Naya Diganta

৫ হাজার পুঁজিতে ৬ মাসে ১০ লাখ টাকার ব্যবসা মাওলানা হাবিবুল্লাহ জোয়ারদারের

৫ হাজার পুঁজিতে ৬ মাসে ১০ লাখ টাকার ব্যবসা মাওলানা হাবিবুল্লাহ জোয়ারদারের

তিনি একজন আলেম। চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ২০১৫ সালে দাওরায়ে হাদীস পড়ে পড়াশোনা শেষ করছেন। শিক্ষকতা শুরু করেন বাবার পরিচালিত একটি কওমি মাদরাসায়। বেতন পেতেন খুবই সামান্য। যা দিয়ে পরিবারের খরচ জোগাতে খুবই কষ্ট হতো। সংকল্প করেন ভিন্ন কিছু করার। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। ছয় মাসের ব্যবধানে এখন তার ব্যবসার পুঁজি ১০ লাখ টাকার বেশি।

বলছিলাম খুলনা ডুমুরিয়ার মাওলানা বজলুর রহমান জোয়ারদারের ছেলে মাওলানা হাবিবুল্লাহ জোয়ারদারের কথা। তিনি কখনো চিন্তাও করেননি মাদরাসা পড়ানোর পাশাপাশি ব্যবসা করবেন। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ব্যবসা করেন। নিজেদের পণ্যের বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রি করেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ অনলাইনে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চমৎকৃত বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ক্রয় করে প্রতারিতও হন অনেকবার। বিজ্ঞাপনে পণ্য যেমন দেখেছিলেন, বাস্তবে পণ্যটি তার ধারেকাছেও নেই। সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও অনলাইনে ব্যবসা করবেন। কিন্তু, অন্যকে ঠকানোর জন্য নয়, মানুষকে ভালো কিছু দেওয়ার জন্য।

কিন্তু, কী নিয়ে ব্যবসা করবেন। ছোট বয়স থেকে তিনি মাদরাসায় থেকেছেন। পড়াশোনা শেষ করেও মাদরাসায়ই শিক্ষকতা করছেন। ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি মধুর ব্যবসা ধরলেন। কারণ, তার কর্মস্থল খুলনা সুন্দরবনের কাছেই। এখন থেকে মধু সংগ্রহ করা যেমন সহজ, তেমন এই পণ্য সংগ্রহ করতেও সুবিধা হবে না।

মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করে ফেসবুকে 'তাকওয়া শপ বিডি' নামে পেইজ খুলে মধু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ কল্পনাও করেননি এত তাড়াতাড়ি সাড়া পাবেন। চট্টগ্রাম থেকে একজন ক্রেতা পাঁচ হাজার টাকার মধু অর্ডার করেন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ অনেকটা উৎকণ্ঠার মধ্যেই পণ্য চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেন। ক্রেতা মধু পেয়ে খুব খুশি হন। মাওলানা হাবিবুল্লাহকে উৎসাহ দেন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মাদরাসা পড়ানোর পাশাপাশি এই ব্যবসা তিনি চালিয়ে যাবেন।

মাওলানা হাবিবুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমার এই ব্যবসায় অনেক বরকত দিয়েছেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজির ব্যবসায় ছয় মাসে আমার পূঁজি হয়েছে ১০ লাখ টাকার বেশি। এখন আমি স্বাচ্ছন্দ্যে চলার পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারি। যা আমার জন্য অনেক তৃপ্তির একটি বিষয়।

মাওলানা হাবিবুল্লাহ আরো বলেন, আমি শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, পণ্যে কখনো ভেজাল মেশাবো না। মধু এমন একটি পণ্য, যা নিয়ে অনেকেই দুই নম্বরি করে। ক্রেতা যখন আমার কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে, তখন খুব খুশি হয়। কারণ, সে ভালো ও খাঁটি মধু পায়। পরবর্তীতে দেখা যায় সে আমার কাছ আরো মধু নেয় এবং আরো ক্রেতারও ব্যবস্থা করে দেয়।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন, প্রতিষ্ঠানে অসুবিধা হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে আলেম উদ্যোক্তা মাওলানা হাবিবুল্লাহ বলেন, কষ্ট একটু বেশি হয়। তবে, মাদরাসার পড়াশোনার ক্ষতি হতে দেই না।

তিনি বলেন, আলেমরা যদি ব্যবসায় একটু সময় দিতে পারেন। তাহলে মানুষ ভালো জিনিস পাবে। আলেমরাও স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তবে, লক্ষ রাখতে হবে তার অদূরদর্শিতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে কোনো ক্রেতা যেন না ঠকেন।