Naya Diganta

কেন মানুষ মানুষের জন্য?

কেন মানুষ মানুষের জন্য?

প্রথমত, এই নীতিতে মানুষই মানুষের শক্তি জোগায় ও ব্যাপারটি প্রকৃতিগতও বটে। প্রকৃতিতে দেখা যায়, দাতা দান করে আরো শক্তি সঞ্চয় করে আর গ্রহীতা বেঁচে থাকে দাতার দানের গুণে।

উদাহরণস্বরূপ, আমাদের শরীর কোষে প্রতিনিয়তই যে মেটাবলিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া চলছে, তার মাধ্যমে অনিবার্যভাবে তৈরি হয় ক্ষতিকর কিছু ফ্রি র‌্যাডিকাল স্পেসিস। ফ্রি র‌্যাডিকাল স্পেসিসকে নিউট্রাল করার জন্য শরীরেই তৈরি হয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টগুলো ফ্রি র‌্যাডিকাল স্পেসিসকে ইলেকট্রন দান করে নিউট্রাল না করলে শরীরের জন্য খারাপ পরিণতি বয়ে আনত। কিন্তু ন্যাচারাল প্রক্রিয়ার এই দানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নিজেরা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না অথচ শরীর বিরাট বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়।

সূর্য ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূর থেকে পৃথিবীবাসীকে প্রতিনিয়ত আলো ও তাপ দান করে সজীব রাখছে। আকাশ থেকে বর্ষিত বৃষ্টির ফোঁটা কাজে লাগিয়ে গাছপালা সূর্যালোক ও প্রকৃতিতে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ছেড়ে দেয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে তার খাবার তৈরি করে অক্সিজেন ছেড়ে দিচ্ছে। সে অক্সিজেন ব্যবহার করে আমরা প্রাণীরা বেঁচে আছি। কিন্তু সূর্য এত যে দান করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে তাতে সূর্যের এতটুকু শক্তিও কমে যাচ্ছে না। বরং আরো শক্তি সঞ্চয় করে আরো দান করতে প্রস্তুত হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, মানুষের জন্য কিছু করে কেউ গরিব ও অসম্মানিত হয়ে গেছে এমন উদাহরণ দুনিয়াতে নেই; বরং এ ক্ষেত্রে তার উল্টোটাই সত্য। বিশ্ব ধনী বিল গেটস চলতি বছরের ১৩ জুলাই ঘোষণা করেছেন, তার দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আরো দুই হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার অনুদান দেবেন। ফাউন্ডেশনের বার্ষিক কার্যক্রমকে আরো বাড়াতে তিনি এ অনুদান দেন। এরপর আরো সম্পদ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তিনি আর থাকতে চান না।

বিল গেটস বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, বিল গেটস বলেছেন, সমাজে তার সম্পদগুলো দান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে বিল গেটস তার সব সম্পদ দান করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তার সম্পদমূল্য ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সৌদি আরবের শিল্পোদ্যাক্তা ও বিলিয়নিয়ার শায়খ সোলায়মান বিন আবদুল আজিজ আল-রাজির সম্পদের পরিমাণ ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, ৫.৯ বিলিয়ন ডলার। তাকে বিশ্বের ১৬৯তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো।

২০১০ সালে সোলায়মান আল-রাজি তার বিশাল সম্পদের অর্ধেক ওয়াক্ফ করে দেন। সেই ওয়াক্ফ করা সম্পদের বর্তমান মূল্য ৬০ বিলিয়ন রিয়ালের বেশি। জানা গেছে, এত সম্পদ বিলি করার পর থেকে তার সম্পদের পরিমাণ আরো অনেক বেড়ে গেছে।

কেন এই পথ বেছে নিলেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর এবং আমরা কেবল তারাই যাদের (আল্লাহর) তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু কারণ ছিল যা আমাকে সম্পদ বণ্টন করতে প্রণোদিত করেছিল এবং এর ফলে এই পুণ্য সম্পাদিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার সন্তানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা।’

