Naya Diganta

মেয়ের সুখের সংসার দেখা হলো না মায়ের

এই বাড়ির ষষ্ঠ তলার ৬০৪ নম্বর ইউনিটে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন উত্তরার গার্ডার চাপায় নিহত ফাহিমা বেগম।

সংসারের অভাব গোচাতে মেয়ে রিয়া মনি ও ছেলে ফাহাদকে নিয়ে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি কারখানায় চাকরি করতেন উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে গার্ডার চাঁপায় নিহত ফাহিমা বেগম। আশুলিয়ার খেজুরবাগানে ছোট একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন তারা। দুর্ঘটনায় শুধু ফাহিমা নিহত হয়নি। নিহত হয়েছেন তার বোন ঝর্ণা বেগম, ঝর্ণা বেগমের দু’বছরের মেয়ে জান্নাত এবং ছয় বছরের ছেলে জাকারিয়া। বৌভাতের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথেই মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এতে নিজের মেয়ের সুখের সংসার দেখে যেতে পারলেন না তিনি।

মঙ্গলবার সকালে রিয়া মনির মা যে বাসায় থাকতেন সেখানে গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।

সেখানে বসবাসরত তার প্রতিবেশীরা জানান, আশুলিয়ার খেজুরবাগানে হাজী আশরাফ উদ্দিনের ভাড়া বাড়ির অষ্টম তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার ৬০৪ নাম্বার ইউনিটে থাকতেন তারা। রিয়ার মা ফাহিমা স্থানীয় সিআইপিএল নামের একটি পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি পদে চাকরি করতেন। রিয়া একই এলাকার রেডিয়ান্স ফ্যাশন লিমিটেড এ নিডেলম্যান হিসেবে চাকরি করতেন।

বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে রিয়ার মা এই বিল্ডিংয়ের ৬০৪ নম্বর ইউনিটে একটি কক্ষ ভাড়া নেন। ওই কক্ষেই তিনি তার মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন। রিয়া অবশ্য চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাও করতেন। গত শনিবার বিয়ে হয় রিয়ার। বিয়েতে তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে রিয়ার খালা, খালাত ভাই-বোন আসেন। বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে রিয়া তার মা ফাহিমা, স্বামী হৃদয়, তার শ্বশুর রুবেল, খালা ঝর্ণা বেগম, খালাত ভাই জাকারিয়া ও খালাত বোন জান্নাত নিয়ে একটি প্রাইভেটকারে আশুলিয়ার খেজুরবাগানে তাদের বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে উত্তরা জসিম উদ্দিন রোডে নির্মাণাধীন গার্ডার চাঁপায় রিয়া ও তার স্বামী ছাড়া সকলেই নিহত হন।

পাশের ফ্লাটের নাসরিন বেগম জানান, এই যে এত বড় একটা দুর্ঘটনায় এতগুলো জীবন প্রদীপ নিভে গেল এর দায় ভার কে নিবে? রিয়ার ছোট একটা ভাই রয়েছে তার দায়িত্ব কে নিবে? তারা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন, দারিদ্রতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করলেও রিয়ার ছোট ভাই ফাহাদকে একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করাতেন। রিয়া নিজেও পড়াশোনা করতেন।

রিয়াদের পাশের রুমে থাকা রুবেল বলেন, রিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তার খালা ঝর্ণা, খালাত বোন জান্নাত ও খালাতো ভাই জাকারিয়া। তারা সকলেই মারা গেছে। এখন তাদের পরিবারের দায়িত্ব কে নিবে? নিমেশেই তাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।