Naya Diganta

মোবাইল পাসওয়ার্ড

বৃষ্টির আওয়াজে সেদিন আমার ঘুম ভাঙে। একটু পরে শোয়া থেকে উঠে বসি। গুড়ুম গুড়ুম মেঘের বোল। আবার এভাবে ঘুমিয়ে পড়লে এই শব্দটা মিস হবে বলে চোখের পাতা আর এক করি না। দৈবাৎ পাশের ফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভাইয়া, আমি খুব বিপদে পড়েছি। ঘটনাটি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে কিন্তু আমার হাতে সময় খুবই কম। আপনাকে আমি একটু পরে সব বুঝিয়ে বলব। আমি টুঁ শব্দটিও করিনি। মেয়েটি এটুকু কথা বলতেই হাঁপিয়ে ওঠে যেন। আমি কাহিনীটা কী কিচ্ছু বুঝি না।
বৃষ্টির গুড়ুম গুড়ুম শব্দটা কমে যাওয়ায় তখন ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল।
আমি কিভাবে কী শুরু করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। যদি আমি বলি আপনি এতক্ষণে কী বলেছেন আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তাহলে হয়তো মেয়েটি কষ্ট পাবে। এটা-ওটা ভাবতে ভাবতে আমি তখনো চুপ। আরেকটা নাম্বার থেকে কল চলে এলো আমি বুঝতেই পারছি না কিছু। আমি তখন বললাম আমাকে কে যেন কল করেছে। আমার কথা শেষ হতে না হতেই মেয়েটি উদগ্রভাবে বলে উঠল, এইতো ভাই তারিক ফোন করেছে। প্লিজ ভাই আমাকে বাঁচান। আপনি বলবেন হুম, আমি ফাইজাকে খুব ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। ওকে নিয়ে আর আপনাদের টেনশন করতে হবে না। আমি ওকে নিয়ে কালই শহরে চলে যাবো।
কথাগুলো শুনে আমার শরীরটা ঘর্মাক্ত হয়ে গেল। পাশে আমার স্ত্রী শুয়ে আছে।
বারবার ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। ওর ঘুম খুবই কাঁচা একটুতেই ভেঙে যায়। দু’বার রিং হয়ে কল কেটে গেছে আমি রিসিভ করিনি। একটু পরেই একটা মেসেজ আসে। আমি মেসেজ সিন করে দেখি বিকাশ নাম্বার থেকে ২৪ হাজার টাকা এসেছে। আমার মনে হলো আমি যেন আরো বিপদে পড়ে যাচ্ছি। সেই মেয়ের নাম্বার থেকে আবার কল আসে। আমি এখন যদি মেয়েটির নাম্বার রিসিভ না করি মেয়েটি হয়তো ভাববে টাকা পেয়ে আমি কল রিসিভ করছি না। এ জন্য কিছু না ভেবেই এবার রিসিভ করে বললাম, জ্বি বলুন। মেয়েটি নমনীয় কণ্ঠেই বললেন, আপনার নাম্বারে ভাইয়া টাকা পাঠিয়েছে আমাদের খরচের জন্য। সকালেই আমি ঢাকার গাড়িতে উঠব।
আমি রেগে কথা বলব না বুঝিয়ে বলব কিছুই তখন আমার মাথায় আসছিল না। মেজাজ আর কন্ট্রোলে রাখতে না পেরে বলে গেলাম অনর্গল, ‘আচ্ছা, আপনি কী আমাকে এত রাতে পাগল পেয়েছেন। আপনার ফোন, আপনার ভাইয়ের ফোন। কিছু না বলেই আবার টাকা পাঠালেন। আমি কি কিচ্ছু বলেছি আপনাকে?’ আমার কর্কশ কণ্ঠে পাশে শুয়ে থাকা মানুষটির ঘুম ভেঙে যায়। জেগে ওঠে বলে কী হয়েছে তোমার? আমি সবকিছু খুলে বলি। ও আমার সব কথা শুনে মুচকি হাসি টেনে বলে, ‘আমি সব বুঝতে পেরেছি। এখন ঘুমাও সকালে সব খুলে বলব।’
‘না তুমি এখনই বলো আমার ঘুম আসবে না। আমার নিজেকে একটা পাগল মনে হচ্ছে।’
‘আসল ঘটনা কী আমি কিছুই জানি না। কিন্তু রাকিব বিকালে তোমার ফোনটা নিয়েছিল। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ফোনটা আমার কাছে রেখে গেছে।’
এই কথা শুনে কাহিনীটা আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। এই সময়ের মধ্যেই তাহলে কিছু একটা হয়েছে। আমি ফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি না। আমার ফোনে এমন কিছু নেই কেউ দেখতে পারবে না। শুধু শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখতে আগে বিরক্তবোধ হতো। সেদিন থেকে তাওবা করলাম নিজের ফোনটা অন্তত নিজের কন্ট্রোলে রাখব। এমনকি এটা আমার দায়িত্ব।