Naya Diganta

মধ্য আফ্রিকায় নিহত সেনাসদস্যদের বাড়িতে মাতম

মধ্য আফ্রিকায় নিহত শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীরের (ইনসেটে) স্বজনদের আহাজারি : নয়া দিগন্ত

মধ্য আফ্রিকায় মাইন বিস্ফোরণে নিহত তিন শান্তিরক্ষীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারের সদস্যদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, বিস্ফোরণে নিহত শান্তিরক্ষী সৈনিক জাহাঙ্গীরের নীলফামারীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পুরো পরিবার শোকে কাতর হয়ে পড়েছে। নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন আর চেতনা হারিয়ে ফেলছেন।
মধ্য আফ্রিকায় প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় মাইন বিস্ফোরণে তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে। জাহাঙ্গীরের পিতার নাম লতিফর রহমান। লতিফর রহমানের পাঁচ ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর চতুর্থ ছিলেন।
নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই সেনাসদস্য কর্পোরাল আবুজার রহমান জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। ১০ মাস আগে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ব্যানব্যাট-৮ এলাকার উইক্যাম্পে শান্তিরক্ষী মিশনে যান তিনি। মঙ্গলবার ভোর ৪টায় (বাংলাদেশ সময়) মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিনিসহ তিন বাংলাদেশী সেনাসদস্য প্রাণ হারান। এ ছাড়া আহত হন দু’জন।
তিনি জানান, জাহাঙ্গীরের সাথে চার বছর আগে বিয়ে হয়েছিল জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার শিমু আক্তারের। ঘটনার আগের রাতে ভিডিও কলে সর্বশেষ কথা হয় শিমুর। ভালো আছি আর কিছু দিন পরই বাড়িতে আসছি বলে জানান জাহাঙ্গীর।
মঙ্গলবার সকালে সেবাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোবাইলে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বলে জানান নিহতের ছোট ভাই বাদশা। এর পর থেকে জাহাঙ্গীরের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বুধবার তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে নিহত জাহাঙ্গীরের শোকে পুরো পরিবার কাতর হয়ে পড়েছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বাবা লতিফর রহমান। মা গোলেনুর বেগম বিছানায় পড়ে আছেন। স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে ধরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। আর মাঝে মাঝে গগণবিদারি চিৎকারে দিয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলছেন। স্ত্রী শিমুকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরের বাড়ি ছাপিয়ে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে পুরো তিতপাড়া গ্রাম। তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। দ্রুত লাশ ফেরত আনার দাবি জাহাঙ্গীরের পরিবারসহ এলাকাবাসীর।
এ দিকে বুধবার সকালে জাহাঙ্গীরের বাড়ি পরিদর্শন করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরের লাশ দেশে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, মধ্য আফ্রিকায় মাইন বিস্ফোরণে নিহত সেনাসদস্য জসিম মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। নিহতের স্বজনদের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ।
ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নূরের ছেলে জসিম ২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি জাতীসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর সংবাদ বাংলাদেশে পৌঁছলে মুহূর্তে শোকের ছায়া নেমে আসে খাটিংগা গ্রামে। নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নূর যেন ছেলেকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতের স্ত্রী। পরিবারের পাশাপাশি নিহতের স্বজনদের মধ্যেও বইছে শোক। জসিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই তাদের বাড়িতে আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন আসছেন তাদের সান্ত্বনা দিতে।
তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজখবর নিতে আসেনি কেউ বলে অভিযোগ করেন জসিমের ভাই। পরিবারের দাবি জসিমের লাশ যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।