Naya Diganta

টেকনাফের ওপারে ফের গোলাগুলির পাশাপাশি হেলিকপ্টারের চক্কর

টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। একই সাথে আকাশে চক্কর দিচ্ছে সামরিক হেলিকপ্টার। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে সীমান্তের বাসিন্দাদের। তবে বান্দরবানের তুমব্রু বা উখিয়া সীমান্তে গত তিন দিন একদম বন্ধ ছিল গোলাগুলি। যার কারণে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছিল ওই সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে। কিন্তু টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং এলাকায় নাফ নদীর এপারে আবারো শুরু হয়েছে ব্যাপক গোলাগুলি। দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময় ভেসে আসছে গোলাগুলির শব্দ। এতে নিরাপত্তার স্বার্থে কাজে যেতে পারছেন না কৃষক, দিনমজুর ও জেলেরা। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তারা। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে। ওপারে ব্যাপক গোলাবর্ষণের পাশাপাশি হেলিকপ্টারের বিচরণও চলছে। এরই মধ্যে টেকনাফ সীমান্তে অতি ঝুঁকিতে থাকা ৪০০ থেকে ৫০০ পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সীমান্তের কয়েকজন শ্রমজীবী জানিয়েছেন, আমরা দেখেছি লাইটের আলো ছাড়া জাহাজ যাচ্ছে, যা দেখা গেছে বেড়িবাঁধ থেকে। কিছুক্ষণ পর প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ, তবে জাহাজ আর দেখা যাচ্ছিল না। গোলাগুলির শব্দে ভয়ে বেড়িবাঁধ থেকে চলে এসেছি। গোলাগুলির কারণে বিজিবি সদস্যরা সাগরে ও বেড়িবাঁধে যেতে দিচ্ছে না। যে কারণে মাছ শিকার করা যাচ্ছে না। তারা জানায়, সরকারের নিষেধ রয়েছে; সীমান্তে আসা যাবে না। কিন্তু সীমান্তে মিয়ানমারের মগরা এসে গোলাগুলি করছে। কাউকে নদীতে বা প্যারাবনে দেখলে গুলি করে, এমন অবস্থা দেখছি। হোয়াইক্ষ্যংয়ের নাছরপাড়ার আবদুল জলিল জানালেন, আমার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। চাষাবাদ বা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। এখন মিয়ানমারের গোলাগুলির কারণে নাফ নদীতে যেতে পারছি না, ক্ষেতখামারেও যাওয়া যাচ্ছে না। দিন চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এ দিকে টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি কমে গিয়েছিল। যে কারণে আতঙ্ক কিছুটা কমে যায়। গত তিন দিন একদম গোলাগুলি হয়নি।
এতে কৃষক, দিনমজুর ও জেলেরা কাজে ফিরেছিল; কিন্তু হঠাৎ করে শুক্রবার আবারো গোলাবর্ষণের কারণে আতঙ্ক বেড়েছে। একই সাথে আকাশে চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার। এতে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে সীমান্তের রাখাইনসহ অন্য বাসিন্দারা।


মান্দালয়ে পুলিশের গাড়িতে হামলা, বন্দীদের উদ্ধার : মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলের অমরাপুরা শহরতলিতে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্ত করেছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গত বৃহস্পতিবার সকালের ওই অতর্কিত হামলায় তারা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকেও হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটে মান্দালয়ের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহরে। বন্দীদের ওবো কারাগারে নিয়ে যাওয়া একটি পুলিশের গাড়িতে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) সদস্যরা হামলা চালায়। গ্রুপটির মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউকে এ কথা জানিয়েছেন।
পিডিএফের মুখপাত্র নে লিন বলেছেন, ওই গাড়িতে আটজন বন্দী ছিলেন এবং সাতজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। চালকসহ সামনে তিনজন ও বন্দীদের সাথে পেছনে চারজন। আমরা প্রথমে আটজনকেই মুক্ত করতে পেরেছিলাম, কিন্তু তাদের মধ্যে ছয়জনকে তারা আবার আটকাতে সক্ষম হয়েছে।
জানা গেছে, মিটঙ ব্রিজ এলাকার যেখানে হামলাটি চালানো হয়েছিল, সেখানে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং-এর সফরের জন্য বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জান্তা নেতা মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন, যা শহরের দক্ষিণ অংশে একটি শিল্প পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নিরাপত্তার কারণে বন্দীদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পিডিএফ। নে লিন বলেন, আমরা এখন পালিয়ে যাওয়া দু’জনকে নিরাপদ স্থানে পাঠানোর চেষ্টা করছি। তবে আমরা চিন্তিত যে বাকি ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, পিডিএফ বাহিনী এলাকা থেকে সরে যাওয়ার পরপরই বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। মিটংয়ের এক বাসিন্দার মতে, হামলায় একজন বন্দীও আহত হন।
এই আটজন বন্দীকে মান্দালয়ের ওবো কারাগারে তিন দিন রাখার পর মাইটঙ্গের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি থানায় নেয়ার পর তারা আদালতের শুনানিতে অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এ দিকে স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবারের হামলার পর বিপুলসংখ্যক সেনা আশপাশের গ্রামে তল্লাশি চালাচ্ছে।