Naya Diganta
উপকূলে বাঁধ ভেঙে প্লাবন

স্থায়ী সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে

উপকূলে বাঁধ ভেঙে প্লাবন

সাগরে নিম্নচাপের কারণে তিন নম্বর সতর্কসঙ্কেত দেয়া হয়েছে ক’দিন আগেই। এর সাথে যোগ হয়েছে পূর্ণিমা ও প্রবল বৃষ্টি। ফলে সৃষ্টি হয়েছে কিছুটা অস্বাভাবিক উঁচু জোয়ার ও উত্তাল ঢেউ। আর এর পরিণতিতে দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল হুমকির মুখে পড়েছে, প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজারে দেখা দিয়েছে সমুদ্রের ভাঙন। বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীতে প্লøাবিত হয়েছে জনপদ। কোথাও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম সাগরের নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে, কোথাওবা পৌরসভা। এতে ডুবে গেছে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। প্লাবিত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস সংক্ষিপ্ত করে ছুটি দেয়া হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল।
গত দু-তিন দিনে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত খবর থেকে পরিস্থিতির বিস্তারিত জানা যাচ্ছে। গত শনিবার খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। স্থানীয় জনগণ ভেঙে যাওয়া বাঁধ তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করলেও পরদিন তা আবার ভেঙে যায়। এতে গ্রাম প্লøাবিত হয়ে শত শত পরিবার পানিবন্দী।
জোয়ারে ঝালকাঠিতে বিষখালী ও সুগন্ধাসহ সব নদীর পানি বিপদসীমার উপরে। এসব নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চারটি উপজেলার অর্ধশত গ্রাম প্লøাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের দিন কাটছে দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মধ্যে। কাঁঠালিয়া উপজেলার আউড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৪টি ঘর দু-তিন ফুট পানিতে ভাসছে। অন্য দিকে, উপজেলা পরিষদ ভবন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন তিন ফুট পানির নিচে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। বাঁধ ভেঙে কাঁঠালিয়া উপজেলার ২১টি, ঝালকাঠি সদরের আটটি, নলছিটির ৯টি ও রাজাপুরের ১১টি গ্রাম প্লøাবিত হয়েছে। আমতলী (বরগুনা) কৃষি অফিস জানায়, আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। বেতাগী পৌরশহরসহ ইউনিয়নগুলোর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এ উপজেলার পাঁচ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালীর উপকূলেও একই অবস্থা। নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম প্লাবিত। নিঝুমদ্বীপের বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি অবাধে হুহু করে ঢুকে গ্রাম ভাসিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, উপকূলের লাখো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গত তিন দিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ১০টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে পর্যটক ও স্থানীয়রাও শঙ্কিত। এখানে প্রতি বছরই বর্ষায় সাগরের আগ্রাসন বাড়ছে। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা করে টেকসই বাঁধ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
উপকূলীয় এই বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানোর উপায় ছিল। বর্ষার আগেই উপকূলীয় বাঁধের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হলে এই সামান্য জোয়ারে বাঁধ ভাঙত না। এখন ভেঙে যাওয়া বাঁধের তালিকা করে মেরামতের জন্য তহবিল চাওয়া হবে, হয়তো কিছু কাজও হবে। কিন্তু যাদের অবহেলায় বাঁধ ভেঙে যায় তারা বহালতবিয়তেই থাকবেন। আর লোনা পানি ঢুকে ক্ষেতের ফসল ও উর্বরা শক্তির যে ক্ষতি হলো তার কোনো প্রতিকার হবে না। সাধারণ মানুষের ক্ষতি নিয়ে ভাবার সময় কারো নেই।
উপকূলের মানুষের দুর্ভোগ কিন্তু এক মৌসুমের বিষয় নয়। এর সম্পর্ক আছে বিশে^র পরিবেশ-প্রতিবেশের সার্বিক অবনতি এবং বৈশি^ক উষ্ণায়ন ইত্যাদির সাথে। এ নিয়ে স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করতে হবে।