Naya Diganta
দেশে বেড়েছে গুরুতর অপরাধ

ভিন্নমত দমনে ব্যস্ত পুলিশ

দেশে বেড়েছে গুরুতর অপরাধ

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনী আন্দোলনের মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের দমনে অত্যন্ত উৎসাহী। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি, বিশেষ করে সভা-সমাবেশ অত্যধিক বল প্রয়োগে বানচাল করতে এখন পুলিশ খুবই তৎপর। এ কাজেই তারা বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকছে। শুধু তাই নয়, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ভণ্ডুল করতে মাঝে মধ্যে তারা চরম নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে। নজির হিসেবে বলা যায়, গত দুই মাসের কম সময়ের ব্যবধানে পুলিশের গুলিতে বিএনপির চার নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিপুলসংখ্যকের আহত হওয়ার ঘটনা। বিএনপির দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ভোলায় দলটির দুই নেতা, নারায়ণগঞ্জে এক কর্মী এবং সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জে একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। তবে এ সময় পুলিশের বেশ কিছু সদস্যও আহন হন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত এক যুগ ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে এ বাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সংস্থাটির সুনাম এখন তলানিতে। তাদের যোগ্যতা-দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাস্তবে পুলিশ সদস্যরা রাষ্ট্রীয় বাহিনী হয়েও রাজনৈতিক কর্মীর মতো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছেন। ফলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দমনে যেভাবে তারা আগ্রহী, সেভাবে নিজেদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কর্মতৎপর হতে তত আগ্রহী নন। অথচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার, মানে জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন-ভাতাসহ সমুদয় খরচ বহন করা হয়। পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অপরাধ দমনে তৎপর হওয়ার কাজটি কার্যত চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিণতিতে সারা দেশে অপরাধ বেড়েছে। সামাজিক অস্থিরতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তীব্রতর হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা অসঙ্গত হবে না, সরকার ভিন্নমত দলনে পুলিশকে ব্যস্ত রাখায় অপরাধীরা নির্বিঘেœ অপরাধকর্ম চালিয়ে যেতে পারছে।
একটি তথ্য থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগ এবং মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে গুরুতর অপরাধ সংক্রান্ত মামলা ২২৭টি বেড়েছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দিতে বিভাগীয় কমিশনারদের বলা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, শুধু নির্দেশনা দিলে কি আইনশৃঙ্খলা এবং অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? বিষয়টি এত সহজ নয় বলে আমাদের মনে হয়। শুধু নির্দেশনা দিয়ে সারা দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এ জন্য চাই ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তাদের আগে মেনে নিতে হবে যে, আইনত ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন পুলিশ বাহিনীর কাজ নয়। সংস্থাটিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর প্রধান দায়িত্ব যে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখা এ বিষয়টি উপলব্ধিতে আনতে হবে। এরপর কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবে আমাদের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে পুলিশের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন। পরিবেশ সৃষ্টি না করে তাদের কাছ থেকে পেশাদারিত্বের সাথে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের আশা করা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।
সঙ্গত কারণে আমরা বলতে চাই, চাকরিবিধি অনুযায়ী পুলিশের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হলে তাদের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তবে তা বাস্তবায়ন করা যে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব সেটি বুঝতে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হয়। বিগত দু’টি নির্বাচন বিশেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণে পুলিশকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে যেভাবে ব্যবহার করেছেন তা-ই বলে দেয় পুলিশের অপেশাদারিত্বের জন্য কারা দায়ী।