Naya Diganta

সেনা-আরাকান আর্মি তুমুল যুদ্ধ

মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর পাড়ে বিজিবি সদস্যদের সতর্ক প্রহরা : নয়া দিগন্ত

মিয়ানমারে অভ্যন্তরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর তুমুলযুদ্ধ চলছে। সীমান্তরেখা বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সূত্রে এমন পরিস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মতে, ইতোমধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে অনেক এলাকা। সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের কাউয়ার পাড়া, ফকিরাপাড়া, বলিবাজার, ঢেঁকিবনিয়া এলাকার বেশি ভাগ এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীরা ক্রমাগতভাবেই শক্তি বাড়াচ্ছে। ফলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও আক্রমণ বাড়াচ্ছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এ পারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি এলাকার ২৪ হাজার মানুষ মারাত্মক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এসব গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা যায়। ৫ নম্বর পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটানা গোলাগুলি ও মর্টারের গোলার বিকট শব্দ হচ্ছে। এসব গোলাগুলি ও মর্টারের গোলার শব্দে কেঁপে উঠছে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়ার সীমান্তবর্তী বসতিগুলো। এর ফলে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। সকালে ৪৫ মিনিট গোলাগুলির পর আর কোনো শব্দ পাইনি। গোলাগুলি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, সীমান্তে শূন্যরেখার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা এসেছে। এরই মধ্যে জরিপ করে ঝুঁকিতে থাকা ১০০ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। সীমান্তে যদি কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা হলে ঝুঁকিতে থাকা এসব পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী, পূর্ব জমিদার পাড়া ও পূর্ব বালুখালী সীমান্ত এলাকায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের তালিকা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের ছোড়া কয়েকটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় ও শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরে। কোনারপাড়ার মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত না হলেও শূন্যরেখায় পড়া মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় এক রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হন আরো পাঁচজন। পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমারের বাহিনী মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।
এ দিকে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল সবচেয়ে বেশি ছিল এই ইউনিয়ন দিয়ে। ওই সময় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও ব্যতিক্রম ছিলেন চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। যারা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর কোনারপাড়ার বিপরীতে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া কাছেই অবস্থান নিয়ে ছিলেন। পাঁচ বছর ধরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এই শূন্য রেখায় অবস্থান করে মিয়ানমার সীমান্তের সব পরিস্থিতি কাছ থেকে দেখে আসছেন। উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয়রত রোহিঙ্গার ত্রাণসহ সব সহায়তার দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। কিন্তু শূন্য রেখার রোহিঙ্গাদের ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। গত মাসাধিক সময় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি চলছে তার সবচেয়ে কাছের সাক্ষী শূন্য রেখার এসব রোহিঙ্গা। এই শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নেতা দিল মোহাম্মদ।


দিল মোহাম্মদ জানান, তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মেদিপাড়ার বাসিন্দা। টানা ১০ বছরের বেশি মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিয়ানমারের এসব সীমান্তবর্তী এলাকা তার চেনা-জানা রয়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা গোলাগুলি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও সোমবার সকাল ৯টা থেকে আবারো থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে একতরফাভাবে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অপর নেতা মোহাম্মদ আরিফ জানান, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের চেহারা ও পোশাক মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতো। এখানে কে বিদ্রোহী কে সেনা সদস্য বোঝা মুশকিল। এতে বিদ্রোহীদের সুবিধা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কোনো রোহিঙ্গা ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখছেন না তিনি। তিনি জানান, যে এলাকায় সঙ্ঘাত সেখানে আগে থেকে রোহিঙ্গা শূন্য। যেখানে রোহিঙ্গা নেই সেখানে অনুপ্রবেশ কিভাবে করবে। যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তারা মংডুর কাছাকাছি। তারা মিয়ানমারের এ সীমান্তে পৌঁছার সুযোগ নেই।
পালংখালী আঞ্জুমান সীমান্তের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, এত দিন পত্রিকায় ও টেলিভিশনে শুনেছি সীমান্তে গোলাগুলি চলছে। মঙ্গলবার সকালে আমাদের আঞ্জুমান সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ মুহূর্তে আমাদের এলাকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে এ বিষয়ে বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তুমব্রু বাজারে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তারের সাথে কথা হয়। সে জানায়, গোলা এসে পড়ার পর থেকে ভয়ে আছি। পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতিও নেই। তার পরও পরিবারের চাওয়াতে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাচ্ছি।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইয়াসমিন আক্তার। তার বাড়ি তুমব্রু সীমান্তের উত্তরপাড়ায়। সেখানে সকাল থেকে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাবর্ষণের শব্দ ভেসে আসছিল। সেই শব্দ শুনতে শুনতে বাড়ি থেকে বের হয় ইয়াসমিন। বাজার পর্যন্ত আসার পরও থামেনি গোলার শব্দ।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তুমব্রু বাজারে কথা হয় ইয়াসমিনের। সে জানায়, গোলা এসে পড়ার পর থেকে ভয়ে আছি। পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতিও নেই। তার পরও পরিবারের চাওয়াতে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাচ্ছি। সে আরো জানায়, বাড়ি থেকে তার কেন্দ্র ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের দূরত্ব চার কিলোমিটার। মিয়ানমার বাহিনীর মর্টার শেল ছোড়ার ঘটনায় সেই কেন্দ্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০ কিলোমিটার দূরের কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয়ে। প্রথম দিকে কেউ কেউ পরিবহনের ব্যবস্থা করলেও আজ সেই গাড়ির দেখা নেই।
আরেক ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি তুমব্রুর পশ্চিমপাড়ায়। জান্নাতুল বলেছে, ‘সকাল থেকে কয়েক দফা গোলার শব্দ শুনেছি। এখনো চলছে। হেঁটে যাচ্ছিলাম গাড়ির স্টেশন পর্যন্ত। এর ভেতরেই দুই দফা গোলার শব্দ শুনলাম। গেল রাতেও গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। ঘুমানোর কোনো সুযোগ নেই। মুহুর্মুহু গোলার শব্দ আসছে বাড়ির কাছে। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পড়ছে।’


