Naya Diganta

৩ বন্ধুর একসাথে ৩ বছর

৩ বন্ধুর একসাথে ৩ বছর

বন্ধু, সহপাঠী, সহকর্মী। তিনটি পরিচয় একসাথে নিয়ে পথচলার তিন বছর পেরিয়ে এলাম আমরা তিনজন। তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে একে অপরের সাথে চেনাজানা ছিল আরো আগে থেকে। স্কুল-কলেজের মধুর দিনগুলো পেরিয়ে, জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে যাওয়া বন্ধুদের ছেড়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয় একরকম একাকী। অচেনা জগতে সে সময় আতিক এসেছিল আমার ক্যাম্পাস লাইফের প্রথম বন্ধু হিসেবে। সেই ওরিয়েন্টেশনের দিনই পরিচয়, এরপর আলাদা ফ্যাকাল্টি হওয়ার পরও বন্ধুটা গড়ে উঠেছিল প্রকৃতির নিয়মে। নতুন ক্যাম্পাসে সেই প্রথম তিনটি মাসই সম্ভবত আতিকের সাথে কাটানো সেরা সময় ছিল। এরপর বাড়তে থাকে দু’জনের ব্যস্ততা, যোগাযোগের দূরত্ব। প্রায় এক বছর পর দু’জনের দু’টি পথ আবার এসে মিলিত হয় টিএসসির চার নম্বর রুমে, সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে। শুরু হয় বন্ধুত্বের সাথে সহকর্মী হয়ে ওঠার গল্প।
কয়েক মাস পর সেই গল্পে আগমন হয় নতুন আরেকটি চরিত্রের। একই শহরে পাশাপাশি কলেজে দুই বছর পড়াশোনা করেছি, অথচ জিম থেকে গিয়েছিল একদম অচেনা। কিন্তু এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জিমের সাথে সম্পর্ক হয়ে গেল ওই সাংবাদিকতা করতে এসে।
আবার সাংবাদিকতার আগে জিম আর আতিক ছিল শুধুই এক ক্লাসের সহপাঠী। বন্ধুত্বটি ছিল অন্য আর দশজনের মতোই, তবে সেটি এখন অনেক বেশি গাঢ়।
সাংবাদিকতার দরুন পারস্পরিক সম্পর্কগুলো এক কাতারে এসে মিশে আতিক-জিম-তানভীর হয়ে ওঠে একে অপরের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাশাপাশি নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির অপরিহার্য সদস্য।
একসাথে প্রোগ্রাম করা, নিউজ করা, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, পড়াশোনা, ঘুরাঘুরি- চোখের পলকেই যেন তিনটি বছর কেটে গেল। পেশাগত কাজে অসংখ্যবার একে অপরকে সহযোগিতা করে পাশে থেকেছি। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, সুসময়ে-দুঃসময়েও কাঁধে হাত রেখে চলেছি একসাথে। প্রোগ্রামে যাওয়া, নিউজ করায় প্রক্সি দিয়েছি। নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার মানসিকতা যেন তৈরিই হয়নি আমাদের। তাই তো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারিনি এখনো। ভালো সংগঠক হিসেবে আতিক, সাহসিকতার জন্য জিম আর আমি লেখালেখির জন্য বড় ভাইদের কাছে আমরা তিন ‘বাজির ঘোড়া’। তবে এখন পর্যন্ত তিনজন একসাথে কোথাও ট্যুর দেয়া হয়নি। আসা করছি খুব শিগগিরই সেটি হয়ে যাবে।
এই তিন বছরে আতিক বা জিম, কারো সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে মনে পড়ে না। কখনো রাগ করেছি, কখনো রাগের কারণ হয়েছি, কিন্তু সেটি আবার মিশে গেছে বন্ধুত্বের মায়াজালে। ফিস্টের আগের রাতে আলপনা দেয়া, রাত আড়াইটা পর্যন্ত লো-ডাউন ব্রিজে আড্ডা দেয়া, আমার আপুর বিয়েতে একসাথে মজা করা, এক সাথে ইফতার করা- এই অল্প কিছু দিনে খুব মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি। এর বাইরেও আলাদা আলাদা করে একে অপরের সাথে অনেক সুন্দর ও প্রাণবন্ত কিছু সময় কেটেছে আমাদের। বিখ্যাত সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’ বা হুমায়ূন আহমেদের ‘তারা তিনজন’ সিরিজের মতো না হলেও আমাদের তিনজনের বন্ধুত্বের গল্পটা কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত গল্প করার মতোই।
পাশাপাশি চলার তিন বছর পেরিয়ে এসে হঠাৎ করেই দূরত্ব বেড়ে যাওয়া কিংবা বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা ভর করছে জীবনের তাগিদেই। ক্যাম্পাস জীবন শেষে অজানা ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যের দিকে যাওয়ার চিন্তাগুলো আসা শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বন্ধুত্ব থেকে যাবে চিরকাল।
কারণ বন্ধুত্ব কখনো মাপা যায় না, নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িতও করা যায় না। বন্ধুত্বের উদ্যাপনের জন্য আলাদা করে কোনো দিবসের প্রয়োজন পড়ে না, বন্ধুত্বে কোনো কারণ লাগে না। এই সম্পর্ক আমৃত্যু বন্ধন। ভালো থেকো পৃথিবীর সব বন্ধু।