Naya Diganta

পৌরশহর হলেও চেহারা পাল্টায়নি কুয়াকাটার

কুয়াকাটা পৌর এলাকায় এখনো রয়েছে এমন বেহাল কাঁচা রাস্তা : নয়া দিগন্ত

দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পটুয়াখালীর কুয়াকাটাকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পৌরসভায় উন্নীত করা হলেও এর সুফল এখনো পাচ্ছেন না পৌরবাসী। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই গ্রামীণ অবকাঠামোই রয়ে গেছে অনেক স্থানে। ওয়ার্ডের অনেক জায়গায় স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে মাটি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করলেও চলাচলের জন্য কোথাও কোথাও এখনো ক্ষেতের আইলই ভরসা। এটি খ শ্রেণীর পৌরসভা। মেয়র-কাউন্সিলর আসেন, যান কিন্তু পরিবর্তন হয় না কোথাও। ৯টি ওয়ার্ডের অবকাঠামোর চিত্র এমনই।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভার বর্তমান আয়তন ১২.৭৫ বর্গকিলোমিটার। পৌর শহরে মোট রাস্তার পরিমাণ ৬০ কিলোমিটার। পাকা রাস্তা ২২ কিলোমিটার। কাঁচা রাস্তা ৩৮ কিলোমিটার। পর্যটন সুবিধা সম্প্রারণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে লতাচাপলী ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম এবং তিন হাজার ৪৬১ জন পুরুষ ও তিন হাজার ৩৪৩ জন নারী ভোটার নিয়ে ৩৪ নম্বর মৌজার ১১ শ’ দশমিক ৫৫ একর জমি নিয়ে কুয়াকাটা পৌরসভা গঠিত।
সম্প্রতি সরেজমিন দুর্গত এলাকা ঘুরে জানা যায়, মানুষের কষ্টের কথা। উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে ছিল কুয়াকাটার অবস্থান। ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা হলে সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। তবে কুয়াকাটা পৌরসভা গঠন করার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরসভায় অভ্যন্তরীণ সড়ক ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই কুয়াকাটা পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। কয়েক সপ্তাহের অবিরাম বর্ষণে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। বাড়ির উঠানে জমে থাকা পানি, কিংবা পৌর এলাকার নিচু জায়গার পানি অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। বাস থামানোর নির্ধারিত কোনো স্থান না থাকায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় বাসগুলো।
এ ছাড়া পৌর শহরে খালগুলো দখল-দূষণে অনেক স্থান যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে কুয়াকাটা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের ওয়ারকা পল্লীর পূর্ব পাশ থেকে ফাঁসিপাড়া গ্রাম পর্যন্ত সড়ক; ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইলিশ পার্ক থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পর্যন্ত সড়ক এবং মনির শরিফের বাড়ি থেকে কম্পিউটার সেন্টার পর্যন্ত সড়ক; ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলুল হক খানের বাড়ি থেকে গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত সড়ক; ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রশিদ মোল্লার বাড়ির সামনে থেকে শাহজাহান মৃধার বাড়ি পর্যন্ত সড়ক; ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পর্যটন পুলিশের কার্যালয় থেকে ফকিরবাড়ি পর্যন্ত সড়ক; ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মন্নান হাওলাদারের বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিকের পাঞ্জুপাড়া মসজিদ পর্যন্ত সড়ক; ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পাঞ্জুপাড়া গ্রাম থেকে লেকের পার হয়ে দোভাষীপাড়া গ্রামের নির্মাণাধীন সেতু পর্যন্ত সড়ক এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেনপাড়া গ্রাম থেকে মুসল্লিয়াবাদ মাদরাসার পশ্চিম পাশ পর্যন্ত সড়কটি পুরোপুরি কাঁচা পড়ে রয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে বছরে কুয়াকাটায় ১২-১৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটত। গত ২৫ জুলাই পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। গত এক মাসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক কুয়াকাটায় এসেছেন। কুয়াকাটার সাথে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় প্রতি বছরে কুয়াকাটায় ২২-২৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করবেন বলে তারা আশা করছেন।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, এখানে অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। প্রথম শ্রেণীর হোটেল রয়েছে ১০-১৫টির মতো। এসব হোটেল বহু আগে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেই এসব হোটেলে। কুয়াকাটা পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেনপাড়া ও মুসল্লিয়াবাদ গ্রামের মোশারেফ ও ফারুক বলেন, আমরা যে পৌরসভার বাসিন্দা, হেইয়াই তো মনে অয় না। বর্ষাকালে পুরা এলাকায় পানিতে ডুবে থাকে।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, অ্যাহনও মাডির রাস্তা দিয়াই আমাগো হাঁটতে হয়। বর্ষাকালে এই রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ অইয়া যায়। রাখাইন নারী লাচো মাতবর বলেন, আমাগো পাড়ায় ২৫টা ঘর আছে। পাড়ার মধ্যে চলাচলের কোনো ভালো রাস্তা নাই। বর্ষাকালে পুরা পাড়াই পানিতে ডুবে থাকে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো: আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পৌরসভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে। ২৬টি রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ শেষের পথে। আশা করি, এক বছর পর কুয়াকাটায় কোনো কাঁচা রাস্তা থাকবে না।