মানুষ ও অন্য অনেক প্রাণীই সামাজিক জীব। কোনো মানুষই জীবন চলার পথে একা চলতে পারে না। জগৎ সংসারে তাকেও সবার সাথে মিলেমিশে চলতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, সব কিছু একা করার যোগ্যতা বা শক্তি তিনি আমাদের দেননি। একজনকে যেটি দিয়েছেন অন্যজনকে সেটি দেননি। তাই জীবনে চলার পথে আমরা পরস্পর একে অন্যের মুখাপেক্ষী। যদি আমি বলি, পুরো ঢাকা শহর আপনাকে লিখে দেবো আপনি তো খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। কিন্তু পরক্ষণেই যদি বলি, আপনাকে ঢাকা শহর লিখে দেবো ঠিকই; কিন্তু লিখে দেয়ার পর আপনি ছাড়া এই শহরে কেউ থাকবে না। আপনি তখন ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবেন। তার মানে মানুষ মানুষের জন্য, মানুষের জন্যই মানুষের মূল্য, মানুষের জন্যই মানুষের মর্যাদা।

যারা অঢেল অর্থসম্পদের মালিক, তারা যেমন অসহায় ও অসচ্ছলদের সহযোগিতা করে থাকেন, ঠিক এর উল্টো, অসহায়দের সহযোগিতা ছাড়াও ধনীরা একটি দিন পার করতে পারে না।

তৃতীয়ত, মানুষ নানাভাবে সুখ জিনিসটি পেতে চায়; কিন্তু ভুল দর্শনে এই সুখের সন্ধান মানুষকে অন্ধ ও বোকা করে ফেলতে পারে। কেউ হয়তো অবৈধ পথে অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে সাময়িক বাহ্যিক সুখ পেলেও তার এই সুখ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। আর বৈধ পথে অপেক্ষাকৃত কম অর্থ-সম্পদ উপার্জন করে যখন মানবতার কল্যাণে তা ব্যয় করে তখন সে সুখ হয় অফুরন্ত। এই পন্থায় দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই খুশি। অবৈধ পথে সম্পদ অর্জনকারী নিজেই সাময়িক সময়ের জন্য সুখ পেতে পারে; কিন্তু অন্যের হক নষ্ট করে অবৈধ আয়ের কারণে সুখ স্থায়ী হয় না। এ ব্যাপারে হজরত আলী রা:-এর একটি কথা প্রণিধানযোগ্য।

‘মানুষ বড়ই আশ্চর্যজনক ও বোকা। সে সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য হারায়। তারপর আবার স্বাস্থ্য ফিরে পেতে সম্পদ নষ্ট করে। সে বর্তমানকে ধ্বংস করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আবার ভবিষ্যতে কাঁদে অতীতের কথা স্মরণ করে। সে এমনভাবে জীবন অতিবাহিত করে যে, সে কখনো মরবে না; কিন্তু সে এমনভাবেই মরে যেন সে কখনো জন্মায়ইনি।’

চতুর্থত, অন্যকে সহায়তা করা নিজের মর্যাদাকে জাগিয়ে তোলার একটি ভালো প্রচেষ্টা। তা ছাড়া নিজের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতা লজ্জাজনক, অথচ দুস্থ মানুষের জন্য অন্যের কাছে হাত পাতা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। কিছুদিন আগের পত্রিকান্তরে প্রকাশ, নোয়াখালীর একটি গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে সমাজের ধনী এবং গণ্যমান্য লোকেরা একসাথে বসেও কোনো জমিদাতা পাচ্ছিলেন না। তখন মাইকে ঘোষণা করা হলো- গ্রামের কেউ কলেজের ভ‚মিদাতা হতে রাজি কি না। একজন রিকশাচালকই ৪০ বছরের সঞ্চয় দিয়ে কেনা এক একর জায়গা দান করে সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ জমি দানের মাধ্যমে তিনি যেমন সম্মানিত হয়েছেন, তেমনি তার পরবর্তী বংশধারাও যুগ যুগ ধরে সম্মানিত হতে থাকবে।

‘যে ব্যক্তি অন্যের কল্যাণের ইচ্ছা পোষণ করে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের কল্যাণই নিশ্চিত করে’ (চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস)। দান-খয়রাত ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে পরস্পরের সেতুবন্ধন তৈরি হয়, প্রাচীরের বাধা ভেঙে খান খান হয়ে যায়। সেতুর বদলে প্রাচীর রচনা করে নিঃসঙ্গ হলে অভিযোগ করার অধিকারও সে হারায়।

পঞ্চমত, রেখে যাওয়া সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও অধিক কল্যাণের নিশ্চয়তা দেয় কেবল দান করা সম্পদ। প্রকৃতপক্ষে আমরা সারা জীবনে যা আয় করি তার খুব কম অংশই ভোগ করার সুযোগ পাই। যা আমরা ভোগ করি তার বেশির ভাগই অপচয় করে ভোগ করি। সম্পদের বেশির ভাগ অংশই উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যাই। আবার উত্তরাধিকারীরাও খুব সামান্যই ভোগ করার সুযোগ নিয়ে বাকি বিশাল অংশ পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। যা ভোগ করে তার বেশির ভাগই অপচয় কিংবা নষ্ট করে ভোগ করে। আর যদি উত্তরাধিকারীরা মানুষের মতো মানুষ না হয়, তাহলে তারা সমস্ত সম্পদ অপচয় কিংবা নষ্ট করে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়। উত্তরাধিকার সম্পত্তি পরবর্তী বংশধরদের কাজে লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে। কিন্তু আপনার সম্পত্তির একটি অংশ যদি মানুষকে দান করে দুনিয়া থেকে বিদায় হতে পারেন তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত এর সওয়াব পেতে থাকবেন।

যাদের অর্থ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেশি আছে তাদের জন্য উত্তম পলিসি হলো, অধিকসংখ্যক সৎ ও যোগ্য সন্তান রেখে যাওয়া। সম্পদের পেছনে যত সময় আমরা দেই, তার চেয়ে বেশি সময় দেয়া উচিত সন্তান মানুষ করার পেছনে। সম্পদের ভালো একটি অংশ সন্তানকে সৎ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে ব্যয় করা উচিত। নিজের মিনিমাম চাহিদা পূরণের পর প্রত্যেকেরই উচিত বাকি সম্পদ সদকায়ে জারিয়া হিসেবে দান করে যাওয়া। অসৎ সন্তান আর অবৈধ সম্পদ মূলত অবনতি আর অবক্ষয়ের উপকরণ।

দান বা সহযোগিতার উত্তম খাত কোনটি?
রাসূল সা: বলেছেন, ‘দু’টি জিনিস মানুষের উন্নতির উপকরণ। একটি ‘উত্তম সন্তান’, অন্যটি সদকায়ে জারিয়া। ‘যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ছাড়া- সদকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস-১৬৩১)

‘একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে তা হলো- যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে দেয়, অথবা মুসাফিরের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করে, অথবা খাল-নদী খনন করে দেয় অথবা জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য সম্পদ থেকে সদকা করে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-২৪২)

আমাদের দেশে উত্তম দানের আরেকটি বড় খাত হলো- দুস্থ রোগীর সুস্থ হাসির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করা। যেমন- বর্তমানে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডি যা উপরোক্ত দু’টি রোগ, এমনকি ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস ওষুধ ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ক্যান্সারও প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসায় ভালো হয়; কিন্তু পাঁচ বছর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি তিনজনে একজন এবং ১০ বছর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একজন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে (সিকেডি) আক্রান্ত হয়ে যান। সিকেডি মানে দু’টি কিডনিই আস্তে আস্তে স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যাওয়া। তবে একবার বিকল প্রক্রিয়া শুরু হলে তা ওষুধ বা অন্য কোনো উপায়ে ড্যামেজ প্রক্রিয়া থামানো যায় না। রোগীকে শেষ পর্যন্ত ডায়ালাইসিস কিংবা ট্রান্সপ্লান্ট করে বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্ট বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও আজীবন চিকিৎসা বিধায় কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসতে সাহস করে না। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ কেরানীগঞ্জে চার শ’ শতাংশ জায়গার উপর এই হতভাগ্য সুবিধাবঞ্চিত রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি ‘সিজেডএম কিডনি ডায়ালাইসিস অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার-কেডিটিসি’ স্থাপনের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসেই কেরানীগঞ্জের শ্যামল বাংলা রিসোর্টে ১০০ জন সিকেডি রোগীর ফ্রি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করছে। যেকোনো দানশীল ব্যক্তির জন্য জাকাত বা সদকার এটি একটি অতি উত্তম খাত।

