান, শুরুতে এই কাজটাকে পরিবার থেকে সাপোর্ট করলেও পরিচিত অনেকেই বিষয়টা নিয়ে হাসাহাসি করতো। সমালোচনা করতো পেছনে পেছনে। আমি কখনোই তাদেরকে গুরুত্ব দেইনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি সবসময়। এ ক্ষেত্রে আমার এক ফ্রেন্ড যার নাম সৌরভ হাসান সে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ দুই বছরের প্রচেষ্টায় প্রায় একশোটি ব্যবসায়িক বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে ভিডিও তৈরি করেছি আলহামদুলিল্লাহ। দেশের মানুষ এই ব্যবসায়িক কন্টেন্টগুলো এতোটা উপকারে এসেছে যে, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ইউটিউব এবং ফেসবুক মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মামুন জারির ভ্লগকে ফলো করছে আলহামদুলিল্লাহ।

‘এ কাজে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কেমন উপকার হয়েছে’ এই প্রশ্নের উত্তরে মামুন জারির জানান, দীর্ঘ এই দুই বছরের জার্নিতে এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি, তাতে ইতোমধ্যে মামুন জারির ভ্লগের ভিডিও কন্টেন্ট দেখে প্রায় ২৫ হাজারের মতো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা একদমই বেকার ছিল, হতাশার মধ্যে ডুবে ছিল। এদের অধিকাংশই এখন সফল। যাদেরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিনি আরো জানান, এমনই একজন ব্যবসায়ী, যার নাম মো: ফারুক। ঢাকা নিউ মার্কেটে তার দুটো কাপড়ের দোকান ছিল। করোনায় দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঋণের চাপে ব্যবসা ছেড়ে পথে বসার উপক্রম হয়। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছেড়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি নেন। কাকতালীয়ভাবে কামরাঙ্গীর চরের একটি প্রতিষ্ঠানের ভিডিও শুট করতে গিয়ে তার সাথে পরিচয়। সে জানান ব্যবসায় লস খেয়ে এখন সে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার থেকে বিস্তারিত শোনার পর বললাম, সামান্য পূজি নিয়ে আবার শুরু করেন ভালো কিছু হবে ইনশাল্লাহ। সে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আবার নতুনভাবে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। আলহামদুলিল্লাহ মাত্র ছয় মাসে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এসেছে তার ব্যবসায়। গত কয়েক সপ্তাহ পূর্বে তার শপে ভিডিও শুট করতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি বললেন, ভাই আপনি জানেন আমার মা জায়নামাজে বসে আপনার জন্য হাত তুলে দোয়া করেন। বিশ্বাস করেন এই কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসছে, কিভাবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করবো সেটা আমার জানা নেই। হয়তো এমন হাজারো মায়ের দোয়ায় মামুন জারির ভ্লগকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসা থাকলে ইনশাআল্লাহ মামুন জারির ভ্লগ বাংলাদেশে আরো হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করতে সহযোগিতা করতে পারবে। যাতে করে অল্প হলেও দেশ থেকে দূর হবে বেকারত্ব।