Naya Diganta

লোডশেডিং ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পর্যটক কমেছে ২০ শতাংশ

দেশে চলমান লোডশেডিং ও জ¦ালানির বাড়তি দামে দৈনন্দিন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে। ইতোমধ্যে এ খাতে পর্যটক কমেছে ২০ শতাংশের ওপরে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরো পর্যটক কমে এ খাতে ঝুঁকির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বেন হাজার হাজার কর্মী। অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে এ খাতের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ঈদ ঘিরে পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয় কক্সবাজার এবং সিলেটে। কিন্তু সম্প্রতি জ¦ালানির দাম বৃদ্ধির সাথে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় পর্যটন খাতেও ব্যয় বেড়েছে। যার কারণে গত কয়েক দিন ধরে পর্যটক কমছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলছেন, দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে করোনার পর আবারো এ খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে জানান, করোনায় বড় লোকসানের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পর্যটন খাত। এ নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল। গেল ঈদেও সারা দেশে কোটি পর্যটকের সমাগম হয়েছে। যাতে ব্যবসা হয়েছে হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জ¦ালানির দাম বৃদ্ধির পর পর এ খাতেও ধাক্কা লাগে। পরিবহন খরচের সাথে অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যটকের যাতায়াত কমেছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরো পর্যটক কমে এ খাতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও বিপণন) মো: জিয়াউল হক হাওলাদার জানান, করোনা আতঙ্ক কমার পর দেশব্যাপী লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। ফলে করোনা লোকশান কেটে ঘুরে দাঁড়ানো এ খাতে ভালো ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধিতে এর কিছুটা প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পর্যটকরাও ব্যয় সঙ্কুলানে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে এখন ব্যবসা কিছুটা কমেছে। তিনি জানান, ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সামনে হয়তো হোটেল মোটেলসহ বিনোদন খাতে খরচ কিছুটা বাড়তেও পারে।
অন্যদিকে ট্যুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, জ¦ালানির দাম বৃদ্ধি পেলে সব কিছুতেই একটা প্রভাব পড়ে এটা স্বাভাবিক বিষয়। এ খাতেও তাই হয়েছে। হঠাৎ মানুষের ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বাড়ায় এ খাতেও তার প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে।
সিলেট হোটেল ও গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল জানিয়েছেন, তারা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন। একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে জ¦ালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ব্যবসা লাটে উঠার অবস্থা।
তিনি জানান, বন্যার সময়ে লোকসানে পড়া সিলেটের পর্যটন খাত এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং ও জ¦ালানির বাড়তি দাম। ফলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়।
তার ভাষায় বন্যার পর থেকে এমনিতেই পর্যটক কমে গিয়েছিল। তবুও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন তারা। কিন্তু এখন একদিকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটরের বাড়তি খবর সব মিলিয়ে এখন পর্যটক থাকলেও টিকে থাকা মুশকিল। কিন্তু এর মধ্যে এখন পর্যটক আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ফলে সামনে কী হবে তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন।
একই আশঙ্কা প্রকাশ করে কক্সবাজার হোটেল ও রেস্তোরাঁ ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা জানান, এখনকার মৌসুমে কক্সবাজারে এমনিতেই পর্যটক অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম হয়। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধির পর বিশেষ করে পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে পর্যটক কমে গেছে। তিনি বলেন, নভেম্বরের আগে আর ব্যবসা ভালো অবস্থায় আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে ব্যয় বৃদ্ধির আতঙ্ক মানুষের মধ্যে কমে গেলে হয়তো আবার জমে উঠতে পারে সম্ভাবনার এ খাত।