Naya Diganta
স্মরণ

মাওলানা উবায়দুল হক

স্মরণ

আজ ৬ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি সিলেট শহর থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বারঠাকুরিতে ১৯২৮ সালের ২ মে, শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনার শেষ বছর ঢাকার বড়কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম হজরত মাওলানা আবদুল ওহাব পীরজী হুজুর রহ:-এর আগ্রহে এবং দেওবন্দের শিক্ষকদের পরামর্শে খতিব সাহেব মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি তিন বছর শিক্ষকতা করার পরে হজরত মাওলানা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানি ও মাওলানা এজাজ আলী ও অন্যান্য শিক্ষকের সাথে দেখা করার জন্য দেওবন্দ চলে যান। মাওলানা এজাজ আলী রহ: তাকে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরের এক মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠিয়ে দেন। সেখানে কিছু দিন শিক্ষকতা করার পর মাওলানা এজাজ তাকে নিয়ে এসে করাচির হজরত মুফতি শফী রহ:-এর দারুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠিয়ে দেন। হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি রহ:-এর খলিফা এবং পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির শীর্ষনেতা হজরত মাওলানা আতহার আলী রহ: ও মাওলানা উবায়দুল হককে মুফতি শফী রহ:-এর অনুমতিক্রমে ঢাকায় নিয়ে এসে পার্টির রচনা ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্ব দেন। এ সময় মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় সিনিয়র শিক্ষকের একটি পদ শূন্য হলে মাওলানা উবায়দুল হককে এ পদে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি তার শিক্ষক মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি রহ:-এর অনুমতিক্রমে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় যোগ দেন। মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক, ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হাদিস বিভাগের লেকচারার, ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তাফসির বিভাগে সহকারী মাওলানা, ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এডিশনাল হেড মাওলানা এবং ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত হেড মাওলানা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৫ সালের ২ মে খতিব মাওলানা উবায়দুল হক অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৮৫ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর ঢাকার ফরিদাবাদ এমদাদুল উলুম মাদরাসায়, ১৯৮৬ ও ’৮৭ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় এবং ১৯৮৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিলেট কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল রহ: মাদরাসায় শায়খুল হাদিসের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৫ সাল থেকে কয়েক বছর তিনি ঢাকার ইসলামপুর ইসলামিয়া মাদরাসায় মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঢাকা আজিমপুরের ফয়জুল উলুম মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্বে ছিলেন। জামেয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ ও কুমিল্লা কাসিমুল উলুম মাদরাসার মজলিসে শূরার সভাপতি, সিলেট জামিয়া সিদ্দিকিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান, মঈনুল উলুম হাটহাজারী, পটিয়া মাদরাসা এবং সিলেট জামেয়া কাসিমুল উলুম মাদরাসাসহ অনেক ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসার হেড মাওলানার দায়িত্বে থাকাকালে তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবের দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০০৭ সালের ৬ অক্টোবর আমৃত্যু এই দায়িত্বে ছিলেন।
খতিব মাওলানা উবায়দুল হক রহ: লিখিত ও প্রকাশিত বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- তরিখে ইসলাম, দুই খণ্ড, সিরাতে মোস্তফা, মূল গ্রন্থ উর্দু, তাসহীলুল কাফিয়া প্রভৃতি।
খতিব সাহেবের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৯১ সালে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে একটি সেমিনারে। উপমহাদেশের অন্যতম আলেমে দ্বীন মাওলানা আবদুর রহীম রহ:-এর জীবন ও কর্মের ওপর দুই দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনারে তিনি আলোচক হিসেবে এসেছিলেন। তিনি ইসলাম, দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতেন। সরকারনিয়ন্ত্রিত মসজিদের খতিব হওয়ার পরও তিনি সরকারের নানা ধরনের ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতেন কঠোরভাবে। তার মধ্যে কোনো ধরনের ভয়ভীতি লক্ষ করা যায়নি। তাকে এ পদ থেকে অপসারণের চেষ্টাও করা হয়েছে বহুবার। তাতেও তিনি দমে যাননি। আরো দৃঢ়তার সাথে ইসলামের সঠিক কথা তিনি মুসল্লিদের সামনে তুলে ধরতেন। ইসলামী দলগুলোর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন সঙ্কটকালে। জাতির আজকের এ দুর্দিনে তার মতো খতিবের খুবই প্রয়োজন ছিল।
২০০৭ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশে সফররত ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ শাহরুখির সম্মানে দাওয়াত ছিল। অনুষ্ঠানের শেষ দিকে বুকে একটু ব্যথা অনুভব করলে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। হ
এস এম সাখাওয়াত হুসাইন