Naya Diganta

বাজারে ক্রেতা বেশি বিক্রি কম ব্যবসায়ীদের হাহুতাশ

আগে প্রতি কেজি তাজা রুই মাছ কেনা হতো ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আসতে ট্রাক ভাড়া পরিশোধ করতে হতো ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। ফলে পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি কেজি রুই মাছ ঢাকায় পৌঁছতে ব্যয় হতো ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। খুচরা বিক্রি করা হতো ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। এতে কেজিতে গড়ে মুনাফা হতো ৩০ টাকা। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। মাছ কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছ ঢাকায় আনতে খরচ পড়ছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। বিক্রি করা হচ্ছে ২ কেজি ওজনের রুই মাছ প্রতি কেজি সাড়ে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা। গড়ে মুনাফা হচ্ছে ১০ টাকা। আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। একদিকে মুনাফা কমেছে, পাশাপাশি কমেছে বিক্রি। আগে সারা দিন মাছ বিক্রি করে যেখানে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা মুনাফা হতো, এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। বিপরীতে চাল, ডাল তেলসহ সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সবমিলেই জীবন চালানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
কথাগুলো রাজধানীর মেরাদিয়া ভাসমান মাছ বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ আহমদের। তার মতো সব ধরনের প্রান্তিক ব্যবসায়ী এখন হা-হুতাশ করছেন। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। এতে বাজারে ক্রেতা যথেষ্ট থাকলেও কিন্তু বিক্রি হচ্ছে কম।
নিজাম নামের অপর এক খুচরা বিক্রেতা জানান, প্রতি কেজি সবজির দাম গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে দাম শুনে আগে যেখানে একজন ক্রেতা এক কেজি সবজি কিনছেন, সেখানে এখন আধা কেজি কিনছেন। আবার আগে যেখানে তিন চার আইটেমের সবজি কিনতেন এখন দুই আইটেমের সবজি কিনছেন। এভাবে বিক্রি কমে গেছে। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে কম, পাশাপাশি নিট মুনাফাও গেছে কমে। ফলে দিন শেষে যে আয় হচ্ছে তা দিয়ে নিজের পরিবার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে মাছ ও সবজি কিনতে এসেছিলেন আব্দুস সালাম নামের একজন ক্রেতা। তিনি জানান, মাসে ৩০ হাজার টাকা বেতনে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুই রুমের বাসা ভাড়া করে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে রাজধানীতে কোনোরকমে জীবনযাপন করে আসছেন। তিনি জানান, বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বাসা থেকে বাজারের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তার অর্ধেকও তিনি কিনতে পারবেন না। অথচ তালিকার প্রতিটি পণ্যই অতি জরুরি। আধা ঘণ্টা ধরে মাছের বাজারে ঘুরছেন। সস্তায় কোনো মাছ পাওয়া যায় কি না। প্রায় প্রতিটি দোকানেই মাছের দাম জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু সব মাছই তার নাগালের বাইরে। পুঁটি মাছ আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি পাওয়া যেতো। তিনটি মাছের দোকানে তিনি পুঁটি মাছের দাম জিজ্ঞেস করেছেন। বিক্রেতা দাম হাঁকাচ্ছেন প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। মাছ কিনলে অন্য বাজার করা যাচ্ছে না। তাই মাছ না কিনেই কিছু সবজি ও এক হালি ডিম কিনে বাসায় যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে এতে ঢাকায় বসবাস করাই কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক দিনের মধ্যেই ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি হয়তো কোনো একটি মেসে উঠবেন। এ ছাড়া সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান।