Naya Diganta

লাল শাপলার বিলে

লাল শাপলার বিলে

দিনটা ১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার। পাঁচ বন্ধু মিলে ঢাকাগামী বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য ত্রিশালের চেচুয়া বিল। মিনিট বিশেকের মাথায় ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলাম। এখান থেকে অটোতে চড়ে যেতে হবে বালিপাড়া রোডের মৃথাবাড়ি মোড়। অনেক অপেক্ষার পরও কোনো অটোর দেখা মিলল না। সিএনজির ভাড়াও বাজেটের বাইরে। ভ্যানগাড়িই এখন শেষ ভরসা। আর সময়ক্ষেপণ না করে মাথাপিছু ১০ টাকা ভাড়ায় উঠে বসলাম ভ্যানগাড়িতে।
আবহাওয়াটাও এখন ভারী সুন্দর! মাথার ওপর মিষ্টি রোদ। সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এ যেন সেই ছোটবেলায় শুনে আসা ‘ব্যাঙের বিয়ে’র দিন! গল্পে-আড্ডায় চলে এলাম মৃথাবাড়ি মোড়। এবার আরো কিছু পথ হেঁটে যেতে হবে। স্থানীয় এক বয়স্ক লোকের কাছ থেকে এখন কোন পথে যেতে হবে জানতে চাইলাম, জেনেই হাঁটা ধরলাম। একটু এগোতেই চোখে পড়ল গ্রামের আঁকাবাঁকা কতগুলো পথ। আমরা একটু বিচলিত হলাম; এবার কোন দিকে যাব! তখনই চোখে পড়ল একগুচ্ছ শাপলা হাতে একজোড়া কপোত-কপোতী। এটা দেখে আর চিনতে বাকি রইল না শাপলার রাজ্যের পথ, হাঁটা ধরলাম সে পথেই। মিনিট দুয়েকের মাথায় দেখতে পেলাম কাক্সিক্ষত সেই শাপলার রাজ্য। বিলের পারে বাঁধা আছে গুটিকয়েক ডিঙি নৌকা। আরো কিছু নৌকা বিলের পানিতে ভাসছে। প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হলো। ৪০০ টাকায় এক ঘণ্টা চুক্তিতে পাঁচজন মিলে চেপে বসলাম নৌকায়। উপভোগ করতে লাগলাম গোলাকার সবুজ পাতার ওপর ফুটে থাকা সারি সারি লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য। সাথে ঝিরি বৃষ্টিস্নাত সকালের মিষ্টি রোদ। দখিনা হাওয়া। নৌকার পাল নেই, তবু দোল খাচ্ছি। শুরু হলো ফটোসেশন। নৌকার মাথায় বসে থাকা শিবলীর ছবি তোলা দিয়েই শুরু করলাম। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে তার বেশ কিছু ছবি তোলা হলো। এবার আমার ছবি তোলার পালা। ইতঃপূর্বে লক্ষ করেছি, আমি অন্যদের ছবি ভালো করে তুলে দিলেও আমার ছবি বরাবরই খুবই বাজে আসে!
কিন্তু এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। আমার ছবি তুলবে সাদ। বন্ধু মানুষ। বকাঝকা করে শত ছবি তোলার পর কিছু সুন্দর ছবি এলো। এবার সাদের ছবি তোলার পালা। ভিন্ন কিছু অঙ্গভঙ্গিতে বেশ কিছু ছবি তোলার হলো তার।
পালাক্রমে বন্ধু সায়েম ও মুস্তাফিজের ছবি তুলে দিলাম। এ দিকে আমাদের চুক্তি করা এক ঘণ্টা সময়ও ফুরিয়ে এলো। আর শাপলাগুলোও যেন চোখ বুজে গেল। এবার ফিরে যাওয়ার পালা। মাঝি বিলের পাড়ের দিকে নৌকা ভিড়াতে থাকল। প্রিয়তমার জন্য একগুচ্ছ শাপলা হাতে রওনা করলাম বাড়ির পথে।