Naya Diganta

মিরপুর আবাসন প্রকল্প পিপিপি থেকে বাদ

বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়া অবশেষে ‘মিরপুর আবসন প্রকল্প’ পিপিপি তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। প্রথমে বলা হয়েছিল, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মাধ্যমে ‘মিরপুর ইনটিগ্রেটেড টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট (এমআইটিডি ফেস-ওও)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৬২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ জন্য সিঙ্গাপুরের সরকারি একটি কোম্পানির সাথে পিপিপি আওতায় প্রাথমিক একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে জানায় তারা এই প্রকল্পে থাকতে আর ইচ্ছুক নয়। ফলে এখন আর পিপিপির আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে না। আদৌ এই প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানা গেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় মিরপুরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রকল্পটি পিপিপি তালিকা থেকে প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আজ বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে ঢাকা শহরের আবাসন সমস্যা সমাধানের অংশ হিসেবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ মিরপুর ৯ নম্বর থেকে ১১ নম্বর সেকশনে ৮০ একর জমির ওপর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটির আওতায় ১০৭টি ১৪-তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
প্রস্তাবক মন্ত্রণালয় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে জানায়, এই ঘনবসতিপূর্ণ মিরপুর এলাকায় ১৫৪৫ বর্গফুট, ১৩৩৮ বর্গফুট এবং ৮৭৮ বর্গফুট বিশিষ্ট ফ্ল্যাটের চাহিদা রয়েছে। প্রকল্প এলাকাটি মিরপুর ডিওএইচএস সংযোগকারী ১০০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা শহরের নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পটিও ওই এলাকার কাছে। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং আবাসিক ফ্ল্যাটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৫৪৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ভবন ৬১টি, ১৩৩৮ বর্গফুটের ২৩টি এবং ৮৭৮ বর্গফুটের ২৩টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৬২৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং প্রাথমিকভাবে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতি অনুসরণ করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং সিঙ্গাপুর সরকারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ শেষে নীতিগত অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সভায় প্রস্তাবটিতে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
এর আগে প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতি অনুসরণ করে বাস্তবায়নে ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর বোর্ড (আইই সিঙ্গাপুর) এর সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ এর ২০১৮ সালের ১২ মার্চ তারিখে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ)স্বাক্ষরিত হয়। এমওইউ ছিল ২ বছর।
সূত্র জানায়, এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর পিপিপির সঙ্গে তথ্য আদান প্রদানের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সিঙ্গাপুরের দুইজন বিনিয়োগকারী ২০১৮ সালের নভেম্বর ও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রকল্প সাইট পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর তারিখে এমওইউ থেকে প্রকল্প প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করে।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রকল্পটি জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদের জন্য এমওইউ টি ২০১৮ সালের ১২ মার্চ স্বাক্ষরিত হয় যা ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এমওইউ থেকে প্রকল্পের নাম প্রত্যাহারের জন্য এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর অনুরোধ করে।
প্রকল্পটি জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য নতুন কোনো দেশ থেকে কোনো প্রকার অফার পাওয়া যায়নি বলে পিপিপিএ থেকে জানানো হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২২২তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তক্রমে ‘মিরপুর ইনটিগ্রেটেড টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট (এমআইটিডি ফেস-ওও)’ শীর্ষক প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে পিপিপি তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।