Naya Diganta

মা আমার ফুটবলটা কেটে ফেলেছিলেন : কৃষ্ণা রানী

কৃষ্ণা রানী

বাংলাদেশের প্রথম সফল মহিলা অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বেই লাল-সবুজ মেয়েদের প্রথম এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। কৃষ্ণা এখন সিনিয়র সদস্য। আর বাংলাদেশ সিনিয়র মহিলা দলের নেতৃত্ব এখন সাবিনা খাতুনের হাতে। এবারের সাফে সাবিনাকে সফল অধিনায়কে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কৃষ্ণার। ফাইনালে কৃষ্ণার করা জোড়া গোলেই নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সাফ শিরোপা জয় সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনেক গোল আছে কৃষ্ণার। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় ফাইনালে করা গোল দুটি। অথচ এই কৃষ্ণাকেও অন্য মহিলা ফুটবলারদের মতো নানা বাধা পেরিয়ে ফুটবলে আসতে হয়েছে। কৃষ্ণার মা তো একবার তার ফুটবলটাই কেটে ফেলেছিলেন। যেতে দিতেন না ফুটবল খেলতে। সে কষ্টটা আজো তাড়িয়ে বেড়ায় এই স্ট্রাইকারকে। জানালেন তিনি।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের উত্তর পাথালিয়া গ্রামের মেয়ে কৃষ্ণা রানী। ২০১১ সালে ৩৬ নম্বর উত্তর পাথালিয়া সরকারী বিদ্যালয় থেকে বঙ্গমাতা আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবলে খেলার মাধ্যমে তার ফুটবলে আসা। পরে সূতী ভি এম পাইলট স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক জাতীয় দলের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের ভাই গোলাম রায়হান বাপন ও প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফের কল্যাণে সেই স্কুলে ভর্তি হওয়া। ফ্রি- ছিল তার লেখাপড়া। এখনও এই দুই শিক্ষকের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করেন তিনি। এবার সাফ শিরোপা জয়ের পরপরই কোচ বাপনের সাথেও কথা বলেন।

কাঠমান্ডু সাফে নেপালের বিপক্ষে দুই ছাড়াও গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে এবং সেমিতে ভুটানের বিপক্ষে একটি গোল ছিল কৃষ্ণার। তবে সেরা মনে করছেন নেপালের বিপক্ষে করা দ্বিতীয় গোলটিকে। কারণ ওই গোলেই যে শিরোপা নিশ্চিত হয়। খেলাও আর মাত্র ১৩ মিনিট বাকি ছিল।

নানা বাধা পেরিয়েই মহিলা ফুটবলে আসা কৃষ্ণাদের। একবার তো কৃষ্ণার মা তার ফুটবলটাই কেটে ফেলেন। কৃষ্ণা জানান, ‘নানান বাধা ছিল তখন মেয়েদের ফুটবল খেলতে। এলাকাবাসী নানা কথা বলত। এসব কারনে মা আমাকে ফুটবলে খেলতে দিতে চাইতেন না। একদিন আমার ফুটবলটাই কেটে ফেলেন। এছাড়া অনেক সময় খেলতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে টাকা পেতাম না। এতো সাফল্যের মধ্যে এই কষ্টগুলো এখনও মনে পড়ে।’ তার মা এখন অবশ্য মেয়ের অর্জনে দারুণ খুশি। ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় ছিলেন কৃষ্ণা।এছাড়া খেলেছেন ভারতীয় লিগের দল সেতু এফসিতে। লক্ষ্য ফের বিদেশী লিগে খেলা।

কৃষ্ণা, সাবিনা ও স্বপ্না বাংলাদেশের আক্রমণভাগের ত্রয়ী জুটি। এর পরই আছেন ছোট শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন ও মারজিয়া। এদের মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ফরোয়ার্ড লাইনের এই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বতাকে বেশ উপভোগই করছেন কৃষ্ণা। জানান, ‘এই লড়াই থাকাটা আমাদের জন্য খুব ভালো।’

অবশ্য ফাইনালে অল্প সময় পরেই আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন স্ট্রাইকার স্বপ্না। কৃষ্ণার মতে, স্বপ্নার ওই অভাব বুঝতেই দেননি ছোট শামসুন্নাহার। লিড নেয়া গোল ছাড়া দারুণ খেলেছিলেন তিনি। এই স্ট্রাইকারের লক্ষ্য, সাফের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা এবং পরবর্তীতে আসিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে ম্যাচ খেলে সেখানেই জয়ের মধ্যে থেকে এশিয়ান কাপেও ভালো করা।

সাফের ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর অন্যদের মতো আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন কৃষ্ণাও। জানান, ‘আমাদের খুব ভালো লেগেছিল ট্রফি জয়ের পর। তবে বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমরা যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আসলে পুরো টিম ওয়ার্কের ফলেই এই সাফল্য। তাছাড়া মা-বাবা-কাকা-প্রতিবেশী দেশবাসীসহ কোচদের অবদানের আজ আমরা সাফের সেরা।’