Naya Diganta

বিরিয়ানি বৃত্তান্ত

বিরিয়ানি বৃত্তান্ত

জানো, মোগলদের হারেমে শোভা পেত ঝিনুক ও হাতির দাঁতের কাজ করা চন্দন কাঠের নিচু চৌকি? চৌকির ওপরে বিরিয়ানি ও অন্যান্য খাবার সাজানো থাকত। সোনার পানদানে পান ও মসলা। পাশে থাকত লম্বা নলযুক্ত রুপা ও রঙিন স্বচ্ছ কাচের হুক্কা। এভাবেই মোগল সম্রাটদের লোভনীয় খাবার হিসেবে বিরিয়ানির আবির্ভাব। তবে প্রায় তিন হাজার বছর আগে বিরিয়ানির মতো একটি খাদ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় ইতিহাসে। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ষষ্ঠ অধ্যায়ের একটি শ্লোকে গর্ভবতী মহিলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছেÑ ‘সেই মহিলা যেন বলশালী ষাঁড়ের গোশত ও চাল, ঘিসহ রন্ধন করে আহার সম্পন্ন করেন। তাহলে তার যে পুত্রসন্তান জন্মাবে সে হবে বিদ্বান, যশস্বী, প্রতিনিয়ত পারিষদাদিতে যাতায়াতকারী এবং সবাই শুনতে আগ্রহী এমন বাগ্মী। এমন পুত্র সব বেদ আয়ত্ত করতে পারবে এবং পূর্ণ জীবন লাভ করবে।’ আর্যরা সামাজিক ও ধর্ম উৎসবের সময়ে গোমাংস, চাল ও ঘি দিয়ে রান্না করে পরিবেশন করতেন। রামায়ণে বিরিয়ানির মতো এক ধরনের খাদ্যের উল্লেখ আছে। তার নাম ‘মাংসভূতদানা’। সীতা বনবাসে থাকাকালে রামচন্দ্রকে প্রায়ই চাল, হরিণের মাংস, ঘি, সবজি ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে ‘মাংসভূতদানা’ রান্না করে খাওয়াতেন। অনেকের মতে, সেটাই এখনকার বিরিয়ানি।
‘বিরিয়ানি’ ফারসি শব্দ যার অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেয়া। মোগলরা এ দেশে বিরিয়ানি জনপ্রিয় করে। প্রাচীন তুর্কিরা ‘পিলাও’ নামে বিরিয়ানির মতো এক ধরনের খাবার খেত ঈদের সময়। সেটা পরে হয় ‘পোলাও’। পরে পোলাও পারস্য ও আফগানিস্তান হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল বিরিয়ানিরূপে। পারস্যের ‘বিরিয়ান’ ভারতবর্ষে মোগল বাবুর্চিখানায় ঢুকে হয়ে গেল বিরিয়ানি।
লম্বা দানার সুগন্ধি চাল, গরু বা খাসির গোশত, ঘি, দই ও বিভিন্ন প্রকার মসলা বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ। বিরিয়ানি দুই ধরনেরÑ কাচ্চি ও পাক্কি। পাক্কি বিরিয়ানিতে গোশত ও চাল দুটোই অর্ধেক রান্না করে দমে বসানো হয়। কাচ্চি বিরিয়ানিতে গোশতকে পেঁপে আর টকদই দিয়ে বারো ঘণ্টা মেখে রেখে তারপর ধোয়া চালের সাথে ওই গোশত মিশিয়ে দমে বসানো হয়। ১৭ শতকের শেষ দিকে কলকাতায় বিরিয়ানি রান্না শুরু হয়। ঢাকায় তেহারি নামে এক ধরনের হালকা বিরিয়ানি রান্না করা হয়। বিরিয়ানি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। হাজীর বিরিয়ানি নামকরা। পাঞ্জাবের নবাব এক সময় ৪৯ রকমের বিরিয়ানি তৈরি করিয়েছিলেন।