Naya Diganta

তালের পিঠা তালের পায়েস

‘ভাদ্র মাসে তালের পিঠা/কার্তিক মাসে শসা মিঠা/বন্ধু আইবার কইয়া তুমি আইলানের’
‘ও বন্ধুরে ভাদ্র মাসে গাছে গাছে পাকে দেখো তাল/তোমার সাথে তালের পিঠা খাই না কতকাল বন্ধু/আসো না ক্যান’
ভাদ্র মাস ও তাল নিয়ে এমন অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে আমাদের। গ্রামের মুরুব্বিরা বলে, ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে। তাই সহজেই বোঝা যায় ভাদ্র মাসের সাথে তালের একটি সম্পর্ক রয়েছে। শুধু ভাদ্র মাস নয়, ভাদ্র মাসের গরমের সাথে এর একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। এই ভাদ্র মাস থেকেই বাজারে উঠতে থাকে পাকা তাল। যা দিয়ে নানা রকম সুস্বাদু পিঠা বানানো হয়। কেউবা আবার তালের রস মিশ্রিত করে পায়েস তৈরি করে। পাকা তালের মিষ্টি ঘ্রাণে মন ভরে যায়। গ্রামে-শহরে ঘরে ঘরে তালের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। ভাদ্র মাসে তালের পিঠা না খেলে যেন একটি অপূর্ণতা থেকেই যায়। এই ভাদ্রের গরমেই মূলত তাল পাকে। বাজারে তখন তাল কিনতে পাওয়া যায়। পিঠাপ্রেমী মানুষ বাজার থেকে তাল কিনে নেন পিঠা তৈরির জন্য। এ সময় প্রতিটি ছোট-বড় বাজারেই পাকা তাল পাওয়া যায়। তবে পাকা তালের রস করা অপেক্ষাকৃত একটু কঠিন। রস বের করে তা কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। তাহলের তালের বিষ পানি পড়ে যায়, মুরুব্বিদের ভাষ্যমতে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা এই তালের রস ঝুলিয়ে রেখে তারপর রস দিয়ে পিঠা বা পায়েস তৈরি করা হয়। এ সময় মেয়েরা বাবার বাড়ি বেড়াতে আসে, বা বাবার বাড়ি থেকে জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায় মেয়ের মা-বাবা। জামাইকে তালের পিঠা খাওয়ানো একটি অন্যরকম অনুভূতির বিষয় ছিল, যা গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ। তবে এই সংস্কৃতি বর্তমানে তেমনটি নেই বললেই চলে। পাকা তালের সংখ্যাও কিছুটা কম পাওয়া যায়, কারণ গ্রীষ্মের দাবদাহে তালের শাঁস বিক্রি করে ফেলে। তাই অনেক গাছ হয়ে পড়ে তালশূন্য। এই ভাদ্রে তালের পিঠার আমেজ চলতে থাকুক বাংলার ঘরে ঘরে। আমাদের নতুন প্রজন্ম এ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হোক। বেঁচে থাকুক আমাদের সংস্কৃতি। ঘরে ঘরে তাল দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম পড়ুক আবারো।