Naya Diganta

মিয়ানমার সীমান্তে হঠাৎ গোলাগুলি আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনঘুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের দক্ষিণের উঁচু পাহাড়টি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের। পাহাড়ের পেছনে ওয়ালিডং পাহাড়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনঘুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং পাহাড়ে মাসখানেক ধরে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছে। এত দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি চললেও গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাহাড়ে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের তুমব্রু বাজার থেকে ওপারের মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
বিকেলে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দুই দেশের মধ্যবর্তী শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে বসবাস করা চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। ওয়ালিডং পাহাড়ের পাদদেশে শূন্যরেখার ভূখণ্ডে পাঁচ বছর আগে গড়ে তোলা হয় এই আশ্রয়শিবির। সেখানে রোহিঙ্গাদের খাবার ও ত্রাণসহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে তুমুল গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ চলছে। মাঝে মধ্যে আর্টিলারি ও মর্টার শেলের গোলার বিকট শব্দ কানে আসছে। গুলির শব্দে আশ্রয়শিবির কাঁপছে। এতদিন দুপুরের আগে যুদ্ধ থেমে যেত, গোলাগুলি বন্ধ থাকত। বিকেলে আশ্রয়শিবিরের নারী-পুরুষেরা ঘরের বাইরে এসে প্রয়োজনীয় কাজ করতেন এবং শিশুরা খেলাধুলা করত। গতকাল শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্রয়শিবিরের কাছাকাছি গোলাগুলি হওয়ায় আতঙ্ক বেশি। তবে আকাশে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি দেখা যায়নি।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরটি পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনঘুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোনারপাড়ায়। ওপারে গুলিবর্ষণের কথা জানিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, সীমান্তের ওপারে কখন গুলি শুরু হয়, কখন বন্ধ হয়, তার হিসাব রাখা কঠিন। ঘুনঘুম ইউনিয়নের সাথে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সেখানে বিজিবি পাহারা দিচ্ছে।
বান্দরবান সীমান্তে আরো ১ মর্টার শেল : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গতকাল সন্ধ্যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া আরো একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এটি তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার কাছে সীমান্তের পাহাড়ে এসে পড়েছে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর আগে বিকেলে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির সংবাদ পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলার থেকে ৪০ নম্বর পিলারের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এতে করে সীমান্তে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নাগরিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন সন্ধ্যায় একটি মর্টার শেল কোনারপাড়ার কাছে পাহাড়ি এলাকায় এসে পড়েছে। তবে এটি সীমান্ত লাগোয়া নোম্যান্সল্যান্ডে পড়েছে। এ ঘটনার পর সেখানে বিজেপি সদস্যরা গিয়েছেন।