অন্যের উপকারে থাকা ব্যক্তিই সমাজের সর্বোত্তম : আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজেকে অন্যের উপকারে নিয়োজিত রাখতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একজন মহামানবও ছিলেন না যিনি পরোপকারী ছিলেন না। মানুষের উপকার করলে মর্যাদা বেড়ে যায়, নিজে সর্বদা বিপদমুক্ত থাকা যায়, মানুষের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং অহঙ্কার কমে যায়। এ কথা অনস্বীকার্য, কেউ যদি এই দুনিয়াতে স্মরণীয়-বরণীয় ও একই সাথে আখিরাতে প্রকৃত কল্যাণ পেতে চায়, তাহলে সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো, মানুষের উপকারে নিজেকে উৎসর্গ করা। একজন হাজী মোহাম্মদ মোহসিন জগদ্বিখ্যাত হয়েছেন কেবল দান করে। তার ওই সমসাময়িককালে তার চেয়ে ধনী লোকের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। তাদের কারো নাম আমরা কেউ জানি না। কিন্তু হাজী মোহাম্মদ মোহসিন ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যে ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (সূরা হাদিদ-১৮) ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বুখারি, মুসলিম)

পরোপকার আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা : ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সূরা মায়েদা)

‘আর যাদের ধনসম্পদে রয়েছে নির্ধারিত হক, যাঞ্ঝাকারী ও বঞ্চিতের’ (সূরা আল-মাআরিজ : ২৪-২৫)। তাই সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। বিত্তবানদের সম্পদ মানুষের জন্য খরচ না করে তা জমিয়ে রাখা বা খরচে কৃপণতা করা, আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদের অপচয় করা এবং অসহায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করাও এক ধরনের জুলুম। এ ধরনের চরিত্রের লোকদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কঠোর হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারিত হয়েছে- ‘যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয়; আর গোপন করে তা, যা আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন। আর আমি প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আজাব।’ (সূরা নিসা-৩৭)

কারো অধিক সম্পদ হওয়াকে আল্লাহ পরীক্ষা হিসেবেই দেখতে চান : ‘আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর; বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল করো সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮০)

প্রাণের বৈশিষ্ট্যে মানুষ ও জীবজন্তু প্রায় অভিন্ন। মানুষ বুদ্ধিমান জীব বলে অন্য সব জীবজন্তু একেবারে বুদ্ধিহীন নয়; বরং বুদ্ধির সাথে বিবেক ও আপন চাহিদার সাথে মানবিকতার সংশ্লেষই অন্য সব জীবজন্তুর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। আর মানুষের মধ্যে সম্মানের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হলে মানুষকে সহযোগিতার বিকল্প নেই।

পরোপকার হলো, মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলঙ্কার : মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও মন্দ কাজে বাধা দেবে’ (সূরা-৩, আলে-ইমরান, আয়াত-১১০)। এ বিষয়ে বিশ্বনবী সা: বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি-১৮৪৭)।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুমিন, মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মু’জামুল আওসাত-৫৭৮৭)।

গোটা বিশ্ব ও আল্লাহর সৃষ্ট সব কিছুই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত : রাসুলে কারিম সা: বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। একটি পরিবারে মা-বাবা, ভাইবোন সবাই মিলে পারস্পরিক সহযোগিতায় চলতে হয়। আর গোটা সৃষ্টি পরিবার বলতে আল্লাহর রাসূল সা: বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও সব ধরনের সৃষ্টি যাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের জীবন চলে না তাদের সবাইকেই বুঝিয়েছেন।