ইয়াসমিন ও জান্নাতুলের স্বরে কথা বলেছে ফাতেমা বেগমও। তার ভাষ্য, ‘এত দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবো কী করে, তা ভাবা হয়নি। প্রথম দিন লোক দেখানো বাসের ব্যবস্থা করলেও এখন তা আর দিলো না। এখন লোকাল গাড়ির অপেক্ষায়। ঠিকমতো কেন্দ্রে পৌঁছতে পারব কি না ভাবছি।’
তুমব্রু বাজারের দোকানদার মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘ভোর ৫টার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার ভারী গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। মানুষ প্রতিদিন এসব শব্দ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। তাই তেমন সাড়া নেই, তবে স্কুলশিক্ষার্থী বা শিশুরা ভয় পায়।’
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষ সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হবে, সেই স্থান নির্ধারণে গত সোমবার ঘুমধুমে এসেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সকালেও গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। কোনোভাবে যাতে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক আসতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে সীমান্তের শূন্য রেখায় এক রোহিঙ্গা নিহতের পর টানা তিন দিন তুমব্রু সীমান্তে গোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ বিভিন্ন ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে। বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি বা গোলার শব্দ হচ্ছে। এটা যদি উখিয়া সীমান্তের কাছে বসবাসরত বাসিন্দা বা জনপ্রতিনিধিরা বলে থাকে তাহলে সেটি ঠিক আছে। তবে আমরা সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আর সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।


নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসঙ্ঘের কাছে চিঠি : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা মিয়ানমারের মর্টার শেল হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। রোহিঙ্গারা এই হামলা থেকে নিরাপত্তা চেয়ে জাতিসঙ্ঘের কাছে চিঠি দিয়েছে বলে জানান রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী। তিনি বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের পর এবার নতুন করে আমার ইউনিয়নের আঞ্জুমান সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে ভারী গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমি এই মুহূর্তে ঢাকায় আছি। গতকাল সকালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে আমার এক ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী কল করে জানান। পরে আমি বিষয়টি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা মর্টার শেল হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। গত সোমবার বিকেলে অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মর্টার শেল হামলায় রোহিঙ্গা কিশোর ইকবাল হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ সময় বক্তব্যে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, শুরুর দিকে মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) গোলাগুলি-সংঘর্ষ শুরু হলেও এখন তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) গোলাগুলি করে পরিস্থিতি অশান্ত করছে। এই অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে ৬২১টি পরিবারের চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে। যারা গত পাঁচ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছে। সমাবেশের বক্তব্যে রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতে শূন্য রেখায় পরিকল্পিতভাবে মর্টার শেল হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের মিলিটারিরা। তারা চায় আমরা এখান থেকে সরে যাই, আমরা যাবো না। যদি যেতেই হয় শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা হেঁটে পাহাড়ের অপর প্রান্তে রাখাইনে নিজেদের ভিটায় ফিরবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসঙ্ঘকে আহ্বান জানিয়ে লেখা চিঠি পাঠ করেন শূন্য রেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মুখপাত্র দিল মোহাম্মদ। দিল মোহাম্মদ চিঠি প্রসঙ্গে বলেন, ‘২০১৭ সালে সামরিক জান্তা আট লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে। আমরা চিঠিতে জাতিসঙ্ঘকে জানিয়েছি সামরিক জান্তা বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর আরো বড় আক্রমণ করতে পারে।’ চিঠিতে এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসঙ্ঘকে শূন্য রেখার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান করা হয়েছে বলে জানান দিল মোহাম্মদ। এই চিঠি জাতিসঙ্ঘ ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সে দেশের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে চলা সঙ্ঘাতে অস্থির হয়ে উঠেছে রাখাইন রাজ্য। সঙ্ঘাতের প্রভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে, তিন দফায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা মর্টার শেল পতিত হয়েছে ঘুমধুমে। সর্বশেষ এক রোহিঙ্গা নিহত ও ছয়জন আহত হওয়ার ঘটনায় উৎকণ্ঠা বেড়েছে সীমান্ত এলাকায়।


বান্দরবান সীমান্তে আতঙ্ক, স্কুলে যেতে ভয় : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গতকাল সকালেও গুলি ও গোলার আওয়াজ শোনা গেছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু আমতলী এলাকায় ৩৯ নম্বর পিলারের বিপরীত দিক থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এ ঘটনার পর ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে এসব এলাকার কিছু পাহাড়ি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি সেখানে বাধা দেয়। পরে তাদের এলাকায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ দিকে সীমান্তে থেমে থেমে এখনো গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বিজিবি ঘুমধুম, তুমব্রু, রেজু আমতলি এলাকায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। অন্য দিকে সীমান্তে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করছে ইউনিয়ন পরিষদ। তবে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের কবে সরিয়ে নেয়া হবে এ বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। অন্য দিকে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঘুমধুম স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির হারও কমেছে। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের অভয় দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।