Naya Diganta
ব্যর্থতার দায় এড়ানোর ব্যর্থচেষ্টা

জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন হয়রানিমুক্ত হোক

ব্যর্থতার দায় এড়ানোর ব্যর্থচেষ্টা

দেশের সরকারি দফতর থেকে সুষ্ঠু ও দক্ষ সেবা পাচ্ছে না দেশবাসী। প্রতিটি দফতরই যেন স্থায়ী জরায় আক্রান্ত। ঘুষ দুর্নীতি অনিয়ম তো আছেই। তারপরও ন্যূনতম সেবাটুকু নিশ্চিত করার কোনো গরজ বা তাগিদ কারো মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। ইউটিলিটি সার্ভিসের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে সবারই একই অবস্থা। ব্যতিক্রম নয় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ও।
পত্রিকান্তরের খবরে জানা যায়, জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমে ২১ বছরেও নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এ ব্যর্থতার কথা স্বীকারও করেছে দফতরটি। তবে দায় চাপানোর অপচেষ্টা করেছে সেবাগ্রহীতা সাধারণ মানুষের ওপর।
সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে নির্ভুল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যে সাতটি সমস্যার কথা বলা হয়েছে তার বেশির ভাগই তাদের নিজেদের ব্যর্থতাজনিত। চিহ্নিত সমস্যাগুলো হলো- নতুন সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতা দূর করা, একাধিক নিবন্ধন বাতিল করা, জন্মের ৪৫ দিনের মধ্য নিবন্ধন নিশ্চিত করার হার বৃদ্ধি, মৃত্যু নিবন্ধনের হার বৃদ্ধি, বিভিন্ন সংস্থার সাথে নতুন সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপন করতে না পারা, জন্মতারিখ সংশোধনের অস্বাভাবিক প্রবণতা এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব। এই সাতটি সমস্যার মাত্র একটির সাথে সেবাগ্রহীতাদের সম্পর্ক আছে। সেটি হলো- একই ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধন করা। কিন্তু একাধিক নিবন্ধন যাতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব কি সংশ্লিষ্ট দফতরের নয়?
আসলে নিজের দায়িত্বটুকুও যখন কেউ বোঝে না তখনই এমন খোঁড়া অজুহাত তোলা সম্ভব।
গত ২১ বছরে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে এই কার্যক্রমে। শুধু একটি নতুন সফটওয়্যার তৈরির জন্য ইউনিসেফের কাছ থেকে সংস্থাটি পেয়েছে ১৫ কোটি টাকা। সে-ও তিন বছর আগে। এখন পর্যন্ত সফটওয়্যারের কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি দফতর বা সংস্থার সাথে নতুন সফটওয়্যারের সংযোগ স্থাপনও করা যায়নি। এই ব্যর্থতার দায় কার?
অথচ মানুষ জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে যেসব বাস্তব সমস্যার মুখে পড়ছে তার কিছুই স্বীকার করেনি সংস্থাটি। উল্টো নির্ভুল তথ্য দিয়ে সনদ দিতে না পারার জন্য নাগরিকদের দায়ী করা হয়েছে।
জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করার সময় সংস্থার অদক্ষ কর্মীদের ভুলের কারণে সেবাগ্রহীতাদের যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সে বিষয়টি সযতেœ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ নিবন্ধনের সময় একটি তথ্য ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য মানুষকে অন্তত দু’টি দফতরে ঘুরতে হয়। সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়নে এবং জেলা প্রশাসক বা ইউএনওর কার্যালয়ে। প্রতিটি দফতরেই সরকারি নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত চার-পাঁচগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয় একেকজন মানুষকে। যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জন্মসনদ নিতে সরকারি ফি’র পরিমাণ সামান্যই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মীরা পাঁচগুণ পর্যন্ত বাড়তি টাকা আদায় করেন, এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য। দেশে ও দেশের বাইরে পাঁচ হাজার ৫৩২টি জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন করা যায়। সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পাশাপাশি বিদেশের বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অভিযোগ আছে, বেশির ভাগ দফতরেই মানুষকে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
স্কুলে ভর্তি, বিয়েশাদি, চাকরি, পাসপোর্টসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে জন্মসনদের প্রয়োজনীয়তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ এই সনদ পাওয়ার সহজ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি সংশ্লিষ্ট দফতরের অদক্ষতায়। সংস্থার কর্মীরা দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক রোহিঙ্গাকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছে এমন খবরও বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে এসেছে। আছে নানা অনিয়মও।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ২১ বছরেও কেন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নির্ভুল ডেটাবেজ তৈরি করা সম্ভব হলো না সেটি তদন্ত করে দেখা।