Naya Diganta

ইউরোপের প্রতি সংহতি না দেখানোয় জার্মানির সমালোচনা

ইউরোপের প্রতি সংহতি না দেখানোয় জার্মানির সমালোচনা

জ্বালানি সঙ্কট সামলাতে জার্মানি বিশাল অঙ্কের কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়ায় ইইউ স্তরে সমালোচনা বাড়ছে। জার্মানির মধ্যেও ফেডারেল ও রাজ্য স্তরে তহবিলের অর্থ নিয়ে বিরোধ চলছে।

বিপদে পড়লে আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত নাকি পাড়াপড়শির সহায়তা করা উচিত? জ্বালানি সঙ্কট ও মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় বিপর্যস্ত ইউরোপে সেই প্রশ্ন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে জার্মানি পরিস্থিতি সামলাতে ২০ হাজার কোটি ইউরো ব্যয় করে নিজস্ব নাগরিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহায়তার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, ইউরোপীয় স্তরে তার জোরালো সমালোচনা শুরু হয়েছে। জার্মানির এমন ‘একলা চলো রে' পদক্ষেপের কারণে ইউরোপে জ্বালানি সঙ্কট আরো প্রকট হয়ে উঠবে বলেও কিছু দেশ আশঙ্কা করছে। ফ্রান্স ও ইতালিসহ একাধিক দেশ ইইউ স্তরে এমন সার্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি দুইজন ইইউ কমিশনারও জার্মানির সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্তরে সঙ্কট মোকাবেলায় বিশাল অঙ্কের তহবিলের বিষয়টি নিয়েও ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। করোনা সঙ্কটের সময় এমন সহায়তার ব্যবস্থা করা হলেও সদস্য দেশগুলির জন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিছু দেশ শর্ত মেনে নির্দিষ্ট কর্মসূচি স্থির করে সেই তহবিলের নাগাল পেলেও অনেক দেশ এখনো সেই কাজে সফল হয়নি। এমন একাধিক ইইউ তহবিলে এখনো কোটি কোটি ইউরো অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে জ্বালানি সঙ্কটের জের ধরে নতুন তহবিল গঠনের প্রস্তাবকে ঘিরে বিতর্ক কম নেই। ইইউ স্তরে এমন বাড়তি ব্যয়ের জন্য আর্থিক বাজার থেকে আবার যৌথ ঋণ নিতে প্রস্তুত নয় অনেক দেশ।

জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার ইইউ স্তরে সমালোচনার জবাব দিয়ে বলেছেন, জার্মানির ‘সুরক্ষা কবচ' নিয়ে আসলে অনেকের ধারণা ভুল। কারণ জার্মানি বিদ্যুতের বাজারে রদবদল করতে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার মতে, জার্মান অর্থনীতির মাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই সরকার সঙ্কট সামলানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, যে অন্য কয়েকটি দেশও নাগরিকদের সহায়তা করতে জাতীয় স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বার্লিনে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সাথে আলোচনার পর তিনি বলেন, জার্মানি একাধিক বন্দরে এলএনজি টার্মানিলার গড়ে তোলার যে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার ফলে অন্যান্য দেশেরও উপকার হবে।

জার্মানির মধ্যেও ফেডারেল সরকারের প্রস্তাবিত ২০ হাজার কোটি ইউরো অঙ্কের তহবিল নিয়ে বিতর্ক চলছে। কারণ সরকার একা সেই তহবিল বহন না করে রাজ্য সরকারগুলোর অংশগ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছে। কর ও রাজস্ব বাবদ বাড়তি আয়ের অংশবিশেষ সেই তহবিলে কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করছে ফেডারেল সরকার। অন্যদিকে রাজ্য সরকারগুলো বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষি করছে। চলতি অক্টোবর মাসে বিশেষজ্ঞদের এক কমিশন তহবিলের রূপরেখা সম্পর্কে স্পষ্ট প্রস্তাব পেশ করার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে