Naya Diganta

বাংলাদেশে বিমান হামলা : কী চাইছে মিয়ানমার

বাংলাদেশে বিমান হামলা : কী চাইছে মিয়ানমার

মিয়ানমার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো বারবার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে গোলা বর্ষণ করছে। এ ব্যাপারে দু’দফা প্রতিবাদ জানানোর পরও একই ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আর এই বিমান হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার। মিয়ানমারের এই হামলা কি কাকতালীয় নাকি আরাকান আর্মি দমনের নামে ঢাকাকে কোনো বার্তা দিতে চাইছে বর্মি জান্তা সরকার, সে সাথে ক্রেমলিন।

বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির ক্রান্তিকাল ভূ-রাজনীতি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কেউ কেউ এটাকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরিস্থিতির প্যারাডাইম শিফট বা মোড় পরিবর্তনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন। স্নায়ুযুদ্ধকালের এক মেরুর বিশ্বব্যবস্থা যে চ্যালেঞ্জে পড়েছে তা-ই নয়, একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে বৈশ্বিক অনুশাসনের একটি প্রক্রিয়া বিজয়ী শক্তিগুলো সর্বসম্মতভাবে তৈরি করেছিল সেটিও চ্যালেঞ্জে পড়েছে।

বৈশ্বিক ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বড় পরিবর্তনের পেছনে যে প্রধান কারণগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তার শীর্ষে ছিল অর্থনৈতিক বিপ্লব। আর্থিক সক্ষমতা সব সময় আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে না যদি সেটিকে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরিতে কাজে লাগানো না হয়। ইউরোপের স্বল্প জনসংখ্যার অনেক জাতি একসময় বিশ্বের দেশে দেশে উপনিবেশ বিস্তার করেছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ আর্থিক সক্ষমতাকে টেকসই প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার বানাতে পারেনি এ কারণে।

রাশিয়া চীন ও ভারত : সম্পর্ক ও সঙ্ঘাত

এখনকার বৈশ্বিক পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো। এ দেশগুলোর মধ্যে সামনের কাতারে রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। রাশিয়া সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে দ্বিতীয় শ্রেণীর একটি দেশ, শিল্প প্রযুক্তি বিকাশেও দেশটি রয়েছে একই স্তরে। তবে মাঝারি আকারের নৃতাত্তি¡কভাবে সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী। জ্বালানি সম্পদের বিপুল মজুদ এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত করেছে। কিন্তু সোভিয়েত আমলের মতো এককভাবে শীর্ষ প্রতিপক্ষ আমেরিকাকে প্রতিরোধ করার মতো অবস্থানে এখনো রাশিয়া যে পৌঁছেনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইউক্রেন যুদ্ধে আশানুরূপ সাফল্য লাভে ব্যর্থতায়। আর এই সীমাবদ্ধতার কারণে ইউক্রেন অভিযানের আগে কৌশলগত বোঝাপড়ার জন্য পুতিনকে ছুটে যেতে হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে।

চীনের সক্ষমতা ও বাস্তবতা রাশিয়া থেকে অনেকখানি আলাদা। বৈশিষ্ট্যগতভাবে চীনের বিশেষ সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা দুটোই রয়েছে। চীন বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী একধরনের শৃঙ্খলিত বা সুশৃঙ্খল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালনের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল পর্ব পেরিয়ে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় দেশটির জনগণের মধ্যে পরিশ্রম অধ্যবসায় ও উদ্ভাবন তিনটির সংমিশ্রণ ঘটেছে। দেং জিয়াও পিং-এর সংস্কার ও বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার সাথে সমন্বয় ঘটানোর নীতি বাস্তবায়নের পর চীনের অর্থনীতি বিস্ময়কর অগ্রগতি লাভ করে। বিনিময় হারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সমানুপাত হিসেবে বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে দেশটি।

