Naya Diganta

ভাওয়ালে ফিরছে দেশী বৃক্ষ

ভাওয়াল রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটে সৃজিত ‘সুফল বাগান’ : নয়া দিগন্ত

‘সুফল’ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে গাজীপুরের ঐহিত্যবাহী ভাওয়াল বন। প্রকল্পটির আওতায় নিয়মিত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ফলে দেশীয় বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছগাছালি ইতোমধ্যে ১০-১৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। বন বিভাগ শাল সহায়ক বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ রোপণের ফলে ভাওয়াল বনের অতীত ঐতিহ্য ফিরে আসছে। সৃজিত বাগানগুলোতে সবুজের সমারোহে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বন বিভাগ। ভাওয়াল বনে পশুপাখির আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে বনায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুফল প্রকল্পের অধীন রেঞ্জটির ভবানীপুর, বারুইপাড়া ও রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটে ৮ হেক্টর বনে এনরিচমেন্ট বাগান সৃজিত হয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল মিশ্র প্রজাতি দিয়ে ভবানীপুর বিটে বাগান সৃজিত হয়েছে ১০ হেক্টর বনভূমিতে। এ ছাড়া কম্পোস্ট সারের মাধ্যমে পাঁচ হেক্টর বনে শাল কপিচ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়েছে।

গাজীপুর সদর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এসব বনে কয়েক বছর আগেও চোখে পড়ার মতো শুধু শাল গাছ ছিল। বাগানে দেশীয় প্রজাতির কিছু চারাগাছ প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে উঠলেও প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে বেশির ভাগ চারাগাছ মারা যেত। তখন শালবন দেখে ন্যাড়া মনে হতো। কখনো ২-৩ ফুট উচ্চতার বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছের দেখা মিললেও শুকনো মৌসুমে এসব চারাগাছ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হতো। তবে গত ৩ বছরে শালবনে বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। একসময়ের ন্যাড়াবনে এখন দেশীয় গাছ বেড়ে উঠছে। বনের ঘনত্বও বেড়েছে। এর ফলে বনে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বিভিন্ন ধরনের সরিসৃপের আনাগোনা বেড়েছে।

ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, গাজীপুরে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে বনায়ন যেমন চ্যালেঞ্জস্বরূপ তেমনি রক্ষণাবেক্ষণও কঠিন। বন ও বনের ইকোসিস্টেম রক্ষায় বন বিভাগ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে সুফল প্রকল্পের বনায়ন শতভাগ সফল করতে সব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বারুইপাড়া বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, বন বিভাগের নানামুখী কর্মসূচির ফলে বনসংলগ্ন স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুফলের বাগান রক্ষায় স্থানীয় অধিবাসীরাও এগিয়ে এসেছেন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা প্রায়ই বাগান পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে বন অধিদফতরের পাঁচ বছর মেয়াদি সুফল প্রকল্প আগামী বছর (২০২৩ সালের) জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।