Naya Diganta

বরগুনার হৃদয় হত্যা মামলা : রক্তমাখা পাঞ্জাবি দেখিয়ে হত্যাকাণ্ডের বর্ননা মায়ের

বরগুনায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন বিকেলে প্রকাশ্যে হৃদয়কে হত্যা করা হয়।

বরগুনায় চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনেও বরগুনা শিশু আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম।

মঙ্গলবার দুপুরে শিশু আদালতের বিচারক ও জেলা জজ মো: হাফিজুর রহমান বাদি সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। জব্দকৃত হৃদয়ের রক্তমাখা পাঞ্জাবি আদালতে দেখান হৃদয়ের মা। এ সময় ইউনুস কাজিসহ ১৮ জন কিশোর অপরাধী আদালতে উপস্থিত ছিল। কিশোর অপরাধী সজিব ডেঙ্গু-জ্বরে আক্রান্ত থাকায় অনুপস্থিত।

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘২০২০ সালে আমার ছেলে ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে বরগুনা সদর উপজেলার গোলবুনিয়া পায়রা নদীর তীরে চায়না প্রজেক্টের ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে যায়। হৃদয়ের ভাগিনী প্রাপ্তি হৃদয়কে দূর থেকে মামা বলে ডাক দেয়। এ সময় আসামি ইউনুস কাজি হৃদয় ও প্রাপ্তিকে নিয়ে নোংড়া ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। ইউনুস কাজি ও হৃদয়ের মধ্য ঝগড়াও হয়। একপর্যায়ে হৃদয় উত্তেজিত হয়ে ইউনুস কাজির গালে একটি থাপ্পড় দেয়। হৃদয় ইউনুস কাজিকে বলে আমি তোর চেয়ে বয়সে বড়। প্রাপ্তি আমার ভাগিনী হয়। প্রাপ্তি আমাকে মামা বলে ডাকে। আর কোনো দিন প্রাপ্তিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবি না। এরপর ইউনুস কাজিও হৃদয়কে শাসিয়ে যায়, তোকে আজকে মারব বলে। তুই আমার এলাকায় মেয়ে নিয়ে কেন ঘুরতে এসেছিস।’

তিনি বলেন, ইউনুস কাজি তার বন্ধু হুমায়ূনকে ফোন দিয়ে লোকজন নিয়ে আসতে বলে। একটু পরে ঘটনাস্থলে আসামিরা চলে আসে। নোমান গাজি হৃদয়ের পাঞ্জাবির কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। হৃদয় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে কতেক আসামি চারপাশে বেরিকেট দিয়ে রাখে। যাতে হৃদয় পালিয়ে যেতে না পারে।

হৃদয়ের মা বলেন, ‘আমার ছেলেকে আসামীরা লাঠি, রড ও ইট দিয়ে সমস্ত শরীরে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে। হৃদয়ের শরীরে হাত, পা ও মাথায় অসংখ্য আঘাতের ক্ষত। হৃদয়কে বাঁচানোর জন্য ওর বন্ধু ফেরদৌস, পাপ্পু, মাহতাব, মিঠু, সফিক ও সাব্বির এগিয়ে গেলে তাদেরকেও আসামিরা মারধর করে।’

হৃদয়ের মা আরো বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে যাই। হৃদয় আমাকে বলেছে ওই আসামিরা তাকে মারধর করেছে। পরের দিন হৃদয়কে নিয়ে আমি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। ওই দিন বিকেলে আমার ছেলের মত্যু হয়।’

হৃদয়ের মা রক্তমাখা পাঞ্জাবি আদালতে দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল। হত্যার তিন দিন পর হৃদয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়। হৃদয় জিপিএ-৫ পেয়েছিল।’

বুধবার সকাল ১০টায় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করবেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মো: নিজাম উদ্দিনসহ ছয়জন।

উল্লেখ্য, বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ১১ মাসের মধ্য ঈদুল ফিতরের দিন ২০২০ সালের ২৫ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার গোলবুনিয়া পায়রা নদীর তীরে চায়না প্রজেক্টের ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে গেলে হৃদয়ের বন্ধু কিশোর অপরাধী ইউনুস কাজির সাথে প্রাপ্তি নামের একটি মেয়েকে নিয়ে অহেতুক ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইউনুস কাজির সাথে অন্য কিশোর গ্যাং যুক্ত হয়ে হৃদয়কে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে। হৃদয়কে পিটানোর ভিডিও দৃশ্য দ্রুত সামাজিক
যোগাযোগে ভাইরাল হয়। এ মামলায় কিশোর অপরাধী ১৯ জন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ৯ জন।