Naya Diganta

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ফুটবল অনুরাগ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ফুটবল অনুরাগ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোক চলছে বিশ্বজুড়েই। বাংলাদেশেও চলছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। রানির মৃত্যুতে শোক নেমেছে ফুটবল প্রাঙ্গনেও। ফুটবল ক্লাব আর্সেনাল শোক প্রকাশে জুরিখ বনাম আর্সেনাল ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নীরবতা পালন করেছিল। এছাড়াও স্থগিত হয়েছে প্রিমিয়ার লিগের গেমউইক ৭-এর সব ম্যাচ। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কি আদৌ ফুটবল ফ্যান ছিলেন?

ইংল্যান্ডের অন্য সব বিষয়ের মতো ফুটবলেও অবদান রেখেছিলেন মহামান্য রানি। শোনা যায়, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রিমিয়ার লিগের এক বা একাধিক ক্লাবের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। কোনো কোনো উৎস থেকে জানা যায়, রানি এলিজাবেথ ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল সমর্থক ছিলেন। এই উৎসগুলোর মধ্যে আর্সেনালের সাবেক খেলোয়াড় সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের নামও উল্লেখযোগ্য। আবার ইংলিশ ক্লাব দ্যা মিরর থেকে জানা যায়, তিনি লন্ডনের ক্লাব ওয়েস্ট হ্যামকে পছন্দ করতেন। তবে তিনি আসলেই কোন ক্লাবের সমর্থক ছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ আজীবন থেকে যাবে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহন করেন, এরপর প্রায় ১৪ বছর পর ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ জুলেস রিমে জয় করে। বলে রাখা ভালো, বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনকারী প্রথম ফিফা প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানাতে ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ ট্রফির নামকরণ করা হয় জুলে রিমে। ১৯৭০ সালে, ব্রাজিল তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের সাথে জুলে রিমে ট্রফি স্থায়ীভাবে রাখার গৌরব অর্জন করে। ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি নামে নতুন ট্রফিটি ১৯৭৪ বিশ্বকাপের জন্য উন্মোচন করা হয়েছিল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলকে ট্রফি প্রদান করেছিলেন।

২০২০ ইউরো তে ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠলে রানি ১৯৬৬ সালের স্মৃতিচারণ করে লিখেন : ‘পঞ্চাশ বছর আগে ববি মুরকে বিশ্বকাপ উপহার দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল এবং আমি দেখেছিলাম খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট এবং সাপোর্ট স্টাফদের কাছে একটি বড় আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছানো এবং জেতার অর্থ কী। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছানোয় আমি আমার এবং আমার পরিবারের সবাইকে অভিনন্দন পাঠাতে চাই এবং আগামীকালের জন্য আমার শুভেচ্ছা পাঠাতে চাই।’

এছাড়াও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের সম্মাননা প্রদান করতেন।
নববর্ষের সম্মাননা এবং রানির জন্মদিনের সম্মানে বিভিন্ন ফুটবল ব্যক্তিত্বের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া ছিল এলিজাবেথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই তালিকায় প্রথম খেলোয়াড় ছিলেন নাইটহুড জয়ী স্যার স্ট্যানলি ম্যাথুস এবং পরে বিভিন্ন সময়ে এই তালিকায় যোগ হয় আলফ রামসে, অ্যালেক্স ফার্গুসন এবং ববি রবসনের মতো প্রধান ফুটবল ব্যক্তিত্বদের নাম। এছাড়াও অনেক ফুটবলারও সম্মাননা পেয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছে রয় হজসন, ডেভিড বেকহ্যাম এবং গ্যারেথ বেল- এর নাম।

এছাড়াও একমাত্র ফুটবল ক্লাব হিসেবে তিনি আর্সেনাল দলকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে আর্সেনালের নতুন স্টেডিয়াম এমিরেটস উদ্বোধন করার কথা থাকলে কোনো এক কারণে রানি সেখানে যেতে পারেননি। এর ফলেই রানী আর্সেনাল দলের খেলোয়াড় ও ম্যানেজারকে বাকিংহাম প্যালেসে চা পানের আমন্ত্রণ জানান। আর্সেনালের তৎকালীন খেলোয়াড় থিয়েরি হেনরির ভাষায় : ‘সবকিছু সত্যিই সুন্দরভাবে হয়েছে। রানি আমাদের যে অভিজ্ঞতা দিয়েছেন তা বর্ণনা করার জন্য আমার কাছে কোনো শব্দ নেই।’

এছাড়াও শাসনকালের প্রথমদিকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে এফএ কাপের ফাইনালে দেখা যেত। ওয়েম্বলিতে বিজয়ী দলের ক্যাপ্টেনের হাতে তিনি ট্রফি তুলে দিতেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি পরাজিত দলকে সান্ত্বনা দিতেন। পরে অনেক খেলোয়াড়-ই একথা স্বীকার করেছেন যে রানির সাথে সাক্ষাৎ হওয়া তাদের ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

পুরুষ দলের পাশাপাশি মহিলা ফুটবল দলের প্রতিও বিশেষভাবে অনুরাগী ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রায় ৬০ বছর পর ইংল্যান্ড মহিলা দল যখন ইউরো জিতলেন, তখন রানি দলের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। তাই সবমিলিয়ে বলা যায়, ইংল্যান্ড দল বিশেষত আর্সেনাল ও ওয়েস্ট হ্যাম হারাল তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভক্তকে। এই ক্ষতিকে হয়তো আর কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হবে না।