Naya Diganta
সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নীতি

তিতাসে তার খণ্ডচিত্র

সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নীতি

দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি এখন অবাধ এবং প্রকাশ্যে সংঘটিত হচ্ছে। ফলে সেখানে নাগরিকদের সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। উৎকোচ ছাড়া মেলে না কাক্সিক্ষত সেবা। এ ক্ষেত্রে সরকারি গ্যাস বিপণন প্রতিষ্ঠান তিতাসে দুর্নীতি-অনিয়মে যেন রাখঢাক নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম ইত্যাদি সংস্থাটির নিয়মিত কর্মকাণ্ডের খণ্ডচিত্র। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে মৃত ব্যক্তি, বিদেশে থাকা, অবসরে যাওয়া কর্মীরাও নিরাপত্তা প্রহরীর পদে চাকরি করেছেন। এরকম ৩৭ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে, দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে চলছে। একটি পত্রিকাকে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি বিভাগকে আমি অনেকবার বলেছি নীতি মেনে পরামর্শক নিয়োগ করে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়ার জন্য। তারা তা করে না, কথাও শোনে না।’ দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তিতাস হলো আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি প্রতিষ্ঠান’।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ না করলেও তাদের অনেকের নামে নিয়মিত বেতনভাতা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবে টাকাও গেছে। বিধিবহির্ভূতভাবে কাজ করেছেন অনেকে। তবে বেতন পেয়েছেন ‘নগদে’। এমন ৩৭ জন প্রত্যেকে ৯০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ‘ঘুষ’ দিয়ে ‘নিরাপত্তা প্রহরী’ হিসেবে চাকরি পেয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, তিতাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কার্যালয়ে একজনকে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি পেতে হলে জীবনবৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যানের সনদ জমা দিতে হয়। নিরাপত্তা প্রহরী নেয়ার আগে পুলিশি যাচাই (ভেরিফিকেশন) প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।
এত বড় অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদন অনেক দিন ধামাচাপা দেয়া হয়। কমিটি গঠনের পর যারা ভিন্ন নামে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেছেন, তাদের কিছু দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। আর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তিতাসে জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কালোতালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।
নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ‘ভুয়া’ নিরাপত্তারক্ষীদের হাজিরা প্রত্যয়ন করে নিয়োগ শাখায় পাঠিয়েছেন। তারা হাজির ছিলেন কি না বা দায়িত্ব পালন করেছেন কি না তা যাচাই করার কোনো দরকার মনে করেননি, যা গুরুতর দায়িত্ব অবহেলার শামিল।
সিকিউরিটি কোম্পানি কর্মরত জনবলের বিপরীতে প্রতি মাসে যে বিল মানবসম্পদ বিভাগে দিয়েছে, তারা আসলে কাজ করেনি। চুক্তির বিভিন্ন ধারাও লঙ্ঘিত হয়েছে। এমন কাজ কোম্পানির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হলেও অবলীলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেবল অর্থের লোভে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করেছেন।
অথচ পুরো প্রক্রিয়ার সাথে অনেক কর্মকর্তার কাজের যোগসূত্র রয়েছে। জনবল প্রতিস্থাপন, নিরাপত্তা প্রহরীর নামে নিয়োজিত অন্য কর্মীকে বেতনভাতা প্রদান, নিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রত্যয়নের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা এই অপকর্ম ঘুণাক্ষরে জানতে পারেননি এমন মনে করার কারণ নেই। তিতাসের অনুমোদন ছাড়া কাউকে নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়।
পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এ কথা বলা যায়, মূলত তিতাস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে এমন জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণে বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করাই হচ্ছে এর প্রতিকার। কিন্তু দেশে সুশাসনের যে অবস্থা তাতে অনেক ঘটনার মতো তিতাসের এই কেলেঙ্কারিও চাপা পড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।