Naya Diganta

মাদক সেবন ও তার প্রতিকার

বর্তমান সমাজে যত প্রকার ব্যাধি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মাদক সেবন। এই ব্যাধি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা প্রতিটি সেক্টরে রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদকের আসর অনেক ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা এক কোটি, যা একটি দেশের জন্য অনেক তিকর। একজন ভালো ছেলেও যখন তার বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করে, তার বন্ধুরা যদি মাদকাসক্ত হয়। তখন ওই বন্ধুরা তাকে মাদক সেবন করার জন্য বাধ্য করে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাদক সেবনকারী সিনিয়র শিার্থীরা, তাদের জুনিয়র শিার্থীদের মাদক সেবন করতে বাধ্য করে। অনেক সময় যখন একজন ব্যক্তি হতাশায় ভেঙে পড়ে, তখন সেও একপর্যায়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। এভাবেই মাদকে আসক্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই মাদকাসক্ত ব্যক্তিরাই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় অপরাধ করতে থাকে। বিশেষ করে তারা নারীদের সাথে খারাপ আচরণ, চাঁদাবাজি, মানুষদের হেনস্তাকরণ, হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে। বর্তমান সমাজে যত বড় বড় অসামাজিক কাণ্ড ঘটছে তার বেশির ভাগই মাদকাসক্ত ব্যক্তিরাই করছে। অনেক সময় সেই মাদকাসক্ত ব্যক্তিদেরও মাদকবিরোধী আন্দোলন ও মানববন্ধনের প্রথম সারিতেই দেখা যায়! যারা মাদক সেবন করছে তারাই আবার এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে!
মাদক সেবনের ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের তির শিকার হয়। মাদক সেবনের ফলে ফুসফুস ও মস্তিষ্কের অনেক তি হয়। মাদক সেবনকারীর হৃদয় স্পন্দন ও নাড়ির গতি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তাদের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যায়। মুখ ও গলা শুকিয়ে যায়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো দিন দিন অকেজো হতে থাকে। মাদক সেবনের ফলে হজম শক্তি বিনষ্ট হয় এবং কাশি ও যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়।

মাদক সেবন বন্ধ করতে হলে সন্তানদের ছোট থেকেই ধর্মীয় জ্ঞানে আলোকিত করতে হবে। তাদের নৈতিক শিায় শিতি করতে হবে এবং নৈতিকতাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সন্তান বড় হওয়ার পাশাপাশি সে কোন ধরনের বন্ধু গ্রহণ করছে, কোন ধরনের বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করছে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিতামাতা সব সময় সন্তানদের আদর স্নেহ দিয়ে পরিবারের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে। শিকরা ছাত্রদের তাদের আদেশ ও উপদেশের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এতে শিার্থীরা মাদক সেবনের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হবে।

মসজিদের ইমাম, খতিব ও বক্তারা কুরআন হাদিসের আলোকে মাদকের কুফল সম্পর্কে, দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির সম্পর্কে ভালোভাবে আলোচনা করলে মাদক সেবন অনেকটা কমতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে বলেছেন : নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত হতে বিরত রাখতে চায়। তবুও কি তোমরা তা থেকে বিরত হবে না? ( সূরা মায়েদা-৯১)

রাসূল সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা লানত দিয়েছেন মদকে, তার পানকারীকে, যে পান করায় তাকে, তার ক্রেতাকে, তার বিক্রেতাকে, তার তৈরিকারীকে এবং তার বহনকারীকে। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

উল্লিখিত বিষয়গুলো মানার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারকে কঠোরভাবে উদ্যোগ নিতে হবে এবং মাদক সেবনের ব্যাপারে প্রতিটি স্তরে কঠোরভাবে আইন কার্যকর করতে হবে। যারা এগুলো তৈরি করে এবং ক্রয়-বিক্রয় করে তাদের মিডিয়ার সামনে এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করলে মাদক সেবন সমাজ থেকে অনেকটা কমে যাবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া