তুলনামূলক সস্তা কাঁচামাল ও শ্রমের সুবাদে বিশ্বের শীর্ষ করপোরেশনগুলো তাদের উৎপাদন ইউনিট চীনে নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতির বিকাশের পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটিও সামনে এগিয়েছে। চীন হয়ে পড়েছে বিশ্বে সস্তা উপকরণ ও পণ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র। চীনা সরকার অর্থনীতির এই অগ্রগতির সাথে তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায়ও বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। যার ফলে এখন বিশ্বের শীর্ষ উদ্ভাবনী গবেষণা নিবন্ধের ৪০ শতাংশ চীনাদের দখলে। এ ক্ষেত্রে চীনা প্রভাব শুধু দেশটি অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠী তৈরি করেছে এমন নয়, সেই সাথে প্রবাসী চীনা স¤প্রদায়ও বিরাট ভূমিকা রাখছে। ইউরোপ আমেরিকার এমন বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যেখানে চীনা শিক্ষকরা কর্মরত নেই। চীনা টাউন নেই এমন কোনো উন্মুক্ত ইউরোপ আমেরিকার দেশ প্রাপ্তি হবে বিরল।

এই বাস্তবতার কারণে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য পুতিনের মতো ঔদ্ধত্য স্বভাবের নেতাও চীনের সাথে বোঝাপড়ায় গেছেন। আর তাইওয়ান নিয়ে সঙ্ঘাতে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা দু’ধাপ এগিয়ে দেড় ধাপ পেছানোর মতো কৌশলে রয়েছেন। চীনও তার প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সক্ষমতাকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যেতে পাশ্চাত্যের সাথে এখনই সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না।

এশিয়ায় এই দুই দেশের পর ভারত তৃতীয় শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয় এই অঞ্চলে। যদিও রাশিয়া বা চীনের তুলনায় সক্ষমতার বিচারে ভারত অনেকটাই পেছনের কাতারে। তবে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ভারতের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশটি দুই প্রধান বৈশ্বিক পক্ষের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করে আসছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া হলো ভারতের প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্র সরবরাহ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রধান উৎস। ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ সত্তে¡ও চীন হলো বৃহত্তর বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক অংশীদার। আর যুক্তরাষ্ট্র ও উদারনৈতিক ইউরোপকে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুসারে কৌশলগত মিত্র হিসেবে তুলে ধরতে চায় দিল্লি।

মিয়ানমারে প্রভাব বিস্তারের লড়াই :

মিয়ানমারে এখন যে বাস্তবতা ও সংঘাত চলছে তা বোঝার জন্য বৈশ্বিক এই তিন খেলোয়াড়ের সামর্থ্য সম্পর্ক ও সঙ্ঘাতের বিষয়টি বোঝা দরকার। ওবামা শাসনকালে ওয়াশিংটন ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভেবেছিল ভারত তার প্রতিরক্ষা নির্ভরতা রাশিয়া থেকে সরিয়ে পাশ্চাত্যে নিয়ে যাবে। কিন্তু এর বিপরীতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সেই ধারায় না এগিয়ে আবার রুশ নির্ভরতায় ফিরে আসে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ওয়াশিংটনের আপত্তির মুখেও এস৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহ করে দিল্লি। এরপর রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে মধ্যপন্থা গ্রহণ করে। আর এর আগেই মিয়ানমার প্রশ্নে দিল্লি একেবারেই পাশ্চাত্যবিরোধী কৌশল নেয়। ভারত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করে।
এই সম্পর্কের আওতার কালান্দান রিভার প্রকল্পের অংশ হিসেবে সিটওয়েতে গভীর সমুদ্রবন্দর এবং অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির পদক্ষেপ নেয় ভারত। এ জন্য ভারত কিলোক্লাস সাবমেরিন, ব্রহ্ম মিসাইল, তেজশ জঙ্গিবিমান সরবরাহ করে মিয়ানমারকে। একই সাথে সীমান্ত অঞ্চলে বিদ্রোহ দমনে যৌথ অংশীদারিত্বের এক প্রক্রিয়াও তৈরি করে। এই কৌশলের সাথে সামরিক জান্তা সরকার উৎখাত করে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার পাশ্চাত্যের প্রচেষ্টা পুরোপুরিই সাংঘর্ষিক। পাশ্চাত্যের বিপরীত নীতির পাশাপাশি মিয়ানমারের বহু দশকের চীনা সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ও নির্ভরতা দূর করার জন্য প্রচেষ্টাও গ্রহণ করে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে জড়িত করার সাথে সাথে রাশিয়াকে সম্পৃক্ত করার জন্য মধ্যস্থতাকারীর ভ‚মিকা নেয় দিল্লি।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের ঘনঘন রাশিয়া সফর, সর্বাত্মক অবরোধ থাকা অবস্থায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের নেপাইডো সফর, সু-৩০ যুদ্ধ বিমানসহ কৌশলগত সমরাস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের তেল গ্যাস বøকে জ্বালানি অনুসন্ধানের সাথে রাশিয়াকে যুক্ত করার পদক্ষেপ এই অঞ্চলের জন্য অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি যেমন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনিভাবে চীন-রাশিয়ার কৌশলগত সহযোগিতাকেও এটি কমবেশি প্রভাবিত করতে পারে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর যে ধরনের সর্বাত্মক সহায়তার প্রত্যাশা চীনের কাছে করেছিল সেটি মস্কো পায়নি বলে মনে করে। যার ফলে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদরভ চীনা সহায়তার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, অর্ধেক দামে জ্বালানি কেনাটা কৌশলগত সহায়তা হতে পারে না। এ ছাড়া শি জিনপিংকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ করলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্কের চেয়েও বেইজিংয়ের সামনে ইউরোপ আমেরিকার বাজার ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চীনা নেতারা এটিও স্মরণ করেন যে, বেইজিং যখন ভারতকে এস-৪০০ সরবরাহ না করতে অনুরোধ করেছিল ক্রেমলিন তা রক্ষা করেনি। এই স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে দুই দেশের ভূমিকাকে প্রভাবিত করেছে।

