Naya Diganta

পুরান ঢাকায় আবারো আগুনে মৃত্যু ৬ জনের

লালবাগের কামালবাগে পলিথিন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড : নয়া দিগন্ত

পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় একটি চারতলা ভবনে আগুনে ছয়জন পুড়ে মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে দেবিদাসঘাট এলাকার ওই ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ভেতরে আটকা পড়ে ছয়জন মারা যান।
নিহতদের সবাই ওই ভবনের নিচে একটি রেস্টুরেন্টের (বরিশাল হোটেল) কর্মচারী ছিলেন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর কয়েকজন নিখোঁজ ছিল বলে জানা যায়। শেষে একের পর এক লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। নিহতরা রাতে ডিউটি করে হোটেলের ওপর একটি রুমে ঘুমাচ্ছিলেন।
চারতলা ভবনের নিচতলায় ছিল রেস্টুরেন্ট আর উপরে ছিল প্লাস্টিক কারখানা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, প্রথমে রেস্টুরেন্টের সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্লাস্টিক কারখানায়ও।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ভবনের নিচতলায় বরিশাল হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। তিনি বলেন, আগুনের শিকার দালানসহ আশপাশের কোনো ভবন নির্মাণে নিয়মনীতি মানা হয়নি। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওই চারতলা ভবনের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।


ডিএমপি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সরকারি জমি লিজ নিয়ে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। যে হোটেল থেকে আগুন লেগেছে, সেখানে আগে গ্যাসের লাইন ছিল। বিল বকেয়া থাকায় হোটেলটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তখন তারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে থাকে। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানান, আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন ওই হোটেলে আগুন জ্বলছে। এরপর সেখান থেকে আগুন আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। ভবনটির নিচতলার হোটেলটির ঠিক ওপরে অর্থাৎ দোতলায় একটি ছোট ঘর আছে, ওই ঘর থেকেই সব লাশ পাওয়া গেছে। সবগুলো দেহই পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুইজন নিখোঁজের বিষয়ে আমাদের কাছে তাদের পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। ওসমান ও বিল্লাল নামের নিখোঁজ দুই হোটেল কর্মচারী ওপরের তলায় থাকতেন। ওই দুইজন নিহতদের মধ্যে আছেন কি না তা পরবর্তীতে জানা যাবে। লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত পাকা। চতুর্থ তলায় টিন শেড ঘর। এই টিন শেড ঘরটি প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ও মজুতের গুদাম। আগুন লাগার পর তা প্লাস্টিক কারখানায়ও ছড়িয়ে পড়ে। তারা জানান, সকাল থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। তাই অন্য দিনের মতো কারখানায় শ্রমিক ছিল না। এই ভবনের আশপাশে একাধিক পলিথিন কারখানাও রয়েছে।


মর্গে স্বজনদের ভিড় : এদিকে নিহতদের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে নেয়ার পর স্বজনরা সেখানে ভিড় করেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তারা প্রথমে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা কেউ নিখোঁজ ছেলে, আবার কেউ স্বামী ও ভাইকে খোঁজ করেন। সেখানে লাশ না পেয়ে ছুটে যান মর্গে।
মিটফোর্ড মর্গ সূত্র জানায়, গত রাতে নিহত শ্রমিকদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন স্বজনরা। তারা হলেন - শরীয়তপুরের ঘোশাইরহাট উপজেলার দক্ষিণ বড় কাসমা গ্রামের আবুল কালাম সরদারের ছেলে আব্দুল ওহাব ওসমান (২৭), হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামই গ্রামের রাকেশ সরকারের ছেলে স্বপন সরকার (১৯), বরিশালের মুলাদী উপজেলার টুমচর গ্রামের মৃত আলম সরদারের ছেলে বিল্লাল (৩৫), বরিশালের হিজলা উপজেলার শঙ্কর পাশা গ্রামের মোস্তফার ছেলে মোতালেব (১৬), কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তিতচর গ্রামের মিজানের ছেলে মো: শরীফ (১৬) এবং মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ আকাল বরিশ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার হিলালুর ছেলে রুবেল (২৮)। নিহতদের লাশ আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।