Naya Diganta

শোক দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মানুষের ঢল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত হতে থাকে। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে সরকারি ও দলীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়।
সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। সকাল সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, এ এইচ এম খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা: দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।
এর আগে সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালো ব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করার পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণ গ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
খুলনায় কর্মসূচি পালন
খুলনা ব্যুরো জানায়, যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে গতকাল খুলনায় বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়। সব সরকারি-বেসরকারি ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর দিনভর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল ও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল আটটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী, কেএমপির কমিশনার মো: মাসুদুর রহমান ভূঞা, রেঞ্জ ডিআইজি ড. খ: মহিদ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠন। এরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার জিনাত আরা আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। খুলনায় বিজিবির উদ্যোগে গরিব দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
সিলেটে নানা কর্মসূচি
বাসস জানায়, সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের সদস্যরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পরে একে একে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ, মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ১০টায় কবি নজরুল অডিটোরিয়াম থেকে শোক র্যালি বের করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। এ দিকে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ দিবসটিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। বাদ জোহর হজরত শাহজালাল (রহ:) মাজার মসজিদে খতমে কুরআন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগ সকাল সাড়ে ৯টায় কোর্ট পয়েন্টে মিলিত হয়ে শোভাযাত্রাসহ জেলা প্রশাসনের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বাদ জোহর গুলশান সেন্টারে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি পালন : এ দিকে বগুড়া, যশোর, কুমিল্লা, গাজীপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জসহ সব জেলায় সরকারি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয় বলে নয়া দিগন্তের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া দিনাজপুরের হাবিপ্রবি ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা কর্মসূচি পালিত হয়।