Naya Diganta

পরমাণু চুক্তি আলোচনায় ‘লিখিত প্রতিক্রিয়া’ পেশ ইরানের

বিশ্বের ক্ষমতাধর কয়েকটি শক্তির সাথে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধার করার চূড়ান্ত রোডম্যাপ হিসেবে দেশটি একটি ‘লিখিত প্রতিক্রিয়া’ জমা দিয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত ইরানের রাষ্ট্র-চালিত নিউজ এজেন্সি ইসলামি রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (আইআরএনএ ) এ বিষয়ে বিশদ কোনো কিছু জানায়নি।

আইআরএনএ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তিনটি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে- এর মধ্যকার দুটি ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মৌখিক নমনীয়তা প্রকাশ করেছে। তবুও এই বিষয়গুলো লিখিত এই প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘তৃতীয় সমস্যাটি (চুক্তি) অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দেয়ার সাথে সম্পর্কিত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে।’

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অধীনে তেহরান বারবার চুক্তিতে পৌঁছাতে বিলম্বের জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করেছে। সোমবার ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।

বৈদেশিক বিষয় ও নিরাপত্তা নীতি সম্পর্কিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)-র মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, সোমবার রাতে ইইউ ইরানের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।

নাবিলা মাসরালি বলেন, ‘আমরা এটি পাঠ করছি এবং অন্যান্য জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের (জেসিপিওএ) অংশগ্রহণকারীদের সাথে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করব।’

২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করার পর থেকে ইরান আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানোয় পরোক্ষ আলোচনায় ইইউ মধ্যস্থ্যতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইইউ-এর মাধ্যমে ইরানের বক্তব্য পেয়েছে এবং ‘সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একই সাথে আমরা ইইউ ও আমাদের অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করছি।’

প্রাইস পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘মৌলিক পয়েন্ট’- এর সঙ্গে একমত। ১৬-১৭ মাস পার হয়ে যাওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে (ইরান-যুক্তরাষ্ট্র) কী আলোচনা করা যেতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।’

সোমবার এর আগে প্রাইস ইরানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে ‘অগ্রহণযোগ্য দাবি’- করার অভিযোগ করে। যাতে বলা হয়েছিল, তেহরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে ব্যাপকভাবে সীমিত করবে।

প্রাইস বলেন, ‘ইরান যদি এই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে চায়, তবে তাদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। তাদের সেই বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড পরিবর্তন করতে হবে, প্রথমে যেগুলোর জন্য এই নিষেধাজ্ঞার জন্ম হয়েছে।’

সর্বশেষ হিসেব অনুসারে, ইরানে প্রায় তিন হাজার আট শ’ কিলোগ্রাম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে।দ

চুক্তি অনুযায়ী তেহরান ৩.৬৭% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের নজরদারির ভিত্তিতে তিন শ’ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের মজুদ বজায় রাখতে পারবে।

ইরান এখন ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। দেশটি এখন ৯০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ধাপ থেকে প্রযুক্তিগতভাবে কিছুটা দূরে রয়েছে বলে আমেরিকার দাবি।

অপ্রসারণ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের এখন কমপক্ষে একটি পারমাণবিক বোমার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে।