Naya Diganta

রানীনগরে নাজমুলের ফলের বাগান বেকারদের আশার আলো

রানীনগরের রঞ্জনিয়া গ্রামে নিজের ফলের বাগানে নাজমুল হক নাইস : নয়া দিগন্ত

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রঞ্জরিয়া গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হক নাইস (২৯) সাত বছর আগে ডিগ্রিতে পড়ালেখা চলাকালে মাত্র ১৬ শতক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলেছিলেন। শুরুতেই পরিবারের বাধা ও চরম অবহেলা উপেক্ষা করে ফলবাগান শুরু করে সাত বছরের ব্যবধানে এখন তার বাগান ৩০ বিঘা জমিতে। বাগানে ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা ড্রাগন, মালটা, কমলা, চায়না কমলা ও কদবেল যেন সফলতার সুবাস ছড়াচ্ছে। তার সফলতা দেখে এগিয়ে এসেছে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা।
নাজমুল হক রাইস জানান, এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকায় গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে ভর্তি হয়েছিলেন। সে সময় মাত্র তিন মাস পড়ালেখার পর স্থির করেন কোনো চাকরি করবেন না। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। পড়ালেখা চলাকালেই দীর্ঘমেয়াদি আয়ের জন্য ফলের বাগান গড়ে তোলার চিন্তা মাথায় আসে তার। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার ফলের বাগান ঘুরে দেখে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরপর বাড়িত এসে মাত্র ১৬ শতক জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান শুরু করেন। এক দিকে কলেজের পড়ালেখা, আরেক দিকে বাগানে পরিচর্যা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বাগান থেকে ভালো ফলন আসা শুরু করলে অনেকেই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। ফলে ওই বছরই আরো চার বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন পেয়ারার বাগান, কিন্তু বন্যার পানি এসে গাছের গোড়া ডুবে যাওয়ায় ভালো ফল হয়নি। ফলে পেয়ারার গাছ কেটে সেখানে কমলা ও ড্রাগন ফল চাষের পরিধি বিস্তার করেন।
নাজমুল হক বলছেন, ডিগ্রি পাস করার পর পুরোপুরি বাগানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ধীরে ধীরে গড়ে তোলা ফল বাগান গত সাত বছরের ব্যবধানে এখন ৩০ বিঘা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল আরো ১৫ বিঘা জমিতে মাল্টা,কমলা, চায়না কমলা ও কদবেল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ জমি নিজ নিয়ে বাগান গড়ে তুলেছেন। ইতোমধ্যে বাগানে প্রতিটি গাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় ফলগুলো ঝুলছে। রানীনগর-আবাদপুকুর সড়ক সংলগ্ন রঞ্জুনিয়ার মোড় এলাকা স্থানে গড়ে তোলা বাগান দেখতে লোকজন প্রতিনিয়ত ছুটে আসে। অনেকেই নাইসের নিকট থেকে বাগান করার অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন। আবার কেউ মনের প্রশান্তির জন্য বাগান ঘুরে দেখছেন। তিনি বলেন, জায়গা নির্বাচন, ভালো জাতের গাছ এবং সুষ্ঠু পরিচর্যা করলে সফল হওয়া সম্ভব।
নাজমুল জানান, পড়ালেখা করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হতে হবে। এতে এক দিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, অন্য দিকে সৎ পথে রোজগার আসবে।
রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, নাজমুলের ফলের বাগান তৈরিতে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি। গাছের ভালো চারা সংগ্রহ থেকে শুরু করে সহযোগিতার কোনো কমতি নেই। নাজমুলের মতো শিক্ষিত যুবকরা বাগান গড়ে তুললে একদিকে যেমন বেকারত্ব ঘুচবে অন্য দিকে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।