Naya Diganta

ভাঙ্গায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ইসহাক মোল্লার অভাবনীয় সাফল্য

ভাঙ্গায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ইসহাক মোল্লার অভাবনীয় সাফল্য

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পৌরসদরের ভারইডাঙ্গা গ্রামের আদর্শ মডেল কৃষক ইসহাক মোল্লা কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ চাষে অভাবনীয় সাফল্য ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। উপজেলা শহর থেকে অদূরে তার বাড়িতে গিয়ে তার এ সফলতার গল্প শুনে অনেকেই এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা উপজেলা বরাবরই পেঁয়াজ বীজ চাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এলাকার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। তাছাড়া এখানে পেঁয়াজ বীজের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সেই চাহিদা থেকেই কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পেঁয়াজ বীজ চাষে আগ্রহী হয়ে সফলতা পেয়েছেন ইসহাক মোল্লাসহ অনেকেই। ফরিদপুর ও পাশের জেলাসহ তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ সারাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে এখন কৃষকের হাতে হাতে। এতে পেঁয়াজ আবাদ বেড়েই চলছে। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও এখন অনেক চাষির কাছে তিনি অনুকরণীয়। তার সফলতা দেখে অনেক কৃষক পেঁয়াজ চাষ করে স্বাবলম্বী। তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবত পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে আসছেন। গত মৌসুমে তার উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের পেঁয়াজের বীজ এখন কৃষকদের হাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সফল পেঁয়াজ বীজচাষি ইসহাক মোল্লা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথমে তিনি ৫ শতাংশ জমিতে এর আবাদ করেন। সফলতা ও লাভের মুখ দেখায় পর্যায়ক্রমে এখন তিনি গত বছর ২৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে ব্যাপক সফলতা পান। গত বছর পেঁয়াজ চাষে বৈরী আবহাওয়া, মৌমাছির অভাবে পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায় এলাকার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন। তা সত্যেও তিনি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। চাষের কৌশল ও সুষম মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ তার এ বীজ চাষে ব্যাপক সফলতা হিসেবে ধরা দেয়।

এ প্রতিবেদকের সাথে ইসহাক মোল্লার কথা হয় তার নিজ বাড়িতে। তিনি জানান, বর্তমানে এ বীজের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। গত বছর ২৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করে প্রায় ৯০ মন বীজ পেয়েছেন। এর বাজার মূল্য প্রতি মন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে বীজ বিক্রি করে তিনি এক কোটি টাকার মতো আয় করবেন আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি পেঁয়াজ বীজের একটি ব্যান্ড তৈরি করেছেন। এটির নাম দিয়েছেন হাই নয়নতারা। টিনের এবং প্লাস্টিকের প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন স্থানে তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

তিনি এলাকার পেঁয়াজ চাষিদের উদ্দেশে বলেন, সুপার কিং ও তাহেরপুরী পেঁয়াজের আবাদ করে তিনি এ সফলতা পেয়েছেন। এজন্য পর্যাপ্ত ও সুষম মাত্রায় সার গ্রয়োগ, সঠিক পরিচর্যা এবং ভাল বীজের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তার উদ্ভাবিত বীজ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ পদ্ধতি এবং সংরক্ষণাগার ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন। ইতোমধ্যে তার উদ্ভাবিত পেয়াজ বীজ ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে তিনি ব্যাপক পরিসরে চাষ করার কথা উল্লেখ করেন। বর্তমানে অনেকেই তার নিকট থেকে প্যাকেপের বীজ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এদিকে এ উপজেলার কৃষকদের সফল পেঁয়াজ আবাদ দেখতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জাামান ইতোপূর্বে এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সুদর্শন শিকদার বলেন, আদর্শ কৃষক ইসহাক মোল্লা পেঁয়াজ বীজ চাষে ব্যাপক সাফল্যতা পেয়েছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে সার, বীজ ও সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রে এলাকার কৃষকরা যাতে সফলতা পায়, সে অনুযায়ী সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।