Naya Diganta

নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীদের টর্চার সেল আবিষ্কার : আটক ৩

নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীদের টর্চার সেল আবিষ্কার : আটক ৩

ভোরে কিংবা গভীর রাতে চক্রটি ওঁৎ পেতে থাকে সড়কের আশপাশেই। রিকশা বা অটো রিকশায় কোনো যাত্রীকে দেখলেই কৌশলে থামিয়ে অস্ত্র ঠেকায়। সাথে থাকা মোবাইলফোন কিংবা টাকা যা আছে লুটে নেয়। তবে কদাচিৎ কিছু না পেলে অপহরণ করে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার মাসদাইরের ছোট কবরস্থান এলাকার একটি বাসায়। সেই বাসায় অপহরণকারীকে আটকে হাত পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। মুখে স্ক্রচটেপ লাগিয়ে মারধরের সেই ভিডিও পাঠানো হয় অপহৃত ব্যক্তির পরিবার কিংবা স্বজনদের কাছে।

ভয়াবহ নির্যাতনের সেই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণ বাবদ হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। টাকা না পাঠানো পর্যন্ত চলে নির্যাতন। হোয়াটসআপ বা ইমুতে সেটা সরাসরি দেখানো হয় বিপরীতে থাকা স্বজনদের। হুমকি দেয়া হয় পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলবে।

এমনই এক ছিনতাইয়ের শিকার হন ডিবির এক কনস্টেবল। সেই সূত্র ধরে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবির একটি টিম। ওই সময়ে গ্রেফতারকৃত মূল হোতার মোবাইলে মিলেছে নির্যাতনের সেইসব ভয়াবহ কিছু চিত্র।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ‘ক’ জোনে কর্মরত তুষার মোল্লা নামের এক কনস্টেবলকে যাত্রাপথে আটকিয়ে মোবাইলফোন ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে ফতুল্লার মাসদাইর কবরস্থানের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতারা করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো মাসদাইর জামালের গ্যারেজের এলাকার মো: ফারুকের ছেলে মো: পারভেজ (২৫), মাসদাইর ছোট কবরস্থান এলাকার মৃত সেকান্দরের ছেলে রাজু (২৬) ও পশ্চিম মাসদাইর পাকাপুল এলাকার জামালের ছেলে রাকিব হোসেন বিজয় (২১)। তাদের নামে মঙ্গলবার ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে তুষার মোল্লা উল্লেখ করেন, রাতের ডিউটি শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় তুষার মোল্লা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা কার্যালয় থেকে অটোরিকশা করে ফতুল্লা পুলিশ লাইনে যাচ্ছিলেন। রিকশায় মাসদাইরে পৌঁছানোর পরে আসামিরা চাপাতি, ছুরি, রামদা ও হাতুরিসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার রিকসা গতিরোধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাথে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলে অন্যথায় তাকে কুপিয়ে মেরে মেলার হুমকি দেয়। পরে তিনি আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা কার্যালয়ে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন। সেই সাথে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ফতুল্লার মাসদাইরে ছোট কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে পারভেজের ভাড়াকৃত একটি কক্ষ থেকে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। তার কোমরের পেছনে গোজা অবস্থায় স্টিলের চাপাতি, আইফোন, দ্বিতীয় আসামি রাজুর ডান হাত থেকে লোহার চাপাতি, রাকিব হোসেন বিজয়েরর কাছ থেকে মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

পরে তারা স্বীকার করেছে যে, মাসদাইর কবরস্থান এলাকাতে সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে তারা রিকশা অটোরিকশা ও যানবাহন থামিয়ে ব্যক্তিদের আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়।