Naya Diganta
ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ

তারপরও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেই

ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ

সরকারি সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন চর দখলের মতো আয়ত্তে নিয়ে ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য করছে, এমনকি মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছাত্রদের জিম্মি করার মতো আরো বহু অপরাধ করছে অবাধে। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আবার নিজেরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এতে প্রাণহানি ঘটছে ও শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়ত। ছাত্ররাজনীতির নামে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ ফিরিস্তি সবার জানা। সম্প্রতি দেশের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ইডেন মহিলা কলেজে সংগঠনটির নেত্রীদের অপকর্মের ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ছাত্রসংগঠনের নামে তারা বিশাল এ প্রতিষ্ঠানটিকে দীর্ঘ দিন পুরোপুরি কব্জা করে রেখে শিক্ষার পরিবেশ দূষিত করেছে। ছাত্রনেত্রীরা এমন সব জঘন্য অপকর্মের সাথে লিপ্ত হতে পারেন, তা অবিশ্বাস্য।
ইডেন কলেজেও ছাত্রলীগ স্বার্থের দ্বন্দ্বে বহুধাবিভক্ত। আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে এক দল অপর দলের ওপর হামলা করেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট নিজেদের দলের অপর অংশের হামলার মুখে ধরাশায়ী হয়েছে। নেত্রীদের একটি বড় গ্রুপ এ সিন্ডিকেটের অপকর্ম ফাঁস করে দিয়েছে। তাতে জানা যাচ্ছে- ক্যান্টিন, ইন্টারনেটসেবা ও মুদি দোকান থেকে চাঁদাবাজি করে তারা। তবে একটি বড় আয় আসে সিট বাণিজ্য থেকে। একজন ছাত্রীকে আট থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে হলে তোলেন তারা। কলেজের ছয়টি ছাত্রীনিবাসে তিন হাজার আসন থাকলেও সেখানে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। এর সামান্য একটি অংশ প্রশাসনের অধীনে রয়েছে, বাকিটা তারা নিয়ন্ত্রণ করে। চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্যের চেয়েও ভয়াবহ যে খবরটি তাদের সংঘর্ষের সূত্রে ফাঁস হয়ে গেল সেটি হচ্ছে- ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো। এ ক্ষেত্রে তারা সুন্দরী মেয়েদের জিম্মি করে তা করতে বাধ্য করে। নিয়ন্ত্রণকারী চক্রের সদস্যরা টার্গেট করে মেয়েদের ছবি তুলে রাখে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও ব্যক্তিদের কাছে তাদের পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে কাজ আদায় হয় বলেও একপক্ষ অভিযোগ করছে। ছাত্রীদের মধ্যে যারা কথামতো কাজ করে না, তাদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়। আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের এ কাজে বাধ্য করা হয়। কখনো ফাঁদে ফেলে ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিও করা হয়।
এসব অভিযোগ ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপ প্রকাশ্যে আনার পর এখন সাধারণ ছাত্রীরাও মুখ খুলছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- স্বাধীন একটি দেশে ছাত্রীদের এভাবে একটি চক্রের কাছে বছরের পর বছর জিম্মি হয়ে থাকার পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ দেখা যায় না। এ কেলেঙ্কারির পর ইডেনের অধ্যক্ষ নিজেকে সংবাদমাধ্যম থেকে আড়াল করে রেখেছেন। তিনি প্রকাশ্যে কোনো কিছু বলছেন না। এর আগেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ নিজেদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস ও এখতিয়ার রাখেন না। তারা ছাত্রলীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে তা ‘ফায়সালা’ করার চেষ্টা করেন। ইডেন ছাত্রলীগ সভানেত্রীর কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছিল। তাতে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের প্রমাণ হাজির থাকলেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ছাত্রলীগ সাধারণত নেতাদের পদ-পদবি স্থগিত করে। এ ধরনের ব্যবস্থা মূলত প্রদর্শন ছাড়া অন্য কিছু নয়। কারণ পরিস্থিতি সামলে গেলে অপরাধীরা আবার অন্যায় অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এবারো ছাত্রলীগ ইডেনে দলটির ২৫ জনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে তারাও রয়েছে যারা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর আগেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগ এখন কি তাহলে দুষ্টের লালন করছে?
কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নিয়ম হচ্ছে, তদন্ত করা। অপরাধের সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে বিষয়টি আমরা যেন ভুলে গেছি। ছাত্রলীগও দায়মুক্তি ভোগ করছে। এর ফলে শিক্ষাঙ্গনগুলো এখন অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে যেন জাতির নিস্তারের কোনো পথ নেই।