ইসলাম পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণীভেদ করেনি। ইসলাম বরং বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলে।

পরোপকারে সরাসরি আল্লাহর সাহায্য লাভ সহজ হয় : প্রিয় নবীজী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সঙ্কটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম-২৬৯৯)

সমাজবদ্ধ মানুষ এককভাবে বেঁচে থাকা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। তাই সমাজের প্রতিটি সদস্যই পরনির্ভরশীল।

কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়?
প্রথমত, সরাসরি পরোপকার করে, যেমন মানুষের যেকোনো বিপদে, দুঃখে-কষ্টে আর্থিক, শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সহমর্মী হয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা।

দ্বিতীয়ত, মানুষের জন্য সবসময়ই কল্যাণ কামনা করা। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘কল্যাণ কামনাই প্রকৃত দ্বীন’। এর মানে হলো- একজন মানুষ সবসময়ই অন্য মানুষের ভালো হোক, এটি কামনা করবে। এটি এ জন্য যে, আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মানুষের উপকার করতে পারবেন না যতক্ষণ না তাকে ভালোবাসবেন এবং তার কল্যাণ কামনা করবেন।

ব্যক্তি বা মানব সমাজকে দুষ্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করেও মানুষের প্রভ‚ত উপকার করা যায় এবং এ ধরনের উপকারের কল্যাণ ও সওয়াব অনেক বেশি। তাই সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি ও অপকর্ম বন্ধ এবং সমাধানের নিয়তে কাজ করার চেষ্টা করাও হলো পরোপকার।

সহযোগিতা ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ব্যক্তিগত ও বিচ্ছিন্নভাবে উপকারের চেয়ে পরিকল্পিত সামাজিক ও সদকায়ে জারিয়া ধরনের উপকার উত্তম। সামাজিক উপকার যেমন- মাদকমুক্ত সমাজ গড়া, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করা।

যৌতুকমুক্ত সমাজ গড়া। যৌতুক দেয়া ও নেয়ার কুফল সম্পর্কে অন্যকে সচেতন করতে কাজ করা। এসিড সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়া। এটি মারাত্মক অপরাধ- তা মানুষকে জানানো। ধর্ষণমুক্ত সমাজ উপহার দিতে কাজ করা। ধর্ষণ ঠেকাতে যথাযথ কাজ করা। স্বাস্থ্যবান সমাজ গঠনে ভ‚মিকা রাখা। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করা, সব ধরনের চিকিৎসায় সার্বিক সহযোগিতা করা। ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সমাজকে গড়ে তোলা। যেকোনো সামাজিক নির্যাতন রোধে কাজ করা। রাষ্ট্রীয় উপকার, মানে ভালো প্রশাসন, দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন ধরনের ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

দান-সদকাহ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি বড় ও উত্তম সুযোগ। ইসলামে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাটাগরির দান-সদকাহ আছে। যেমন- বছরে একবার নির্দিষ্ট পরিমাণ মালামাল, অর্থ-সম্পদ, ফসল, ব্যবসার উদ্দেশ্য গৃহপালিত পশু পালন ইত্যাদির ওপর জাকাত বা উশর ফরজ হিসেবেই আদায় করতে হয়। সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হিসেবে আদায় করতে হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য যেকোনো পরিমাণ দান যা মানুষের কল্যাণে ব্যয়িত হয় যার অফুরন্ত কল্যাণের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- তা সবই নফল বা সুন্নত পর্যায়ে পড়ে।

দান-সদকাহ আল্লাহর কুরআনের দৃষ্টিতে উত্তম ঋণ যা তার বান্দার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আল কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা- উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (সূরা-৫৭ হাদিদ, আয়াত-১১)

‘আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে, এর বিনিময়ে।’ (সূরা-৯ তাওবা, আয়াত-১১১)। ‘নিশ্চয়ই দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যে ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (সূরা-৫৭, হাদিদ, আয়াত-১৮)

কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সঙ্কীর্ণ ও প্রসারিত করেন এবং তারই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।’ (সূরা বাকারাহ-২৪৫)

সদকা বা সাহায্যের ধরণ : হাদিস শরিফে আছে, নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমার ভাইয়ের চেহারায় তাকিয়ে মুচকি হাসাও তোমার জন্য একটি সদকা। সৎকাজের জন্য আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখাও সদকা। পথ হারানো কাউকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়াটাও তোমার জন্য সদকা। দৃষ্টিশক্তি দুর্বল- এমন কাউকে সহযোগিতা করাও তোমার জন্য সদকা। রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা আর হাড্ডি সরিয়ে দেয়াও তোমার জন্য সদকা। ভাইয়ের বালতিতে তোমার বালতি থেকে একটু পানি ঢেলে দেয়াও তোমার জন্য সদকা।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস-১৯৫৬)

বিনিময় কামনামুক্ত ও শর্তহীন দানই গ্রহণযোগ্য দান হিসেবে স্বীকৃত : ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর তারা যা ব্যয় করেছে, তার পেছনে খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের কাছ থেকে তাদের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই, আর তারা চিন্তিত হবে না।’ (সূরা বাকারাহ-২৬২)

উত্তম কথা বলা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা সে দানের চেয়ে শ্রেয়, যে দানে আসে কষ্ট। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।’ (সূরা বাকারাহ-২৬৩) ‘অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার সৌভাগ্যের উৎস আর তাদের সাথে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যের উৎস। ’ (আবু দাউদ)

‘তোমার সাথে যে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তুমি তাকে দান করো আর যে তোমার ওপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করো।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস-১৭৪৫২)

দানের চেয়ে অধিক পাওয়ার আশায় দান করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘অধিক পাওয়ার আশায় তুমি দান করো না’। (সূরা মুদ্দাছছির-৬)

দান মানুষের মধ্যে ভালোবাসার সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে : তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া দাও, এতে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ (বুখারি, হাদিস-৫৯৪)

আবার অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘কেউ যদি তোমাকে কিছু দেয়, সম্ভব হলে তুমিও তাকে কিছু দাও, তা যদি না পারো, তাহলে তার প্রশংসা করো। আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘তার জন্যে দোয়া করার কথা।

আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘জীবনের আসল মানেটা তখনই ফুটে উঠে যখন আপনি অন্যের উপকার করার মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পান।’ প্রকৃতপক্ষে অন্যের উপকারের মধ্যেই আমাদের নিজেদের উপকারটি নিহিত। আমরা যদি কাউকে উপকার করি, তবে তা একটি সার্কেল প্রদক্ষিণ করে আমাদের কাছেই ফিরে আসে।

বেশি মানুষের হৃদয়ে বেশি সময়ের জন্য বাঁচতে চাইলেও এই দান-খয়রাতই হলো সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর ব্যবস্থা। একজনকে সাহায্য করলে হয়তো দুনিয়া বদলে যাবে না, তবে ওই একজনের দুনিয়া বদলে যাওয়ার কারণে আপনিও নিশ্চিত বদলে যাবেন। আমাদের সাহায্য হতে হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে। এ জন্যই মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, ‘মানুষ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না জেনেও তাকে সাহায্য করার নামই হচ্ছে মানবতা’। যে ব্যক্তি বিধবা, গরিব, অভাবী ও অসহায়দের সাহায্যের জন্য চেষ্টা-তদবির করে, সে আল্লাহর পথে ব্যস্ত ব্যক্তির সমতুল্য’ (আল হাদিস)। সহিহ মুসলিম শরিফে উল্লেখ আছে- ‘আল্লাহ তায়ালা বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (মুসলিম-২৩১৪)

অন্যকে সহায়তা করা মানুষের মর্যাদাকে জাগিয়ে তোলার একটি ভালো প্রচেষ্টা। মানুষকে সাহায্যের জন্য বিত্তের চেয়ে চিত্তের প্রয়োজন বেশি।

লেখক : স্বাস্থ্য-বিষয়ক নিবন্ধকার ও কলামিস্ট