মিয়ানমারে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় চীনা প্রভাবকে। চীন তার সীমান্তবর্তী দেশটিতে দশকের পর দশক ধরে বিনিয়োগ করে এসেছে। মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বড় অংশ ছিল চীনের। ভারত তার গণতান্ত্রিক এজেন্ডা পরিত্যাগ করে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার পর চীনা প্রভাব কমানোর প্রতি নজর দেয়। কিন্তু ভারতের যে নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে চীনের বিকল্প তৈরি সম্ভব না হওয়ায় রাশিয়াকে মিয়ানমারে বড় ভূমিকায় নিয়ে আসার নীতি নেয় দিল্লি। সর্বশেষ অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালে সামরিক জান্তার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমার থেকে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য গুটিয়ে নেয়। এতে সৃষ্ট শূন্যস্থান বিশেষত জ্বালানি অনুসন্ধান ক্ষেত্রে রাশিয়াকে সংযুক্ত করে জান্তা সরকার। একই সাথে প্রতিরক্ষা সমরাস্ত্র চীনের পরিবর্তে রাশিয়া থেকে সংগ্রহের ব্যাপারে সামরিক সরকার উৎসাহিত হয়ে ওঠে।

ভেতরে ভেতরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের চীনের বিকল্পে ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি বেইজিংয়ের স্বাভাবিকভাবে নেয়ার কথা নয়। এমনিতে জান্তা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জীবনহানির ঘটনা ঘটতে থাকে। এ অবস্থায় চীনকে বাদ দিয়ে ভারত-রাশিয়া অক্ষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ার পর থেকে আরাকান আর্মির মতো যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সামরিক সরকারের সমঝোতা হয়েছিল সেটিও ভেঙে পড়তে থাকে। এতে রাখাইন চিন স্যাগাইং, কাচিন ও শানে বিদ্রোহীদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। চিন রাজ্য থেকে হাজার হাজার মিজো ভারতের মিজোরামে চলে যেতে থাকে। বাংলাদেশ ভারত ও চীন সীমান্তবর্তী তিনটি রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অবস্থান একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে। আরাকান আর্মির সাথে সামরিক যুদ্ধবিরতি ভেঙে গিয়ে নতুন সঙ্ঘাত শুরু হলে বেপরোয়া বিমান হামলা শুরু করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।

বর্মি বিমানের গোলা ও বাংলাদেশের করণীয় :

