Naya Diganta

মুটিয়ে যাচ্ছে শহুরে নারীরা

মুটিয়ে যাচ্ছে শহুরে নারীরা

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে স্থূলতা ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন বিশিষ্ট হওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। শারীরিক ওজন উচ্চতার তুলনায় বেড়ে যাওয়া ও মুটিয়ে যাওয়ার এই প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি। গ্রাম অথবা শহর উভয় অঞ্চলেই মুটিয়ে যাওয়া এবং ওজন বেড়ে যাওয়া লক্ষ করা গেলেও বেশি ওজন বাড়ছে শহুরে নারীদের। হরিবন্ধু শর্মার নেতৃত্বে বিএমসি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গবেষকরা ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৬ হাজার ৪৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশকে স্বাভাবিকের বেশি ওজন ও স্থূল পেয়েছেন। তবে তথ্যগুলো তারা নিয়েছেন বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১১ (বিডিএইচএস-২০১১) থেকে। গবেষকরা বিডিএইচএসের পুষ্টি সংক্রান্ত ড্যাটা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পেয়েছেন।
শারীরিক পরিশ্রমের কাজ যারা করেন তাদের চেয়ে কর্মহীন নারীরা বেশি স্থূল বলে গবেষকরা বলছেন। শহুরে নারীদের বেশি ওজন ও স্থূল হয়ে যাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হলো তাদের মধ্যে টেলিভিশন দেখার প্রবণতা বেশি। যে নারীরা সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন হলেও টেলিভিশন দেখেন তাদেরও গবেষকরা বেশি ও স্থূল বলে অভিহিত করেছেন। অবশ্য এই মুটিয়ে যাওয়া ও বেশি ওজন বিশিষ্ট হওয়ার পেছনে সম্পদশালী ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিও জড়িত ছিল। এই গবেষণা এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের নারীদের বিশাল অংশ স্থূলতা ও বেশি ওজন হওয়ার কারণে এনসিডি বা অসংক্রামক নানা রোগে ভুগছেন। এ ছাড়া মুটিয়ে যাওয়ার পেছনে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম না করার প্রবণতা, বিত্তশালী পরিবারের নারীদের কাজ না থাকা, বসে বসে টেলিভিশন দেখে সময় কাটানো, সম্পদশালী পরিবার বলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া এবং বয়স্ক হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এতদিন উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মধ্যেই বেশি ছিল। এখন পৃথিবীর নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও এ প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশি ওজন ও স্থূলতা টাইপ-২ ডায়াবেটিস (এই ধরনের ডায়াবেটিস খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালী পরিবর্তন করে নিলেই সুস্থ থাকা যায়) নিয়ে আসে। একই সাথে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ (হার্টের রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া), হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ (উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে) ব্রেইন স্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের জন্য সরাসরি দায়ী বেশি ওজন ও স্থূলতা। বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালে অসংক্রামক রোগে ৮ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আইসিডিডিআর’বি বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মৃত্যুর ৫৯ শতাংশ হচ্ছে অসংক্রামক রোগের কারণে এবং এ কারণে বছরে আট লাখ ৮৬ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।
অপর দিকে বাংলাদেশে ২০ শতাংশ পুরুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও ৩২ শতাংশ নারী ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে। বছরে ডায়াবেটিসে মারা যাচ্ছে এক লাখ ২৯ হাজার মানুষ। অপর দিকে কেবল তলপেটের চর্বির কারণে নারীরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি হারে করোনারি হার্ট ডিজিজেও ভুগছেন। তবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে নারীদের মধ্যে এসব অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা এবং চিকিৎসার যথেষ্ট অবহেলা রয়েছে। স্থূলতার ফলস্বরূপ নারীরা একটা সময় পোস্টমনোপোজাল ব্রেস্ট ক্যান্সারে (বয়সের কারণে মাসিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখা দেয়া স্তন ক্যান্সার) আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, নারীদের শারীরিক পরিশ্রম না করার প্রবণতাই তাদের বেশি স্থূলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম করার প্রবণতা কম। আবার গ্রামীণ নারীর চেয়ে শহুরে নারীর মধ্যে স্থূলতা বেশি। গ্রামীণ নারীরা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাদের বেশি পরিশ্রম করতে হয় শহুরে নারীদের তুলনায়।
আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, নারীরা এমনিতেই পুরুষের চেয়ে কম পরিশ্রম করেন। ৯ হাজার ২৭৫ জনের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় ৫৩.৬ শতাংশ নারী এবং ১৫.৪ শতাংশ পুরুষকে পাওয়া গেছে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন না।