Naya Diganta

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান বন্দী বিনিময় : কূটনীতিতে নতুন মাত্রা

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান বন্দী বিনিময় : কূটনীতিতে নতুন মাত্রা

আাফগানিস্তান শাসনকারী তালেবানের সাথে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র 'ড্রাগ লর্ড' হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। আর বিনিময়ে মার্কিন নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মুক্তি দিয়েছে তালেবান কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মার্ক ফ্রেরিচসের মুক্তিকে স্বাগত জানান। আফগানিস্তানে ২০২০ সালে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সময় তিনি অপহৃত হন।

তবে বাইডেন স্বীকার করেন, এই মুক্তির জন্য তাকে 'কঠিন সিদ্ধান্ত' গ্রহণ করতে হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি তালেবানের মিত্র বরিশ নুরজাইকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি মাদক মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করে আসছিলেন।

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের এক বছরের বেশি সময় পর দুই পক্ষের মধ্যে এই সমঝোতা হলো।

ওয়াশিংটন এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে সোমবার উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই বন্দী বিনিময় ঘটেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।

বশির নুরজাই আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কান্দারের উপজাতীয় নেতা। তিনি হাজি বশির নামেও পরিচিত। মার্কিন সরকারের ভাষ্যানুযায়ী, তিনি পপি ক্ষেত ও হেরোইন উৎপাদনকারী ল্যাবরেটরির মালিক। তিনি বৈশ্বিক ড্রাগ কার্যক্রম পরিচালনার সাথেও জড়িত। মার্কিন কর্মকর্তারা তাকে কলম্বিয়ার কুখ্যাত মাদক সম্রাটের সাথে তুলনা করে এশিয়ার হেরোইন পাচারের 'পাবলো এসকোবার' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি তালেবানের পরলোকগত সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সাথে ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন আইনজীবীরা বলছেন, তিনি মাদক ব্যবসা পরিচালনার বিনিময়ে তালেবানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন।

তাকে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার করা হয়। তার আইনজীবীরা বলছেন, তিনি মার্কিন ফেডারেল কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়েছিলেন। তাকে গ্রেফতার করা হবে না মর্মে আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল।

তাকে ২০০৮ সালে মাদক-সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দণ্ডিত করা হয়। আর এক বছর পর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তবে নুরজাইয়ের আইনজীবীরা তার মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে মার্ক ফ্রেরিচস নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। ২০২০ সালের প্রথম দিকে কাবুলের দক্ষিণ-পূর্বের খোশত প্রদেশ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। তাকে কিভাবে অপহরণ করা হয়েছিল, তা অস্পষ্ট। ধারণা করা হয়, তালেবানের সাথে সম্পর্কিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যরা তাকে অপহরণ করেছিল।

এপির খবরে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে তাকে উদ্ধারের জন্য মার্কিন বাহিনী একটি ব্যর্থ অভিযান চালিয়েছিল। ২০২১ সালে তার একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। তাতে তিনি তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের কথা বলেন। তার পরিবার নুরজির মুক্তির বিনিময়ে মার্ককে মুক্ত করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। বন্দী বিনিময়ের খবরকে মার্ক পরিবার স্বাগত জানিয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা