Naya Diganta

ঘণ্টা পাঁচেক

ঘণ্টা পাঁচেক

দিব্যি সুস্থ সবল মানুষ ব্যস্ততার আঁকড়ায় বন্দী। তিনি হলেন বায়জিদ সাহেব। পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি ছাত্রদের কাছে টাইগার স্যার নামে পরিচিত। ক্লাসে তাকে সবাই ভয় পেত। তিনি খুব রাগী ও সৎ নিষ্ঠাবান ছিলেন।
চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে অন্যান্য কর্মে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হঠাৎ একদিন চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুরে তাড়াহুড়ো করে বাসায় ফিরলেন। আপু আপু বলে ডাকতে লাগল ছোট মেয়ে নিশাতকে। তিনি নিশাতকে প্রায়ই আপু বলে ডাকতেন। ছোট মেয়ে খুব আদুরি বলে তাই। স্ত্রী, লুনা পাশের ঘর থেকে এসে বলতে লাগল- আজ এত দ্রুত বাড়ি ফিরলে যে? এত হাঁপাচ্ছ কেন? শান্ত হয়ে সোফায় বসো, আমি লেবুর শরবত করে নিয়ে আসছি। নিশাত এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল- বাবা কী হয়েছে তোমার?
খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমায়। বায়জিদ সাহেব কিছু বলতে পারছে না। অজস্র কান্নায় ঢলে পড়ছে নিশাতের গায়ে। ঠিকটাক সরবতের গ্লাসটা নিতে পারছে না। বাবাকে, নিশাত শরবতটা খায়িয়ে দিলো। দু’জনের মাঝে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না কী হয়েছে? হাসপাতাল মুখি হতে চাইলে বায়জিত সাহেব বাধা দিচ্ছেন। আর বলছেন, আমাকে পৃথিবীর কোথাও নিয়ে গেলে কোনো লাভ হবে না। নিশাত থমকে আছে। লুনা মুখে আঁচল চেপে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। আকাশে সূর্যটা পূর্ব দিকে হেলে যাচ্ছে, রঙটাও গাঢ় হয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। এ দিকে সূর্যের সাথে পাল্লøা দিয়ে বায়জিদ সাহেবের গায়ের রঙটাও পরিবর্তন হতে লাগল।
মায়ের কান্না দেখে নিশাতও কাঁদতে লাগল। বাবা দীর্ঘশ্বাসে নিশাতকে বলতে লাগলেন- আপু আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার জন্য কিছু রেখে যেতে পারিনি। তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। লুনা, আমাদের দাম্পত্য জীবনে একসাথে থাকতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কথা শুনিয়েছি তোমায়, আমাকে ক্ষমা করে দিও। নিশাতকে দেখে রেখো। নিশাত, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগল, বাবা, কী হয়েছে তোমার? আবোল-তাবোল কী বলছ এসব! আমার কিছু লাগবে না। আমার জন্য কিছু করতে হবে না। বায়জিদ সাহেবের কথাগুলো মুখে আটকে আটকে আসছে। খুব কষ্ট করে কথাগুলো বলছেন। আপু তুমি মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে এক বছর চাকরির জন্য চেষ্টা করবে, তারপর তোমার মায়ের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে করবে। সর্বদায় সত্য কথা বলবে ও ন্যায়নীতিতে অটুট থাকবে, আর আমার পেনশনের টাকাগুলো তোমার নামে রাখা আছে। তোমার ইচ্ছেমতো তোমার বড় আপুদেরকে বিলিয়ে দিও। আর কিছু কথা বুঝা গেল না। বায়জিদ সাহেব সোফা থেকে ঢলে পড়েছেন ফ্লোরে। নিশাত ও তার মা হাতে-পায়ে তেল মালিশে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আহাজারি কান্নায় আল্লøাহকে ডাকছে নিশাত ও লুনা।
যে মানুষটা ঘণ্টা পাঁচেক আগে খেয়েদেয়ে দিব্যি সুস্থ একজন মানুষ বাসা থেকে বের হলো এখন এমন কী হলো। আল্লøাহ তুমি সহায় হও। মিনিট পাঁচেক পর বায়জিদ সাহেবের শ্বাস-প্রশ্বাস কঠিন হতে লাগল। লুনা ও নিশাত তাসবিহ জবতে লাগল, কিন্তু তিনি আর নেই। এতক্ষণে তিনি চলে গেলেন, না ফেরার দেশে। ভালো থাকুন ওপারে।