Naya Diganta

২৭ দিন আগে নিখোঁজ মায়ের লাশের সন্ধানে খুলনার চার বোন ময়মনসিংহে

ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় পোশাক দেখে মায়ের লাশ শনাক্ত করছেন খুলনার রহিমা বেগমের চার মেয়ে : নয়া দিগন্ত

২৭ দিন আগে নিখোঁজ মায়ের লাশের সন্ধানে খুলনার চার বোন মরিয়ম মান্নান, কানিজ ফাতেমা, মাহফুজা আক্তার, আদুরী আক্তার এখন ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় অবস্থান করছেন। ১৩ দিন আগে উদ্ধার হওয়া এক নারীর লাশকে খুলনা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের বলে দাবি করছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনা শহরের মহেষ্যপাশা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন তাদের মা রহিমা বেগম (৫২)। ওই লাশ শনাক্তে পুলিশের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করছেন মেয়েরা। মরিয়ম মান্নানের দাবি এটা তার মায়েরই লাশ। ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তাদের বর্ণনার সাথে লাশ শনাক্ত সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা তাদের মায়ের লাশ কিনা। যদি লাশ শনাক্ত হয় তবে রহিমা বেগমের সন্তানরা তাদের মায়ের লাশ পাবে।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের কুকাইল দারোগা বাড়ির কবরস্থানের পাশে ঝোপের ভেতর থেকে অজ্ঞাত নারীর বস্তাবন্দী পচা গলিত লাশটি উদ্ধার করেছিল ফুলপুর থানা পুলিশ। ওই নারীর পরণে ছিল গোলাপি রঙের সালোয়ার। গায়ে ছিল সুতি ছাপা গোলাপি, কালো, বেগুনি ও কমলা মিশ্রণ রঙের কামিজ। গলায় গোলাপি রঙের ওড়না পেঁচানো ছিল। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে লাশটি নিয়ে ফুলপুর কাজিয়াকান্দা মাদরাসা সংলগ্ন আঞ্জুমান কবর স্থানে দাফন করা হয়। তখন ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৮ বছর হবে বলে মনে করা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া ওই নারীর লাশ অর্ধগলিত ছিল। তার কাপড় ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে সংবাদ ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলেও নিহত নারীর লাশের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম ও তার বোনেরা থানায় এসেছেন। তারা মৃত ওই নারীর সালোয়ার দেখে বলছে, তার মায়ের সাথে মিলছে। তবে এভাবে লাশ শনাক্ত করা সম্ভব না। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। রোববার আদালতে ডিএনএ টেস্টের জন্য আবেদন করা হবে। ডিএনএ টেস্টের পর পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে লাশটি রহিমার কিনা।
এ দিকে মরিয়ম মান্নান ও তার বোনেরা জানান, গত ২৬ আগস্ট রাতে বাসার নিচে কল থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এক ঘণ্টা পরেও তিনি বাসায় না ফেরায় তার সন্তানেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। টিউবওয়েলের পাশে তাদের মায়ের জুতা, ওড়না ও পানির পাত্র পড়ে থাকলেও মাকে তারা খুঁজে পাননি। এ ব্যাপারে গত ২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানায় জিডি এবং ২৮ আগস্ট মামলা করা হয়। ২৯ আগস্ট র‌্যাব-০৬ কে জানানো হয়। ৩১ আগস্ট খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানরা। পয়লা সেপ্টেম্বর খুলনার ডিসি নর্থ মোল্লা জাহাঙ্গীরকে অবহিত করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভুঁইয়ার নিকট মায়ের খোঁজ পেতে সহযোগিতা চেয়ে লিখিত আবেদন করে পরিবার। ৯ সেপ্টেম্বর খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে, ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে পরিবারের সদস্যরা।
মরিয়ম মান্নান তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে প্রতিবেশীদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। জায়গা-জমি নিয়ে মামলার কারণে প্রতিবেশীরা তাদের ধর্ষণ ও মেরে ফেলার হুমকি দিত।
উদ্ধারকৃত লাশের ব্যাপারে মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘২৭ দিন যাবৎ আমার মা নিখোঁজ। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের মাকে খুঁজছি। গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানায় একটি অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে এখানে ছুটে আসি। লাশের ছবি দেখে আমার মায়ের কপাল, হাত স্পষ্ট বোঝা গেছে। তারপরও আমরা অফিসিয়াল সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করব। আমি মাকে খুঁজতে এসেছি। ওনি যদি আমার মা না হন তবে অন্য কোথাও মাকে খুঁজব। আমরা শুধু আমাদের মাকে চাই।’