Naya Diganta

ভ্যাট অব্যাহতি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা

পর্যায়ক্রমে দেশে ভ্যাট অব্যাহতির কমিয়ে আনা হবে। একই সাথে ই-কমার্স সাইট থেকে আদায় বাড়িয়ে ভ্যাট কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠিত ‘কর সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ-২-এর সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার উপসংহারে এসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য এই স্টাডি গ্রুপ গঠন করা হয়।
রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে আদায়ের টার্গেট দেয়া আছে এক লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে (২০২১-২২) যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।
এ দিকে স্টাডি গ্রুপের পরামর্শে বলা হয় এলডিসি থেকে উত্তরণে আইনি বিধিবিধানগুলো আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও দেশীয় বাস্তবতার নিরীখে অতি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ এবং চলমান রাখতে হবে। এ ছাড়া করজিডিপি অনুপাত বাড়াতে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালিয়ে তা কার্যকর করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর আওতাধীন বিভাগগুলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে জরুরি ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। করসংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার চলমান রাখা। মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ এবং কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও শুল্ক যৌক্তিককরণ’ বিষয়ক একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই উপ-কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি পর্যালোচনা-পূর্বক একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন প্রণয়নের লক্ষ্যে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্টাডি গ্রুপ’ গঠন করা হয়।


সূত্র মতে, শুল্ক বিভাগ, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বিভাগ ও আয়কর বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে স্টাডি গ্রুপ-২। ইতোমধ্যেই এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
আয়কর বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- সমন্বিত ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কৌশলপত্র প্রণয়ন করা, বাংলা ভাষায় নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন, অনলাইন সেবা বাড়ানো, বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন ও আয়কর ট্রাইব্যুনাল সংস্কার। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা, কর পরিপালন। সংস্কার ও গবেষণা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি।
মূসক বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- মূল্য সংযোজন কর আইন ও বিধির প্রয়োজনীয় সংস্কার; অটোমেশন সম্পন্ন করা; দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ পর্যালোচনা; ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা; ই-কমার্স খাত থেকে ভ্যাট আদায় বাড়ানো; কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনা এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানো।
শুল্ক বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- শুল্কহার বাউন্ড রেটের মধ্যে আনার জন্য বিশ^ বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) বাংলাদেশের শিডিউল পর্যালোচনা; ন্যূনতম আমদানি মূল্য তুলে দেয়ার জন্য একটি ফেইজ-আউট পরিকল্পনা প্রণয়ন। সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটিকে স্টিম-লাইন করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। অন্যান্য দেশ কর্তৃক গৃহীত হয়নি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির আলোকে বাংলাদেশের বিদ্যমান নীতিগুলো পর্যালোচনার জন্য গবেষণা। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসিতে পর্যায়ক্রমে শুল্কহার কমানোর বিষয়টি সন্নিবেশ করার জন্য ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি সম্পর্কিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি সম্পর্কিত কমিটি কর্তৃক কিছু বিষয় ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গবেষণা। বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাগ্রিমেন্ট এবং কাস্টমস মডার্নাজাইশেন প্ল্যান দ্রুত বাস্তবায়ন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, স্টাডি গ্রুপের পরামর্শ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি সভা করেছি। এতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের লোকজন ছিলেন। এখন এই বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা করে পরামর্শগুলো চূড়ান্ত করা হবে।