কথিত আরাকান আর্মি বিরোধী এই অভিযানে মিয়ানমারের সরকার রাশিয়ান জঙ্গিবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে এবং সেই বিমানের গোলা বারবার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ছে। নেইপিডো কর্তৃপক্ষ জানে যে ভারত ও চীনা সীমান্ত অতিক্রম করলে তাদের এ জন্য মূল্য দিতে হবে বেশি। ফলে বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত সৃষ্টির লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে মনে হয়। আরাকান আর্মিকে দমন করার জন্য এই অভিযান চালানোর কথা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করলেও এর পেছনে আরো গভীর কোনো বিষয় থাকতে পারে। জান্তা সরকার সীমিতভাবে ঢাকার সাথে সামরিক সঙ্ঘাত তৈরি করে জনমতকে প্রভাবিত করতে চাইতে পারে। অথবা বিশ্বের সামনে এমন একটি বিষয় তুলে ধরতে চাইতে পারে যে আরাকান আর্মি প্রতিবেশী দেশের মদদ পাচ্ছে। অথবা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব তেল গ্যাস বøকে রাশিয়াকে কর্তৃত্ব দিতে চাইছে তাদের ব্যাপারে কোনো আপত্তি যাতে বাংলাদেশ না করে তার জন্যও একটি বার্তা হতে পারে এটি। অথবা চীনকে দূরে রেখে রাশিয়া-ভারতের ওপর সামরিক নির্ভরতার একটি পরীক্ষাও করে দেখতে চাইতে পারে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। অথবা বাংলাদেশকে যুদ্ধে সম্পৃক্ত করে কোনো সামরিক চুক্তিতে জড়াতে চাইতে পারে প্রতিবেশী দেশ। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের ঠিক আগে এই উত্তেজনা বেড়েছে। আর আরাকান আর্মিকে দমন করতে বিমান হামলা চালানোর কথা বলা হলেও নাইক্ষ্যংছড়ির ওপারে আরাকান আর্মির কোনো অবস্থানের কথা জানা যায় না।
এ অবস্থায় একটি বড় প্রশ্ন হতে পারে এ ধরনের উসকানিমূলক সামরিক তৎপরতার ব্যাপারে বাংলাদেশের সাড়া কী হওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের বারবার বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া এবং তাদের ওপর অব্যাহত জাতিগত নিপীড়নের ঘটনায় স্পষ্ট যে মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে সমঝোতার সম্পর্কের ওপর ততটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশকেও পূর্ণ সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা ভাবতে হবে। রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সুস্পর্ক থাকলেও মিয়ানমার ইস্যুতে বৈশ্বিক ফোরামে এ পর্যন্ত যতবার ভোটাভুটি হয়েছে তাতে কোনোবারই ঢাকাকে সমর্থন করেনি মস্কো। কক্সবাজার বা বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের সাথে কোনো সঙ্ঘাত বেধে গেলে রাশিয়া সর্বতোভাবে মিয়ানমারকে সমর্থন করার সম্ভাবনাই বেশি।

মিয়ানমারের এবারের সঙ্ঘাতে নেইপিডোকে বেইজিং সমর্থন করছে বলে মনে হয় না। সেটি যদি বাস্তব হয়ে থাকে তাহলে চীনের সাথে বোঝাপড়া হতে পারে। তবে রাশিয়ান মদদপুষ্ট যে কোনো আক্রমণে সামরিক প্রতিরোধের জন্য পশ্চিমা সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের মতো ওআইসির দেশ থেকেও সামরিক সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান কৌশলগত শক্ত অবস্থান না নিয়ে করা যাবে বলে মনে হয় না। এখন কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের যে উসকানিমূলক তৎপরতা চলছে সেটিকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ কোনোভাবেই নেই। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতে কোনো উসকানি বা উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছেন না বলে উল্লেখ করেছেন। তবে ছোটখাটো কিছু নিয়ে যুদ্ধে জড়ানো যেমন পরিণামদর্শী কিছু হয় না, তেমনিভাবে কোনো দেশের যুদ্ধে জড়ানোর সঙ্কেতকে হালকাভাবে নিয়ে নিজেকে অপ্রস্তুত রাখাও পরিণামদর্শী হতে পারে না।

mrkmmb@gmail.com